পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী অত্যন্ত কাতর হইয়া যশস্বীর নিন্দা করিতে প্রবত্ত হয়েন। এই শ্রেণীর নিন্দকই অনেক, বিশেষ বঙ্গদেশে । দীনবন্ধ স্বয়ং নিৰ্ব্বিবরোধ, নিরহঙ্কার, এবং ক্ৰোধশান্য হইলেও এই সকল কারণে তাঁহার অনেকগলি নিন্দক হইয়া উঠিয়াছিল। প্রথমাবস্থায় কেহ তাঁহার নিন্দক ছিল না, কেন না, প্রথমাবস্থাতে তিনি তােদশ যশস্বী হয়েন নাই। যখন “নবীন তপস্বিনী” প্রচারের পর তাঁহার যশোর মাত্রা পণ্য হইতে লাগিল, তখন নিন্দকশ্রেণী মাথা তুলিতে লাগিল। দীনবন্ধীর গ্রন্থে যথার্থই অনেক দোষ আছে-কেহ কেহ কেবল সেই জন্যই নিন্দা করিতেন। তাহাতে কাহারও আপত্তি নাই; তবে তাঁহারা যে দোষের ভাগের সঙ্গে গণের ভাগ বিবেচনা করেন না, এই জন্যই তাহাদিগকে নিন্দক বলি। অনেকে দীনবন্ধর নিকট চাকরির উমেদারী করিয়া নিৰ্ম্মফল হইয়া সেই রাগে দীনবন্ধর সমালোচক-শ্রেণী মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিল। এ শ্রেণীস্থ নিন্দকদিগের নিন্দায় দীনবন্ধ হাসিতেন, --নিম্পন্ন শ্রেণীর সংবাদপত্রে তাঁহার সমচিত ঘণা ছিল, ইহা বলা বাহদুল্য। কিন্তু, “কলিকাতা রিবিউ'র ন্যায় পত্রে কোন নিন্দা দেখিলে তিনি ক্ষব্ধ এবং বিরক্ত হইতেন। কলিকাতা বিবিউতে সরধানী কাব্যের যে সমালোচনা প্রকাশিত হইষাছিল, তাহা অন্যায় বোধ হয় না। দ নিবন্ধ দে। ইহাতে রাগ করিয়াছিলেন, ইহাই অন্যায়। “ভোঁতারাম ভাট” দীনবন্ধীর চরিত্রে ক্ষ দ্ৰ কলঙ্ক! ইহ। স্পষ্ট করিয়া বলা যাইতে পাবে যে, “দীনবন্ধ, কখন একটিও অসৎ কায্য করেন নাই। তাহার স্বভাব তােদশ তেজস্বী ছিল না বটে, বন্ধর অন্যুরোধ বা সংসগাদোষে নিন্দনীয় কায্যের কিঞ্চিৎ সংসপেশী তিনি সকল সময়ে এড়াইতে পারিতেন না; কিন্তু যাহা অসৎ, যাহাতে পরের অনিন্ট আছে, যাহা পাপের কায্য, এমত কায্য দীনবন্ধ, কখনও করেন নাই। তিনি অনেক লোকের উপকার করিয়াছিলেন, তাঁহার অনগ্রহে বিস্তর লোকের অন্নের সংস্থান হইয়ছে। একটি দলভ সখি দীনবন্ধীর কপালে ঘাঁটিয়াছিল। তিনি সাধনী স্নেহশালিনী পতিপরায়ণা পত্নীর স্বামী ছিলেন। দীনবন্ধব অল্পবয়সে বিবাহ হয় নাই। হগলীর কিছ উত্তর বংশবাটী গ্রামে তাহার বিবাহ হয় । দীনবন্ধ চিরদিন গহস্যুখে সখী ছিলেন। দম্পতি-কলহ, কখন না বখন সকল ঘরেই হইয়া থাকে, কিন্তু কস্মিন কালে মহাত্ত নিমিত্ত ইহাদেব কথান্তর হয নাই। একবার কলহ করিবার নিমিত্ত দীনবন্ধ দঢ়প্ৰতিজ্ঞ হইয়াছিলেন, কিন্তু প্ৰতিজ্ঞা ব্যথা হইয়াছিল। বিবাদ করিতে পারেন নাই। কলহ করিতে গিয়া তিনিই প্রথমে হাসিয়া ফেলেন, কি ৩হার সহধৰ্ম্মিমণী রাগ দেখিয়া উপহাস দ্বারা বেদখল করেন, তাহা এক্ষণে আমার স্মরণ নাই। দীনবন্ধ আটটি সন্তান রাখিযা গিযাছেন। দীনবন্ধ বন্ধবেগের প্রতি বিশেষ স্নেহবান ছিলেন। আমি ইহা বলিতে পারি যে, তাঁহার

প্রীতি সংসারের একটি প্রধান সখি। যাঁহারা তাহা হারাইয়াছেন, তাঁহাদের দঃখ বর্ণনীয় নহে ।

कबङ्ग যে বৎসর ঈশ্বরচন্দ্র গপ্তের মহত্যু হয়, সেই বৎসর মাইকেল মধ্যসািদন দত্ত প্ৰণীত “তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ রহস্যসন্দভে [ ‘বিবিধাথ-সংগ্রহে’ ? | প্রকাশিত হইতে আরম্ভ হয়। ইহাই মধ্যসদনের প্রথম বাঙ্গালা কাব্য। তার পর-বৎসর দীনবন্ধর প্রথম গ্রন্থ “নীল-দপণ” প্রকাশিত হয়। সেই ১৮৫৯ ॥৬o সােল বাঙ্গালা সাহিত্যে চিরস্মরণীয়-উহা নািতন পর্যাতনের সন্ধিস্থল। পরাণ দলের শেষ কবি ঈশ্বরচন্দ্ৰ অস্তমিত, নািতনের প্রথম কবি মধ্যসাদনের নবোদয়। ঈশ্বরচন্দ্র খাঁটি বাঙ্গালী, মধ্যসািদন ডাহা ইংরেজ। দীনবন্ধ, ইহাদের সন্ধিস্থল। বলিতে পারা যায় যে, ১৮৫৯ ।। ৬০ সালের মত দীনবন্ধও বাঙ্গালা কাব্যের নাতন পর্যাতনের সন্ধিস্থল। দীনবন্ধ ঈশ্বর গপ্তের একজন কাব্যশিষ্য। ঈশ্বরচন্দ্রের কাব্যশিষ্যদিগের মধ্যে দীনবন্ধ গােরর যতটা কবিস্বভাবের উত্তরাধিকারী হইয়াছিলেন, এত আর কেহ নহে। দীনবন্ধর হাস্যরসের যে অধিকার, তাহা গােরর অনকারী। বাঙ্গালীর প্রাতাহিক জীবনের সঙ্গে দীনবন্ধর げ○O