পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

rers. বিষবক্ষ সেই এই রোদনের মৰ্ম্মমর্যাচ্ছেদকতা অন্যভব করিবে। তখন কুন্দ পরিতাপ করিতে লাগিল যে, “কেন আমি সর্বামিদশ নলালসায় প্রাণ রাখিয়াছিলাম।” আরও ভাবিল যে, “এখন আর কোন সখের আশায় প্রাণ রাখি ?" সমস্ত রাত্রি জাগরণ এবং রোদনের পর প্রভাতকালে কুন্দের তন্দ্ৰা আসিল। কুন্দ তন্দ্রাভিভূত হইয়া দিবতীয় বার লোমহর্ষণ সর্বপন দেখিল । দেখিল, চারি বৎসর পর্কেবা পিতৃভবনে পিতার মাতৃত্যুশয্যাপাশেব শয়নকালে, যে জ্যোতিময়ী মাত্তি তাহার মাতার রােপ ধারণ কবিয়া, স্বপনাবিভূতি হইয়াছিলেন, এক্ষণে সেই আলোকময়ী প্রশান্তমত্তি আবার কুন্দের মস্তকোপরি অবস্থান করিতেছেন। কিন্তু এবার তিনি বিশদ্ধ শত্ৰ চন্দ্রমন্ডলমধ্যবত্তিানী নহেন। এক অতি নিবিড় বর্ষণোন্মািখ নীল নীরদমধ্যে আরোহণ করিয়া অবতরণ করিতেছেন। তাঁহার চতুশুপাশে বা অন্ধকারময় কৃষ্ণবাচেপর তরঙ্গ উৎক্ষিপত হইতেছে, সেই অন্ধকারমধ্যে এক মনষ্যেমনুত্তি অলপ অলপ হাসিতেছে। তন্মধ্যে ক্ষণে ক্ষণে সৌদামিনী প্রভাসিত হইতেছে। কুন্দ সািভয়ে দেখিল যে, ঐ হাস্যনিরত বদনমন্ডল, হীরার মখানার প। আরও দেখিল, মাতার কারণাময়ী কান্তি এক্ষণে গম্ভীরভাবাপন্ন। মাতা কহিলেন, “কুন্দ, তখন আমার কথা শানিলে না, আমার সঙ্গে আসিলে না—এখন দঃখ দেখিলে ত?” কুন্দ রোদন করিল। তখন মাতা পনরাপি কহিলেন, “‘বলিয়াছিলাম আর একবার আসিব ; তাই আবার আসিলাম । এখন যদি সংসারস্যুখে পরিতৃপিত জন্মিয়া থাকে, তবে আমার সঙ্গে চল ।” তখন কুন্দ কাঁদিয়া কহিল, “মা, তুমি আমাকে সঙ্গে লইয়া চল। আমি আর এখানে থাকিতে চাহি না।” ইহা শনিয়া মাতা প্ৰসন্ন হইয়া বলিলেন, “তবে আইসি।” এই বলিয়া তেজোময়ী অন্তহিতা হইলেন। নিদ্রা ভঙ্গ হইলে, কুন্দ সর্বপন সমরণ করিয়া দেবতার নিকট ভিক্ষা চাহিল যে, “এবার আমার সর্বপন সফল হউক!” প্ৰাতঃকালে হীরা কুন্দের পরিচযাথোঁ সেই গহে প্রবেশ করিল। দেখিল, কুন্দ কাঁদিতেছে। কমলমণির আসা অবধি হীরা কুন্দের নিকট বিনীতভােব ধারণ করিয়াছিল। নগেন্দ্র আসিতেছেন, এই সংবাদই ইহার কারণ। পরবর্ণপরিষব্যবহারের প্রায়শ্চিত্তস্বরােপ বরং হীরা, পৰ্ব্ববাপেক্ষাও কুন্দের প্রিয়বাদিনী ও আজ্ঞাকারিণী হইয়াছিল। অন্য কেহ এই কাপট্য সহজেই বাবিতে পারিত—কিন্তু কুন্দ অসামান্যা সরলা এবং আশাসন্তু আটা—সতরাং হীরার এই নাতন প্রিয়কারিতায় প্রীতা ব্যতীত সন্দেহবিশিষটা হয় নাই। অতএব, এখন কুন্দ হীরাকে পাকবািমত বিশ বাসভাগিনী বিবেচনা করিত। কোন কালেই রক্ষভাষিণী ভিন্ন অবিশ্ববাসভাগিনী মনে করে ढाये । হীরা জিজ্ঞাসা করিল, “মা ঠাকরাণি, কাঁদিতেছ। কেন ?” কুন্দ কথা কহিল না। হীরার মািখপ্রতি চাহিয়া দেখিল। হীরা দেখিল, কুন্দের চক্ষ ফলিয়াছে, বালিশ ভিজিয়াছে। হীরা কহিল, “এ কি ? সমস্ত রাত্রিই কেন্দেছ না কি ? কেন, বাব কিছ বলেছেন ?” কুন্দ বলিল, “কিছ না।” এই বলিয়া আবার সংবদিধতিবেগে রোদন করিতে লাগিল। হীরা দেখিল, কোন বিশেষ ব্যাপার ঘটিয়াছে। কুন্দের ক্লেশ দেখিয়া আনন্দে তাহার হৃদয় ভাসিয়া গেল। মািখ ফলান করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বাব বাড়ী আসিয়া তোমার সঙ্গে কি কথাবাৰ্ত্তা কহিলেন ? আমরা দাসী, আমাদের কাছে তা বলিতে হয়। “ কুন্দ কহিল, “কোন কথাবাৰ্ত্তা বলেন নাই।" হীরা বিস্মিতা হইয়া কহিল, “সে কি, মা ! এত দিনের পর দেখা হলো! কোন কথাই বলিলেন না ?” কুন্দ কহিল, “আমার সঙ্গে দেখা হয় নাই।” এই কথা বলিতে কুন্দের রোদন অসংবরণীয় হইল। হীরা মনে মনে বড় প্রীতা হইল। হাসিয়া বলিল, “ছি মা, এতে কি কাঁদিতে হয় ? কত (3) Տ) Գ NRR