পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী সে প্রতিমা জগৎসিংহের হৃদয়মধ্যে বদ্ধমতল হইয়াছিল, তঁাহাকে উন্মলিত করিতে মলাধার হৃদয়ও বিদীণ হইবে। কেমন করিয়া চিরকালের জন্য সে মোহিনী মাত্তি বিস্মত হইবেন ? সে কি হয় ? যতদিন মেধা থাকিবে, যতদিন অস্থি-মজ্ঞজা-শোণিত-নিশ্চিমত দেহ থাকিবে, ততদিন সে হৃদয়েশবরী হইয়া বিরাজ করিবে ! এই সকল উৎকট চিন্তায় রাজপত্রের মনের স্থিরতা দরে থাকুক, বদ্ধিরও অপভ্রংশ হইতে লাগিল, সমতির বিশওখলা হইতে লাগিল; নিশা শেষেও দাই করে মস্তক ধারণ করিয়া বসিয়া আছেন, মস্তিস্ক ঘরিতেছে, কিছই আলোচনা করিবার আর শক্তি নাই। একভাবে বহনক্ষণ বসিয়া জগৎসিংহের অঙগবেদনা করিতে লাগিল; মানসিক যন্ত্রণার প্রগাঢ়তায় শরীরে জবারের ন্যায় সন্তাপ জন্মিল, জগৎ সিংহ বাতায়নসন্নিধানে গিয়া দাঁড়াইলেন । শীতল নৈদাঘা বায় আসিয়া জগৎ সিংহের ললাট সপশ করিল। নিশা অন্ধকার ; আকাশ অনিবিড় মেঘাবািত; নক্ষত্রাবলী দেখা যাইতেছে না, কদাচিৎ সচল মেঘখন্ডের আবরণাভ্যন্তরে কোন ক্ষীণ তারা দেখা যাইতেছে ; দীরস্থ বাক্ষীশ্ৰী অন্ধকারে পরস্পর মিশ্রিত হইয়া তমোময় প্রাচীরবৎ আকাশতলে রহিয়াছে, নিকটস্থ বক্ষে বক্ষে খাদ্যোতমালা হীরকচণবৎ জীবলিতেছে ; সম্মখস্থ এক তড়াগে আকাশ বাক্ষাদির প্রতিবিম্ব অন্ধকারে অসপস্টররূপে স্থিত রহিয়াছে। মেঘসপাল্ট শীতল নৈশ বায়সংলগেন জগৎ সিংহের কিঞ্চিৎ দৈহিক সন্তাপ দরি হইল। তিনি বাতায়নে হসন্তরক্ষাপকেবািক তদনুপরি মস্তক ন্যস্ত করিয়া দাঁড়াইলেন। উন্নিদ্রায় বহনক্ষণাবধি উৎকট মানসিক যন্ত্রণা সহনে অবসন্ন হইয়াছিলেন ; এক্ষণে সিনগধ বায়সােপশোঁ কিঞ্চিৎ চিন্তাবিরত হইলেন, একটা অন্যমনস্ক হইলেন। এতক্ষণ যে ছরিকা সঞ্চালনে হৃদয় বিদ্ধ হইতেছিল, এক্ষণে তাহা দরে হইয়া অপেক্ষাকৃত তীক্ষণুতাশন্য নৈরাশ্য মনোমধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিল। আশা ত্যাগ করাই অধিক ক্লেশ ; একবার মনোমধ্যে নৈরাশ্য সিথরতর হইলে আর তত ক্লেশকরা হয় না। অস্ত্রাঘােতই সমধিক ক্লেশকর; তাহার পর যে ক্ষত হয়, তাহার যন্ত্রণা সন্থায়ী বটে, কিন্তু তত উৎকট নহে। জগৎ সিংহ নিরাশার মন্দােতর যন্ত্রণা ভোগ করিতে লাগিলেন। অন্ধকার নক্ষত্ৰহীন গগন প্রতি চাহিয়া, এক্ষণে নিজ হৃদয়াকাশও যে তদ্রপ অন্ধকার নক্ষত্রহীন হইল, সজল চক্ষতে তাহাই ভাবিতে লাগিলেন। ভূতপব্ব সকল মন্দভাবে সমরণ-পথে আসিতে লাগিল; বাল্যকাল, কৈশোর-প্রমোদ, সকল মনে পড়িতে লাগিল; জগৎ সিংহের চিত্ত তাহাতে মগন হইল ; ক্ৰমে অধিক অন্যমনস্ক হইতে লাগিলেন, ক্ৰমে অধিক শরীর শীতল হইতে লাগিল; ক্লান্তিবশে চেতনাপহরণ হইতে লাগিল; বাতায়ন অবলম্বন করিয়া জগৎসিংহের তন্দ্ৰা আসিল। নিদ্রিতাবস্থায় রাজকুমার স্বপন দেখিলেন; গরতের যন্ত্রণাজনক স্বপন দেখিতে লাগিলেন; নিদ্রিত বদনে ভ্ৰকুটি হইতে লাগিল; মাখে। উৎকট ক্লেশব্যঞ্জক ভঙ্গী হইতে লাগিল; অধর কম্পিত, বিচলিত হইতে লাগিল; ললাট ঘৰ্ম্মমাক্ত হইতে লাগিল; করে দঢ়মটি বদ্ধ হইল। চমকের সহিত নিদ্রাভওগ হইল ; আতি ব্যাস্তে কুমার কক্ষমধ্যে পদচারণ করিতে লাগিলেন ; কতক্ষণ এইরপে যন্ত্রণা ভোগ করিতে লাগিলেন, তাহা নিশ্চিত বলা সকঠিন; যখন প্ৰাতঃসােয্যকরে হমমর্ত্য-প্রাকার দীপিত হইতেছিল, তখন জগৎ সিংহ হস্ম্যতলে বিনা শয্যায়, বিনা উপাধানে লক্ষবমান হইয়া নিদ্ৰা যাইতেছিলেন! ওসমান আসিয়া তাঁহাকে উঠাইলেন। রাজপত্র নিদ্রোথিত হইলোঁ, ওসমান তাঁহাকে অভিবাদন করিয়া তাঁহার হস্তে একখানি পত্র দিলেন। রাজপত্র পত্র হস্তে লইয়া নিরািত্তরে ওসমানের মািখপানে চাহিয়া রহিলেন। ওসমান বুঝিলেন, রাজুপত্রে আত্মবিহবল হইয়াছেন। অতএব এক্ষণে প্রয়োজনীয় কথোপকথন হইতে পরিবে না, বঝিতে পারিয়া কহিলেন, “রাজপত্রে! আপনার ভূশিষ্যার কারণ জিজ্ঞাসা করিতে আমার কৌত হল নাই। এই পত্র-প্ৰেরিকার নিকট আমি প্রতিশ্রত ছিলাম যে, এই পত্র আপনাকে দিব; যে কারণে এতদিন এই পত্র আপনাকে দিই নাই, সে কারণ দরি হইয়াছে। আপনি সকল জ্ঞাত হইয়াছেন। অতএব পত্র আপনার নিকট রাখিযা চলিলাম, আপনি অবসরমতে পাঠ করিবেন; অপরাহে আমি পনেকবার আসিব। প্রত্যুত্তর দিতে চাহেন, তাহাও লইয়া লেখিকার নিকট প্রেরণ করিতে পারিব।” এই বলিয়া ওসমান রাজপত্রের নিকট পত্র রাখিয়া প্ৰস্থান করিলেন। রাজপত্র একাকী বসিয়া সম্পপণ্য সংজ্ঞাপ্ৰাপত হইলে, বিমলার পত্র পাঠ করিতে লাগিলেন। আদ্যোপােন্ত পাঠ করিয়া অগিন প্রস্তুত করিয়া তাহাতে নিক্ষেপ করিলেন। যতক্ষণ পত্ৰখানি ܠ ܠ ܠ