পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দগেশনন্দিনী প্রকোঠ-প্রকারে আর এক ব্যক্তির ছায়া পড়িল; কেহ তাঁহা দেখিতে পাইলেন না। তৃতীয় ব্যক্তি আসিয়া উভয়ের নিকটে দাঁড়াইল, তথাপি দেখিতে পাইলেন না। ক্ষণেক সতম্ভের ন্যায় সিথর দাঁড়াইয়া, পরে ক্ৰোধকম্পিত সত্বরে আগন্তুক কহিল, “নবাবপত্রি! এ উত্তম।” উভয়ে মাখ তুলিয়া দেখিলেন—ওসমান। ওসমান তাঁহার অনাচর অঙগরীয়বাহকের নিকট সবিশেষ অবগত হইয়া আয়েষার সন্ধানে আসিয়াছিলেন। রাজপত্র, ওসমানকে সে সম্প্ৰথলে দেখিয়া আয়েষার জন্য শঙকান্বিত হইলেন, পাছে আয়েষ্যা, ওসমান বা কতল খাঁর নিকট তিরস্কৃত বা অপমানিত হন। ওসমান যে ক্ৰোধপ্রকাশক স্বরে ব্যঙ্গোক্তি করিলেন, তাহাতে সেইরােপ সম্ভাবনা বোধ হইল। ব্যঙ্গোন্তি শনিবামাত্র আয়েষা ওসমানের কথার অভিপ্রায় নিঃশেষ বঝিতে পারিলেন। মহত্তমাত্র তাঁহার মািখ রক্তবর্ণ হইল। আর কোন অধৈয্যের চিহ্ন প্রকাশ পাইল না। স্থির সবরে উত্তর করিলেন, “কি উত্তম, ওসমান ?” ওসমান পৰ্ব্বব্যাবৎ ভঙ্গীতে কহিলেন, “নিশীথে একাকিনী বন্দিসহবাস নবাবপত্রীর পক্ষে উত্তম । বন্দীর জন্য নিশীথে কারাগারে অনিয়ম প্রবেশও উত্তম।” আয়েষার, পবিত্র চিত্তে এ তিরস্কার সহনাতীত হইল। ওসমানের মািখপানে চাহিয়া উত্তর করিলেন। সেরােপ গব্বিত সবর ওসমান কখন আয়েষার কণ্ঠে শানেন নাই। আয়েষা কহিলেন, “এ নিশীথে একাকিনী কারাগার মধ্যে আসিয়া এই বন্দীর সহিত আলাপ করা, আমার ইচ্ছা। আমার কম উত্তম কি অধম, সে কথায় তোমার প্রয়োজন নাই।” ওসমান বিস্মিত হইলেন, বিসিমতের অধিক ক্লদ্ধ হইলেন; কহিলেন, “প্রয়োজন আছে কি না, কাল প্রাতে নবাবের মাখে শনিবে।” আয়েষা পৰ্ব্বব্যাবৎ কহিলেন, “যখন পিতা আমাকে জিজ্ঞাসা করিবেন, আমি তখন তাহার উত্তর দিব। তোমার চিন্তা নাই।” ওসমান পৰ্ব্বব্যাবৎ ব্যঙ্গ করিয়া কহিলেন, “আর যদি আমি জিজ্ঞাসা করি ?” আয়েষা দাঁড়াইয়া উঠিলেন। কিয়ৎক্ষণ পৰ্ব্বব্যাবৎ সিথরদটিতে ওসমানের প্রতি নিরীক্ষণ করিলেন; তাঁহার বিশাল লোচন আরও যেন বন্ধিতায়তন হইল। মািখপদ্ম যেন অধিকতর প্রস্ফটিত হইয়া উঠিল ; ভ্রমরকৃষ্ণ অলকাবলীর সহিত শিরোদেশ ঈষৎ এক দিকে হেলিল; হৃদয় তরঙগান্দোলিত নিবিড় শৈবালজালবৎ উৎকম্পিত হইতে লাগিল; অতি পরিস্কার সবরে আয়েষা কহিলেন, “ওসমান, যদি তুমি জিজ্ঞাসা কর, তবে আমার উত্তর এই যে, এই বন্দী আমার প্ৰাণেশবের !” যদি তন্ম হত্তে কক্ষমধ্যে বজপতন হইত, তবে রাজপতি কি পাঠান অধিকতর চমকিত হইতে পারিতেন না। রাজপত্রের মনে অন্ধকার-মধ্যে যেন কেহ প্ৰদীপ জবালিয়া দিল। আয়েষার নীরব রোদন এখন তিনি বঝিতে পারিলেন। ওসমান কতক কতক ঘণাক্ষরে পকেবই এরপে সন্দেহ করিয়াছিলেন, এবং সেই জন্যই আয়েষার প্রতি এরপ তিরস্কার করিতেছিলেন, কিন্তু আয়েষ্যা তাঁহার সম্মখেই মন্তকণ্ঠে কথা ব্যক্ত করিবেন, ইহা তাঁহার সাবপেইেনরও অগোচর। ওসমান নিরািত্তর হইয়া রহিলেন। আয়েষা পনেরপি কহিতে লাগিলেন, “শন ওসমান, আবার বলি, এই বন্দী আমার প্ৰাণেশ্ববর,—যাবতজীবন অন্য কেহ আমার হৃদয়ে স্থান পাইবে না। কাল যদি বধ্যভূমি ইহার শোণিতে আদ্র হয়—” বলিতে বলিতে আয়েষা শিহরিয়া উঠিলেন ; “তথাপি দেখিবে, হৃদয়মন্দিরে ইহার মাত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়া অন্তকাল পৰ্যন্ত আরাধনা করিব। এই মহত্তের পর যদি আর চিরন্তন ইহার সঙ্গে দেখা না হয়, কাল যদি ইনি মন্ত হইয়া শত মহিলার মধ্যবত্তীর্ণ হন, আয়েষার নামে ধিক্কার করেন, তথাপি আমি ইহার প্ৰেমাকাঙিক্ষণী দাসী রহিব। আরও শন, মনে কর এতক্ষণ একাকিনী কি কথা বলিতেছিলাম ? বলিতেছিলাম, আমি দৌবারিকগণকে বাক্যে পারি, ধনে পারি বশীভুত করিয়া দিব; পিতার অশাবশালা হইতে অশব দিব; বন্দী পিতৃশিবিরে এখনই চলিয়া যাউন। বন্দী নিজে পলায়নে অস্বীকৃত হইলেন। নচেৎ তুমি এতক্ষণ ইহার নখাগ্রও দেখিতে পাইতে না।” আয়েষা আবার অশ্রািজল মছিলেন। কিয়ৎক্ষণ নীরব থাকিয়া অন্য প্রকার সবরে কহিতে লাগিলেন, “ওসমান, এ সকল কথা বলিয়া তোমাকে ক্লেশ দিতেছি, অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি SS )