পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণডলা বেগমের সহচারিণী বলিয়া অনায়াসে উড়িষ্যায় আসিতে পারিলাম, সেলিমের বেগম হইলে কি উড়িষ্যায় আসিতে পারিতাম ? মে। যে দিল্লীশ্ববরের প্রধানা মহিষী হইবে, তাহার উড়িষ্যায় আসিবার প্রয়োজন ? ম। সেলিমের প্রধানা মহিষী হইব, এমন সপদগ্ধা৷ কখনও করি না। এ হিন্দ স্থান দেশে কেবল মেহের-উন্নিসাই দিল্লীশাবরের প্রাণেশবরী হইবার উপযক্তি। মেহের-উন্নিসা মািখ নত করিলেন। ক্ষণেক নিরািত্তর থাকিয়া কহিলেন, “ভীগিনি । আমি এমত মনে করি না যে, তুমি আমাকে পীড়া দিবার জন্য এ কথা বলিলে, কি আমার মন জানিবার জন্য বলিলে। কিন্তু তোমার নিকট আমার এই ভিক্ষা, আমি যে শের আফগানের বনিতা, আমি যে কায়মনোবাক্যে শের আফগানের দাসী, তাহা তুমি বিস্মত হইয়া কথা কহিও না।” লঙজাহীনা মতি এ তিরস্কারে অপ্রতিভ হইলেন না; বরং আরও সংযোগ পাইলেন। কহিলেন, “তুমি যে পতিগত প্ৰাণা, তাহা আমি বিলক্ষণ জানি। সেই জন্যই ছলক্ৰমে এ কথা তোমার সম্মখে পাড়িতে সাহস করিয়াছি। সেলিম যে এ পয্যন্ত তোমার সৌন্দয্যের মোহ ভুলিতে পারেন নাই, এই কথা বলা আমার উদ্দেশ্য। সাবধান থাকিও।” মে। এখন বঝিলাম। কিন্তু কিসের আশঙ্কা ? মতি কিঞিওঁ ইতস্ততঃ করিয়া কহিলেন, “বৈধব্যের আশঙকা ।” এই কথা বলিয়া মতি মেহের-উন্নিসার মািখ পানে তীক্ষাদাভিট করিয়া কহিলেন, কিন্তু ভয় বা আহাদের কোন চিহ্ন তথায় দেখিতে পাইলেন না। মেহের-উন্নিসা সদপে কহিলেন, “বৈধব্যের আশঙকা । শের আফগান আত্মরক্ষায় অক্ষম নহে। বিশেষ আকবর বাদশাহের রাজামধ্যে তাঁহার পত্রও বিনা দোষে পরপ্রাণ নস্ট করিয়া নিস্তার পাইবেন না। ’ ম। সত্য কথা, কিন্তু সম্প্রতিকার আগ্রার সংবাদ এই যে, আকবর শাহ গত হইয়াছেন । সেলিম সিংহাসনারাঢ় হইয়াছেন। দিল্লীশ্ববরকে কে দমন করিবে ? মেহের-উন্নিসা আর কিছ, শনিলেন না। তাঁহার সববাঙ্গ শিহরিয়া কাঁপিতে লাগিল। আবার মািখ নত করিলেন, লোচনযগলে আশ্রধারা বহিতে লাগিল। মতি জিজ্ঞাসা করিলেন, * কদ কেন পি * মেহের-উন্নিসা নিশবাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, “সেলিম ভারতবর্ষের সিংহাসনে, আমি কোথায় ? ** মতির মনস্কাম সিদ্ধ হইল। তিনি কহিলেন, “তুমি আজিও যবেরাজকে একেবারে বিস্মত হইতে পার নাই ?” মেহের-উন্নিসা গদ গদ্যস্বরে কহিলেন, “কাহাকে বিস্মত হইব ? আত্মজীবন বিস্মত হইব, তথাপি যােবরাজকে বিস্মত হইতে পারিব না। কিন্তু শান, ভগিনি ! অকস্মাৎ মনের কবাট খলিল ; তুমি এ কথা শানিলে; কিন্তু আমার শপথ, এ কথা যেন কণান্তরে না যায়।” মতি কহিল, “ভাল, তাহাই হইবে। কিন্তু যখন সেলিম শানিবেন যে, আমি বন্ধ মানে আসিয়াছিলাম, তখন তিনি অবশ্য জিজ্ঞাসা করিবেন যে, মেহের-উন্নিসা আমার কথা কি বলিল ? তখন আমি কি উত্তর করিব ?” মেহের-উন্নিসা কিছদ্মক্ষণ ভাবিয়া কহিলেন, “এই কহিও যে, মেহের-উন্নিসা হৃদয়মধ্যে তাঁহার ধ্যান করিবে। প্রয়োজন হইলে তাঁহার জন্য আত্মপ্রাণ পৰ্যন্ত সমপণ করিবে। কিন্তু কখনও আপনি কুলমান সমপণ করিবে না। দাসীর স্বামী জীবিত - থাকিতে সে কখনও দিল্লীশ্ববরকে মািখ দেখাইবে না। আর যদি দিল্লীশবর কর্তৃক তাহার স্বামীর প্রাণান্ত হয়, তবে সর্বামিহীনতার সহিত ইহ জন্মে। তাহার মিলন হইবেক না।” ইহা কহিয়া মেহের-উন্নিসা সে সােথান হইতে উঠিয়া গেলেন। মতিবিবি চমৎকৃত হইয়া রহিলেন । কিন্তু মতিবিবিরই জয় হইল। মেহের-উন্নিসার চিত্তের ভাব মতিবিবি জানিলেন ; মতিবিবির আশা ভরসা মেহের-উন্নিসা কিছই জানিতে পারিলেন না। যিনি পরে আত্মবন্ধি · প্রভাবে দিল্লীশবারেরও ঈশবরী হইয়াছিলেন, তিনিও মতির নিকট পরাজিতা হইলেন। ইহার কারণ, মেহের-উন্নিসা প্রণয়শালিনী ; মতিবিবি এ সৰ্থলে কেবলমাত্র সবার্থপরায়ণা। মনীষািহদায়ের বিচিত্র গতি মতিবিবি বিলক্ষণ বঝিতেন। মেহের-উন্নিসার কথা আলোচনা করিয়া তিনি যাহা সিদ্ধান্ত করিলেন, কালে তােহাঁই যথার্থীভূত হইল। তিনি বঝিলেন যে, \ CR