নাই, তখনই সে কুন্তল বাঁধিত না। আবার দেখিলেন যে, সেই কুন্তলরাশি আসিয়া ব্রাহ্মণকুমারের পািঠদেশে পড়িয়া তাঁহার অংসসংবিলম্বী কেশদামের সহিত মিশিয়াছে। কপালকুণডলার কেশরাশি ঈদশ আয়তনশালী, এবং লঘ, সর্বরে কথোপকথনের প্রয়োজনে উভয়ে এরপ সন্নিকটবত্তীর্ণ হইয়া বসিয়া ছিলেন যে, লৎফ-উন্নিসার পন্ঠ পয্যন্ত কপালকুণডলার কেশের সম্প্রসারণ হইয়াছিল। তাহা তাঁহারা দেখিতে পান নাই। দেখিয়া নবকুমার ধীরে ধীরে ভূতলে বসিয়া পড়িলেন। কাপালিক ইহা দেখিয়া নিজে কাটিবিলম্বী এক নারিকেলপাত্ৰ বিমক্ করিয়া কহিল, “বৎস! বল, হারাইতেছ, এই মহৌষধ পান কর, ইহা ভবানীর প্রসাদ। পান করিয়া বল পাইবে।” কাপালিক নবকুমারের মাখের নিকট পাত্র ধরিল। তিনি অন্যমনে পান করিয়া দারণ তুষা নিবারণ করিলেন। নবকুমার জানিতেন না যে, এই সস্বাদ পেয় কাপালিকের স্বহস্তেপ্ৰস্তুত প্রচণ্ডড তেজস্বিনী সরা। পান করিবামাত্ৰ সবল হইলেন। এ দিকে লৎফ-উক্লিাসা পবিবািবং মদস্বেরে কপালকুন্ডলাকে কহিতে লাগিলেন, “ভীগি নি! তুমি যে কাৰ্য্য করিলে, তাহার প্রতিশোধ করিবার আমার ক্ষমতা নাই ; তব যদি আমি চিরদিন তোমার মনে থাকি, সেও আমার সখ্য। যে অলঙ্কাবগলি দিয়াছিলাম, তাহা শনিয়াছি, তুমি দরিদ্রকে বিতরণ করিয়াছ। এক্ষণে নিকটে কিছই নাই। কল্যকার অন্য প্রয়োজন ভাবিয়া কেশমধ্যে একটি অঙ্গরীয় আনিয়াছিলাম, জগদীশবরের কৃপায় সে পাপ প্রয়োজন সিদ্ধির আবশ্যক হইল না। এই অঙ্গরীয়টি তুমি রােখ। ইহার পরে অঙ্গরীয় দেখিয়া যবনী ভগিনীকে মনে করিও । আজি যদি সবামী জিজ্ঞাসা করেন, অঙ্গরীয় কোথায় পাইলে, কহিও, লৎফ-উন্নিসা দিয়াছে।” ইহা কহিয়া লৎফ-উন্নিসা আপন অঙগালি হইতে বহধনে ক্লীত এক অঙ্গরীয় উন্মোচন করিয়া কপালকুণডলার হস্তে দিলেন। নবকুমার তাহাও দেখিতে পাইলেন ; কাপালিক তাঁহাকে ধরিয়াছিলেন, আবার তাঁহাকে কমপমান দেখিয়া পনরাপি মান্দিরা সেবন করাইলেন। মদিরা নবকুমারের মস্তিম্ভেক প্রবেশ করিয়া তাঁহার প্রকৃতি সংহার করিতে লাগিল, স্নেহের অঙ্কুর পয্যন্ত উন্মলিত করিতে লাগিল। কপালকণীডলা লংফ-উন্নিসার নিকট বিদায় হইয়া গাহাভিমখে চলিলেন। তখন নবকুমার ও কাপালিক লৎফ-উন্নিসার অদশ্য পথে কপালকুণডলাব অনসরণ কবিতে লাগিলেন। অভটম পরিচ্ছেদ ঃ গাহাভিমখে "No spectre greets mc-no vain shadow this." Words worth কপালকুণডলা ধীরে ধীরে গাহাভিমখে চলিলেন। অতি ধীরে ধীরে মদ মদ চলিলেন। তাহার কারণ, তিনি অতি গভীর চিন্তামগন হইয়া যাইতেছিলেন। লৎফ-উন্নিসার সংবাদে কপালকুন্ডলার একেবারে চিত্তভােব পরিবত্তিত হইল ; তিনি আত্মবিসর্জনে প্রস্তুত হইলেন। আত্মবিসর্জন কি জন্য ? লৎফ-উন্নিসাব জন্য ? তাহা নহে। কপালকুন্ডলা অন্তঃকরণ সম্পবন্ধে তান্ত্রিকের সন্তান; তান্ত্ৰিক যেরপ কালিকাপ্রাসাদাকাঙক্ষায় পরপ্রাণ সংহারে সঙ্কোচশন্য, কপালকুন্ডলা সেই আকাঙক্ষায় আত্মজীবন বিসজ্ঞজনে তদুপ। কপালকুন্ডলা যে কােপালিকের ন্যায় অনন্যচিত্ত হইয়া শক্তিপ্ৰসাদপ্রাথিনী হইয়াছিলেন, তাহা নহে ; তথাপি আহনিশ শক্তিভক্তি শ্রবণ, দশন ও সাধনে তাঁহার মনে কালিকান রাগ বিশিস্ট প্রকারে জন্মিয়াছিল। ভৈরবী যে সন্টিশাসনকত্রী মক্তিদাত্রী, ইহা বিশেষ মতে প্রতীত হইয়াছিল। কালিকার পজাভূমি যে নরশোণিতে পলাবিত হয়, ইহা তাঁহার পরদঃখদঃখিত হৃদয়ে সহিত না, কিন্তু আর কোন কায্যে ভক্তি প্রদর্শনের ত্রটি ছিল না। এখন সেই বিশ্ববিশাসনকত্রী, সখদঃখবিধায়িনী, কৈবল্যদায়িনী ভৈরবী সাবপেন তাঁহার জীবনসমপণ আদেশ করিয়াছেন। কেনই বা কপালকুন্ডলা সে আদেশ পালন না করিবেন ? তুমি আমি প্রাণত্যাগ করিতে চাহি না। রাগ করিয়া তাহা বলি। এ সংসার সংখ্যময়। সখের প্রত্যাশাতেই বৰ্ত্তলবৎ সংসারমধ্যে ঘরিতেছি।--দঃখের প্রত্যাশায় নহে। কদাচিৎ যদি b Gk ܠ
পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/১৮৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।