পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী ডাক্তার ভাবিল, মন্দ চিকিৎসা নহে। “যে আজ্ঞা, ঔষধের ভাবনা কি,” বলিয়া পলায়ন করিল। পরে ডিসেপন্সরিতে গিয়া একটা সোডা, একট, পোর্ট ওয়াইন, একট- সিরপিফেরিমিউরেটিস, একটা মাথা-মন্ডু মিশাইয়া, শিশি পরিয়া, টিকিট মারিয়া প্রত্যহ দই বার সেবনের বাবস্থা লিখিয়া দিল। সৰ্য্যমখী ঔষধ খাওয়াইতে গেলেন; নগেন্দ্র শিশি হাতে লইয়া পড়িয়া দেখিয়া একটা বিড়ালকে ছাড়িয়া মারিলেন—বিড়াল পলাইয়া গেল—ঔষধ তাহার ল্যাজ দিয়া গড়াইয়া পড়িতে পড়িতে গেল। সােয্যমখী বলিলেন, “ঔষধ না খাও-তোমার কি অসখ্য, আমাকে বল।” নগেন্দ্র বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “কি আসখি ?” সােয্যমখনী বলিলেন, “তোমার শরীর দেখ দেখি, কি হইয়াছে ?” এই বলিয়া সহেযািমখী একখানি দপণ আনিয়া নিকটে ধরিলেন। নগেন্দ্র তাঁহার হাত হইতে দাপািণ লইয়া দরে নিক্ষিপত করিলেন। দীপাণ চৰণ হইয়া গেল। সৰ্য্যেমখীর চক্ষা দিয়া জল পড়িল। দেখিয়া নগেন্দ্র চক্ষ রক্তবর্ণ করিয়া উঠিয়া গেলেন। दिगेि शिया একজন ভৃত্যকে বিনাপরাধে প্রহার করিলেন। সে প্রহার সােয্যমখীর অঙ্গে বাজল । ইতিপকেব। নগেন্দ্র অত্যন্ত শীতলস্বভাব ছিলেন। এখন কথায় কথায় রাগ। শধ, রাগ নয়। একদিন, রাত্রে আহারের সময় অতীত হইয়া গেল, তথাপি নগেন্দ্র অন্তঃপরে আসিলেন না। সােয্যমখী প্রতীক্ষা করিয়া বসিয়া আছেন। অনেক রাত্ৰি হইল । অনেক রাত্রে নগেন্দ্ৰ আসিলেন : সােয্যমখী দেখিয়া বিস্মিত হইলেন। নগেন্দ্রের মািখ আরস্তু, চক্ষ আরক্ত, নগেন্দ্র মদ্যপান করিয়াছেন। নগেন্দ্র কখন মদ্যপান করিতেন না। দেখিয়া সােয্যমখী বিস্মিতা হইলেন। সেই অবধি প্রত্যহ এইরহপ হইতে লাগিল। একদিন সােয্যমখী, নগেন্দ্রের দাইটি চরণে হাত দিয়া, গলদশ্রম কোনরপে রসদ্ধ করিয়া, অনেক অনানয় করিলেন ; বলিলেন, “কেবল আমার অননুরোধে ইহা ত্যাগ কর।” নগেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি দোষ?” জিজ্ঞাসার ভাবেই উত্তর নিবারণ হইল। তথাপি সােয্যমখী উত্তর করিলেন, “দোষ কি, তাহা ত আমি জানি না। তুমি যাহা জান না, তাহা আমিও জানি না। কেবল আমার অননুরোধ।” নগেন্দ্র প্রত্যুত্তর করিলেন, “সােয্যমখী, আমি মাতাল, মাতালকে শ্রদ্ধা হয়, আমাকে শ্রদ্ধা করিও । নচেৎ আবশ্যক করে না।” সােয্যমখী ঘরের বাহিরে গেলেন। ভূত্যের প্রহার। পৰ্যন্ত নগেন্দ্রের সম্মখে আর চক্ষের জল ফেলিবেন না, প্ৰতিজ্ঞা করিয়াছিলেন। দেওয়ানজী বলিয়া পাঠাইয়াছিলেন, “মা ঠাকুরাণীকে বলিও—বিষয় গেল, আর থাকে না।” ‘কেন ? “ “বাব কিছ দেখেন না। সদর মফঃস্বলের আমলারা যাহা ইচ্ছা তাহা করিতেছে। কত্তার অমনোযোগে আমাকে কেহ মানে না।” শনিয়া সৰ্য্যেমখী বলিলেন, “যাঁহার বিষয়, তিনি রাখেন, থাকিবে । না হয়, গোল গোলই।” ইতিপকেব। নগেন্দ্র সকলই স্বয়ং তত্ত্বাবধান করিতেন। একদিন তিন চারি হাজার প্রজা নগেন্দ্রর কাছারির দরওয়াজায় জোড়হাত করিয়া আসিয়া দাঁড়াইল। “দোহাই হজর—নাএব গোমস্তার দৌরাত্ম্যে আর বাঁচি না। সব্বস্ব কাড়িয়া লাইল। আপনি না। রাখিলে কে রাখে ?” নগেন্দ্র হকুম দিলেন, “সব হাঁকায় দাও।” ইতিপকেব। তাঁহার একজন গোমসীতা একজন প্ৰজাকে মারিয়া একটি টাকা লইয়াছিল। নগেন্দ্র গোমসীতার বেতন হইতে দশটি টাকা লইয়া প্ৰজাকে দয়াছিলেন। হরদেব ঘোষাল নগেন্দ্রকে লিখিলেন, “তোমার কি হইয়াছে ? তুমি কি করিতেছ? আমি কিছ ভাবিয়া পাই না। তোমার পত্র ত পাইই না। যদি পাই, ত সে ছত্র দই, তাহার মানে মাথা-মন্ড কিছই নাই। তাতে কোন কথাই থাকে না। তুমি কি আমার উপর রাগ করিয়াছ ? তা বল না কেন ? মোকদ্দমা হারিয়াছ ? তাই বা বল না কেন ? আর কিছ বল না বল, শারীরিক ভাল আছ কি না বল ।” Zb'O