পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাদি স্থা সমাজ কথাবার্তা প্রায় সাহিত্য বিষয়েই হইয়াছে। এত দিন কথাটা জিজ্ঞাসা করিলে আমি দেখাইয়া দিতে পারিতাম, কোথায় সে কৃফোক্তি। রবীন্দ্ৰ বাবর অনসেন্ধানের ইচ্ছা থাকিলে, অবশ্য জিজ্ঞাসা করিতেন ঐ কূফোক্তির মৰ্ম পাঠককে এখন সংক্ষেপে বঝাই। কর্গের ঘদ্ধে পরাজিত হইয়া যধিষ্ঠির শিবিরে পলায়ন করিয়া শইষা আছেন। তাঁহার জন্য চিন্তিত হইয়া কৃষ্ণাঙ্গ নে সেখানে উপস্থিত হইলেন। যখুধিষ্ঠির কণের পরাক্রমে কাতর ছিলেন. ভাবিতেছিলেন, অজু নৈ এতক্ষণ কৰ্ণ কে বধ করিয়া আসিতেছে। অর্জ মন আসিলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কৰ্ণ বধ হইয়াছে কি না। অজ্ঞ নে বলিলেন, না, হয় নাই। তখন যধিষ্ঠির রাগাদ্ধ হইয়া, অঞ্জনের অনেক নিন্দা করিলেন, এবং অজর্জ কুনের গাড়ীবের অনেক নিন্দা করিলেন। অর্জনের একটি প্রতিজ্ঞা ছিল-যে গাণ্ডীবের নিন্দা করিবে, তাহাকে তিনি বধ করিবেন। কাজেই এক্ষণে “সত্য” রক্ষার -মনে করিলেন, তার পর প্রাযশ্চিত্তস্বরপ, আত্মহত্যা করিবেন। এই সকল জানিয়া, শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে বঝাইলেন যে, এবপ সত্য রক্ষণীয নহে। এ সত্যলাম্বনই ধর্ম এখানে সত্যচুতিই ধর্ম। এখানে মিথ্যাই সত্য হয়। এটা যে উপন্যাস মান, তাহা আদি ব্রাহ্ম সমাজের শিক্ষিত লেখকদিগকে বঝাইতে হইবে না রবীন্দ্র বাবব বহৃষ্ঠার ভাবে বঝায় যে যেখানে কৃষ্ণ নাম আছে, সেখানে আর আমি মনে করি। না যে, এখানে উপন্যাস আছে সকলই প্রতিবাদের অতীত সত্য বলিয়া ধবে জ্ঞান করি। আমি যে এমন মনে করিতে পারি যে, এ কথাগলি সত্য সত্য কৃষ্ণ স্বয়ং যাধিষ্ঠিরের পার্থে দাঁড়াইয়া বলেন নাই, ইহা কৃষ্ণ-প্রচারিত ধর্মের কবিকৃত উপন্যাসক্ত ব্যাখ্যা মাত্র, ইহা বোধ হয়, তাহারা ব্যুঝিবেন না। তাহাতে এখন ক্ষতি নাই। আমার এখন এই জিজ্ঞাস্য যে, তিনি আমার কথার অর্থ ব্যঝিতে কি গোলযোগ করিযাছেন, তাহা এখন বঝিযাছেন কি ? না হয়, একটু বঝাই রবীন্দ্র বাব, “সত্য" এবং "মিথ্যা" এই দলইটি শব্দ ইংরেজি অর্থে ব্যবহার করিয়াছেন। সেই আথেই আমার ব্যবহৃত “সত্য” “মিথ্যাবঝিযাছেন। তাঁহাব কাছে সত্য Truth, মিথ্যা Falsehood। আমি সত্য মিথ্যা শব্দ ব্যবহার কালে ইংরেজির অন্যবাদ করি না। এই অনন্যবাদপরায়ণতাই আমার বিবেচনায়, আমাদের মৌলিকতাস্বাধীন চিন্তা ও উন্নতির এক বিঘ। হইয়া উঠিয়াছে। “সত্য" “মিথ্যা" প্রাচীনকাল হইতে যে অর্থে ভারতবর্ষে ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে, আমি সেই অর্থে ব্যবহার কবিযাছি। সে দেশী অর্থে, সত্য Truth আর তাহা ছাড়া আরও কিছ। প্রতিজ্ঞা-রক্ষা, আপনাব কথা রক্ষাইহাও সত্য। এইরপ একটি প্রাচীন ইংরেজি কথা আছে '1 yoth ইহাই rth শান্দব প্রাচীন র প। এখন, 'wth শব্দ Troth হইতে ভিল্লার্থ হইয়া পড়িয়াছে। ঐ শব্দটিও এখন আর বড় ব্যবহৃত হয় না Honour. Faith, এই সকল শব্দ তাহাব স্থান গ্রহণ করিয়াছে। এ সামগ্ৰী চোর ও অন্যান্য দৰক্ৰিয়াকারীদিগের মধ্যেও আছে। তাহারা ইহার সাহায্যে পথিবীর পাপ ৰন্ধি করিয়া থাকে যাহা Trua ৰবীন্দ্ৰ বাবর | uth তাহাব দ্বারা পাপেব সাহায্য হইতে পারে না। এক্ষণে রবীন্দ্র বাবর সম্প্রদায়কে জিজ্ঞাসা করি, তাঁহাদেব মতে আপনার পাপপ্রতিভা (সত্য বক্ষার্থ নিরপরাধী জ্যেষ্ঠ ভ্রাতাকে বধ করাই কি অজ্ঞ নেব উচিত ছিল ? যদি কেহ প্রাতে উঠিয়া সত্য করে যে, আজ দিবাবসানের মধ্যে পথিবীতে যত প্রকার পাপ আছে-হত্যাদসJতা পরদার, পরপীড়ন: সকলই সম্পন্ন করিব°তাঁহাদের মতে কি ইহার সেই সত্য পালনই উচিত? যদি তাহাদের সে মত হয়; তবে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি, তাঁহাদের সত্যবাদ তাঁহাদেরই থাক. এদেশে যেন প্রচারিত না হয়। আর তাঁহাদের মত যদি সেরপ না হয়, তবে অবশ্য তাহারা স্বীকার করিবেন যে, এখানে সত্যুতিই ধর্ম। এখানে মিথ্যাই সত্য এ অর্থে “সত্য“মিথ্যা” শব্দ ব্যবহার করা আমার উচিত হইয়াছে কি না. ভরসা করি, এ বিচাব উঠিবে না। সংস্কৃত শব্দের চিরপ্রচলিত অর্থ পরিত্যাগ করিয়া, ইংরেজি কথার অর্থ তাহাতে লাগাইতে হইবে, ইহা আমি স্বীকার করি না। হিন্দরে বর্ণনার স্থানে যে গ্ৰীষ্টায়ানের বর্ণ না করিতে হইবে, তাহাও স্বীকার করি না। রবীন্দ্ৰ বাব “সত্য” শব্দের ব্যাখ্যায় যেমন গোলযোগ করিয়াছেন, লোকহিত লইয়াও তেমনি বরং আরও বেশী গোলযোগ করিয়াছেন। কিন্তু আর কচকচি বাঙ্গাইতে আমার ইচ্ছা নাই।