পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবক্ষ চতুষ্পিত্ৰংশাত্তম পরিচ্ছেদ ঃ পথিপাশে বর্ণ বর্ষাকাল। বড় দন্দিন। সমস্ত দিন বান্টি হইয়াছে। একবারও সায্যোদয় হয় নাই। আকাশ মেঘে ঢাকা। কাশী যাইবার পাকা রাস্তার ঘটিঙ্গের উপর একটা একটা পিছল হইয়াছে। পথে প্রায় লোক নাই-ভিজিয়া ভিজিয়া কে পথ চলে ? একজন মাত্র পথিক পথ চলিতেছিল । পথিকের ব্রহ্মচারীর বেশী। গৈরিকবর্ণ বস্ত্র পরা—গলায় রদ্রাক্ষ—কপালে চন্দন রেখা—জটার আড়ম্বর কিছ নাই, ক্ষদ্র ক্ষদ্র কেশ। কতক কতক শেবতবর্ণ। এক হাতে গোলপাতার ছাতা, অপর হাতে তৈজস—ব্রহ্মচারী ভিজিতে ভিজিতে চলিয়াছেন । একে ত দিনেই অন্ধকার, তাহাতে আবার পথে রাত্ৰি হইল—আমনি পথিবী মসীময়ী হইল—পথিক কোথায় পথ, কোথায় অপথ, কিছ, অনভব করিতে পারিলেন না। তথাপি পথিক পথ অতিবাহিত করিয়া চলিলেন—কেন না, তিনি সংসারত্যাগী, ব্ৰহ্মচারী। যে সংসারত্যাগী, তাহার অন্ধকার, আলো, কুপথ, সাপথ সব সমান । রাত্রি অনেক হইল। ধারণী মসীময়ী-আকাশের মাখে কৃষ্ণবগণ্ঠন। বক্ষগণের শিরোমালা কেবল গাঢ়তর অন্ধকারের সতপস্বরপ লক্ষিত হইতেছে। সেই বক্ষশিরোমালার বিচ্ছেদে মাত্র পথের রেখা অনভূত হইতেছে। বিন্দ বিন্দ, বম্পিট পড়িতেছে। এক একবার বিদ্যুৎ হইতেছে —সে আলোর অপেক্ষা অাঁধার ভাল। অন্ধকারে ক্ষণিক বিদ্যদালোকে সন্টি যেমন ভীষণ দেখায়, অন্ধকারে তত নয়। 'शा का !' অন্ধকারে যাইতে যাইতে ব্ৰহ্মচারী অকস্মাৎ পথিমধ্যে এই শব্দসচক দীঘনিঃশবাস। শনিতে পাইলেন। শব্দ অলৌকিক-কিন্তু তথাপি মনষ্যেকন্ঠনিঃসতে বলিয়া নিশ্চিত বোধ হইল। শব্দ অতি মদন, অথচ আতিশয় ব্যথাব্যঞ্জক বলিয়া বোধ হইল। ব্ৰহ্মচারী পথে সিথর হইয়া দাঁড়াইলেন। কতক্ষণে আবার বিদ্যুৎ হইবে।--সেই প্রতীক্ষায় দাঁড়াইয়া রহিলেন। ঘন ঘন বিদ্যুৎ হইতেছিল। বিদ্যুৎ হইলে পথিক দেখিলেন, পথিপাশেবা কি একটা পড়িয়া আছে। এটা কি মনষ্যে ? পথিক তাহাই বিবেচনা করিলেন। কিন্তু আর একবার বিদ্যুতের অপেক্ষা করিলেন। দ্বিতীয় বার বিদ্যুতে স্থির করিলেন, মনষ্যে বটে। তখন পথিক ডাকিয়া বলিলেন, ‘কে তুমি পথে পড়িয়া আছ ?” কেহ কোন উত্তর দিলেন না। আবার জিজ্ঞাসা করিলেন—এবার অসফট কাতরোক্তি আবার মহত্তজন্য কণে প্রবেশ করিল। তখন ব্রহ্মচারী ছত্র, তৈজস ভূতলে রাখিয়া, সেই সস্থান লক্ষ্য করিয়া ইতস্ততঃ হস্তপ্রসারণ করিতে লাগিলেন। অচিরাৎ কোমল মনষ্যদেহে করসপশ হইল। “কে গা তুমি ?” শিরোদেশে হাত দিয়া কবরী সপশ করিলেন। “দগে ! এ যে সত্ৰীলোক!” তখন ব্রহ্মচারী উত্তরের প্রতীক্ষা না করিয়া মামনুষ অথবা অচেতন সত্ৰীলোকটিকে, দই হসন্ত দবারা কোলে তুলিলেন। ছত্র তৈজস পথে পড়িয়া রহিল। ব্রহ্মচারী পথ ত্যাগ করিয়া সেই অন্ধকারে মাঠ ভাঙিগয়া গ্রামাভিমখে চলিলেন। ব্ৰহ্মচারী এ প্রদেশের পথ ঘাট গ্রাম বিলক্ষণ জানিতেন। শরীর বলিষ্ঠ নহে, তথাপি শিশাসন্তানবৎ সেই মরণোন্ম-খীকে কোলে করিয়া এই দগম পথ ভাঙিগয়া চলিলেন। যাহারা পরোপকারী, পরপ্রেমে বলবান, তাহারা কখনও শারীরিক বলের অভাব জানিতে পারে না। গ্রামের প্রান্তভাগে ব্ৰহ্মচারী এক পর্ণকুটীর প্রাপিত হইলেন। নিঃসঙ্গ সত্ৰীলোককে ক্লোড়ে লইয়া সেই কুটীরের দ্বারদেশে উপস্থিত হইলেন। ডাকিলেন, “বাছা হর, ঘরে আছ গা ?” কুটীরমধ্য হইতে একজন সত্ৰীলোক কহিল, “এ যে ঠাকুরের গলা শনিতে পাই। ঠাকুর কবে এলেন ?” ব্ৰহ্মচারী। এই আসছি। শীঘ্ৰ দাবার খোল—আমি বড় বিপদগ্ৰস্ত। হরমণি কুটীরের দাবার মোচন করিল। ব্রহ্মচারী। তখন তাহাকে প্রদীপ জবালিতে বলিয়া দিয়া, আস্তে আস্তে সত্ৰীলোকটিকে গহমধ্যে মাটির উপর শোয়াইলেন। হর দীপ জবালিত করিল, তাহা মন্মষের মাখের কাছে আনিয়া উভয়ে তাঁহাকে বিশেষ করিয়া দেখিলেন। দেখিলেন, সত্ৰীলোকটি প্রাচীন নহে। কিন্তু এখন তাহার শরীরের যেরপে অবস্থা, তাহাতে তাহার বয়স অনভব করা যায় না। তাহার শরীর অত্যন্ত শীর্ণ-সাংঘাতিক পীড়ার ○ > cl