পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এইরনুপে এবারকার যন্ধে জয় হইলে পর, কমল বলিলেন, “যদি তুমি একান্তই যাইবে না, তবে আমার যাইবার বন্দোবসত করিয়া দাও।” শ্ৰী। ফিরিবে কবে ? ক। জিজ্ঞাসা করিতেছ। কেন ? তুমি যদি গেলে না, তবে আমি কয় দিন থাকিতে পারিব ? শ্ৰীশচন্দ্ৰ কমলমণিকে গোবিন্দপরে পাঠাইয়া দিলেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত সংবাদ রাখি যে, সেবার শ্ৰীশচন্দ্রের সাহেবেরা তিসির কাজে বড় লাভ করিতে পারেন নাই। হোসের কমচারীরা আমাদিগের নিকট গোপনে বলিয়াছে যে, সে শ্ৰীশবাবােরই দোষ। তিনি ঐ সময়টা কাজকম্মেম বড় মন দেন নাই। কেবল ঘরে বসিয়া কড়ি গণিতেন। এ কথা শ্ৰীশচন্দ্র একদিন শনিয়া বলিলেন, “হবেই ত! আমি তখন লক্ষীছাড়া হইয়াছিলাম।" শ্রোতারা শনিয়া মািখ ফিরাইয়া বলিল, “ছি! বড় স্ত্ৰৈণ!” কথাটা শ্ৰীশের কাণে গেল। তিনি শনিয়া হৃস্টমনে ভৃত্যদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, “ওরে, ভাল করিয়া আহারের উদ্যোগ কর। বাবরা আজ এখানে আহার করবেন।” চতুর্দশ পরিচ্ছেদ ঃ ধরা পড়িল গোবিন্দপারে দত্তদিগের বাড়ীতে যেন অন্ধকারে "একটি ফল ফটিল। কমলমণির হাসিম খ দেখিয়া সহেযািমদুখীরাও চক্ষের জল শকাইল। কমলমণি বাড়ীতে পা দিয়াই সােয্যমখীব চুলের গোছা লইয়া বসিয়া গেলেন। অনেক দিন সাহায্যমখী কেশরচনা করেন নাই। কমলমণি বলিলেন, “দটো ফল গজিয়া দিব ?” সােয্যমখনী তাঁহার গাল টিপিয়া ধরিলেন। “না! না!” বলিয়া কমলমণি লোকাইয়া দইটা ফল দিয়া দিলেন। লোক আসিলে বলিলেন, “দেখেছ, মাগনী বড়ো বয়সে মাথায় ফল পরে।” আলোকময়ীর আলো নগেন্দ্রের মখমন্ডলের মেঘেও ঢাকা পড়িল না। নগেন্দ্রকে দেখিয়াই কমলমণি ঢিপ করিয়া প্ৰণাম করিল। নগেন্দ্র বলিলেন, “কমল কোথা থেকে ?” কমল মািখ নত। করিয়া, নিরীহ ভাল মানষের মত বলিলেন, “আৰ্জেজ্ঞ, খোকা ধরিয়া আনিল।” নগেন্দ্র বলিলেন, “‘বটে’! মারা পাজিকে!” এই বলিয়া খোকাকে কোলে লইয়া দন্ডস্বরপ তাহার মািখচুম্বন করিলেন। খোকা কৃতজ্ঞ হইয়া তাঁহার গায়ে লাল দিল, আর গোঁপ ধরিয়া টানিল । কুন্দনন্দিনীর সঙ্গে কমলমণির ঐরােপ আলাপ হইল,—“ওলো কুদী-কুশদী মাদী দর্শদী ——ভাল আছিস ত কুশদী ?” কুদী অবাক হইয়া রহিল। কিছকাল ভাবিয়া চিন্তিয়া বলিল, “আছি।” “আছি দিদি—আমায় দিদি বলবি—না বলিস ত ঘামিয়ে থাকবি আর তোর চুলে আগমন ধরিয়ে দিব। আর নহিলে গায়ে আরসলো ছাড়িয়া দিব।” কুন্দ দিদি বলিতে আরম্ভ করিল। যখন কলিকাতায় কুন্দ কমলের কাছে থাকিত, তখন কমলকে কিছর বলিত না। বড় কথাও কহিত না। কিন্তু কমলের যে প্রকৃতি চিরপ্রেমময়ী, তাহাতে সে তখন হইতেই তাঁহাকে ভালবাসিতে আরম্ভ করিয়াছিল। মধ্যে কয় বৎসর আদর্শনে কতক কতক ভুলিয়া গিয়াছিল। কিন্তু এক্ষণে কমলের স্বভাবগণে, কুন্দেরও স্বভাবগণে, সেই ভালবাসা নািতন হইয়া বন্ধি পাইতে লাগিল। প্ৰণয় গাঢ় হইল। এদিকে কমলমণি স্বামীর গহে যাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন ; সােয্যমখী বলিলেন, “না, ভাই!! আর দ-দিন থাকা! তুমি গেলে আমি আর বাঁচিব না। তোমার কাছে সকল কথা বলাও সোয়াসিত।” কমল বলিলেন, “তোমাঁর কাজ না করিয়া যাইব না।” সােয্যমখী বলিলেন, “আমার কি কাজ করিবে ?” কমলমণি মাখে বলিলেন, “তোমার শ্রাদ্ধ, “ মনে বলিলেন, “তোমার কণাটকোদধারী।” কুন্দনন্দিনী কমলের যাওয়ার কথা শনিয়া আপনার ঘরে গিয়া লাকাইয়া কাঁদিল, কমলমণি লকাইয়া লাকাইয়া পশ্চাৎ পশ্চাৎ গেল। কুন্দনন্দিনী বালিশে মাথা দিয়া কাঁদিতেছে, কমলমণি তাহার চুল বাঁধিতে বসিল। চুল বাঁধা কমলের একটা রোগ। চুল বাঁধা সমাপত হইলে, কুন্দের মাথা তুলিয়া, কমল তাহার মস্তক আপনার কোলে রাখিলেন। অঞ্চল দিয়া তাহার চক্ষ মছাইয়া দিলেন। এই সব কাজ শেষ করিয়া, শেষে ミb○