পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিম রচনাবলী যখন তাঁহার সহিত প্রণয় সম্ভার হয়, তখন আমারও পঠদ্দশা, তিনি যদিও আমার অপেক্ষা কিঞ্চিৎ অধিক বয়স্ক ছিলেন, তথাপি উভয়েই অপ্রাপ্তবয়স্ক, কেবল বিদ্যাভ্যাসেই আসক্ত ছিলাম। আমি সে সময় সব্বদা তাঁহার সংসগে থাকি,তাম, তাহাতে প্রায় প্রতিদিনই এক একটি অলৌকিক কান্ড প্রত্যক্ষ হইত। অর্থাৎ প্রত্যহই নানা বিষয়ে অবলীলাক্রমে অপব্ব কবিতা রচনা করিয়া সহচর সহৃৎসমাহের সম্পণে সন্তোষ বিধান করিতেন। কোন ব্যক্তি কোন কঠিন সমস্যা পরেণ করিতে দিলে, তৎক্ষণাৎ তাহা যােদশ সাধ, শব্দে সম্পরণ করিতেন, তদ্রপ পাবেবৰ্ণ কদাপি প্রত্যক্ষ হয় নাই।” উক্ত বাল্যাসখা শেষ লিখিয়া গিয়াছেন, “ঈশ্বর বােব যৎকালীন ১৭ ৷৷ ১৮ বৰ্ষ বয়স্ক, তৎকালীন দিবা রাত্রি একত্র সহবাস থাকাতে আমার নিকট মািন্ধবোধ ব্যাকরণ অধ্যয়ন করিতে আরম্ভ করেন। অন্যমান হয়, এক মাস কি দেড় মাস মধ্যেই মিশ্র পয্যন্ত এককালীন মখস্থ ও অর্থের সহিত কন্ঠস্থ করিয়াছিলেন। শ্রীতিধরদিগের প্রশংসা অনেক শ্রতিগোচর আছে, ঈশ্বর বাবার অদ্ভুত শ্রীতিধরতা সৰ্ব্বদাই আমার প্রত্যক্ষ হইয়াছে। বাঙ্গালা কবিতা তাঁহার সর্বপ্রণীতই হউক বা অন্যকৃতই হউক, একবার রচনা এবং সমক্ষে পাঠ মাত্রই হৃদয়ঙ্গম হইয়া, একেবারে চিত্রপটে চিত্রিতের ন্যায় চিত্রস্থ হইয়া চিরদিন সমান সমরণ থাকিত ।” কলিকাতার প্রসিদ্ধ ঠাকুর-বংশের সঙ্গে ঈশ্বর গপ্তের মাতামহ-বংশের পরিচয় ছিল। সেই সত্রে ঈশ্বরচন্দ্ৰ কলিকাতায় আসিয়াই ঠাকুর বাটীতে পরিচিত হয়েন। পাথরিয়াঘাটার গোপীমোহন ঠাকুরের তৃতীয় পত্র নন্দকুমার ঠাকুরের জ্যোিঠ পত্ৰ যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুরের সহিত ঈশ্বরচন্দ্রের বিশেষ সখ্য জন্মে। ঈশ্বরচন্দ্র তাঁহার নিকট নিয়ত অবস্থানপৰিবাক কবিতা রচনা করিয়া সখ্য বদ্ধি করিতেন। যোগেন্দ্রমোহন, ঈশ্বরচন্দ্রের সমবয়স্ক ছিলেন। লেখা পড়া শিক্ষা এবং ভাষানশীলনে তাহার অন্যরাগ ও যত্ন ছিল। ঈশ্বরচন্দ্রের সহবাসে তাঁহার রচনাশক্তিও জন্মিয়াছিল। যোগেন্দ্রমোহনই ঈশ্বরচন্দ্রের ভাবী সৌভাগ্যের এবং যশক নীত্তির সোপানস্বরূপ। ঠাকুর বাটীতে মহেশচন্দ্ৰ নামে ঈশ্বরচন্দ্রের এক আত্মীয়ের গতিবিধি ছিল। মহেশচন্দ্রও কবিতা রচনা করিতে পারিতেন। মহেশের কিঞ্চিৎ বাতিকের ছিট থাকায় লোকে তাঁহাকে * মহেশ পাগলা” বলিত। এই মহেশের সহিত ঠাকুর বাটীতে ঈশ্বরচন্দ্রের প্রায়ই মাখে মাখে কবিতা-যাদ্ধ হইত। ঈশ্বরচন্দ্রের যৎকালে ১৫ বর্ষ বয়স, তৎকালে গঞ্জেীপাড়ার গৌরহরি মল্লিকের কন্যা দাগামণি দেবীর সহিত তাহার বিবাহ হয়। দরগামণির কপালে সখি হইল না। ঈশ্বরচন্দ্ৰ দেখিলেন, আবার মেকি! দগামণি দেখিতে কুৎসিতা! হাবা! বোবার মত ! এ ত সত্ৰী নহে, প্রতিভাশালী কবির অদ্ধাঙ্গ নহে-কবির সহধর্মিণী নহে। ঈশ্বরচন্দ্র বিবাহের পর হইতে আর তাহার সঙ্গে কথা কহিলেন না। ইহার ভিতর একটি Romance ও আছে। শানা যায়, ঈশ্বরচন্দ্র, কাঁচরাপাড়ার একজন ধন্যবানের একটি পরমা সন্দেরী কন্যাকে বিবাহ করিতে অভিলাষী হয়েন। কিন্তু তাঁহার পিতা সে বিষয়ে মনোযোগী না হইয়া, গািপ্তীপাড়ার উক্ত গৌরহরি মল্লিকের উক্ত কন্যার সহিত বিবাহ দেন। গৌরহরি, বৈদ্যুদিগের মধ্যে একজন প্রধান কুলীন ছিলেন, সেই কুল-গৌরবের কারণ এবং অর্থ দান করিতে হইল না বলিয়া, সেই পাত্রীর সহিতই ঈশ্বরচন্দ্রের পিতা পত্রের বিবাহ দেন। ঈশ্বরচন্দ্র পিতার আজ্ঞায় নিতান্ত অনিচ্ছায় বিবাহ করেন, কিন্তু বিবাহের পরই তিনি বলিয়াছিলেন যে, আমি আর সংসারধৰ্ম্মম করিব না। কিছ. কাল পাবে ঈশ্বরচন্দ্রেব আত্মীয় মিত্ৰগণ তাঁহাকে আর একটি বিবাহ করিতে অনরোধ করিলে, তিনি বলেন যে, দাই সতীনের ঝগড়ার মধ্যে পড়িয়া মারা যাওয়া অপেক্ষা বিবাহ না করাই ভাল । ঈশ্বরচন্দ্ৰ গপ্তের জীবনী হইতে আমরা এই আর একটি মহতী নীতি শিক্ষা করি। ভরসা। করি আধনিক বর কন্যাদিগের ধনলোলািপ পিতৃমাতৃগণ এ কথাটা হৃদয়ঙ্গম করিবেন। ঈশ্বর গঞ্জ, সন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ না করন, চিরকাল তাঁহাকে গহে রাখিয়া ভরণ-পোষণ করিয়া, মাতৃত্যুকালে তাঁহার ভরণ-পোষণ জন্য কিছ. কাগজ রাখিয়া গিয়াছিলেন। দরগামণিও সচ্চরিত্রা ছিলেন। কয়েক বৎসর হইল, দােগামণি দেহ ত্যাগ করিয়াছেন। এখন আমরা দাগামণির জন্য বেশী দঃখ করিব, না ঈশ্বরচন্দ্রের জন্য বেশী দঃখ করিব ? দগামণির দঃখ ছিল কি না তাহা জানি না। ষে আগনে ভিতর হইতে শরীর পড়ে, সে bዖ8O