পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

, ইন্দিরা একজন শবশরেবাড়ীর, একজন বাপের বাড়ীর, উভয়েই জলে। আমার মনে একটা ভয় হইল— কেহ নিকটে নাই—স্থিান মন্দ, ভাল করে নাই। কি করি, আমি কুলবধ, মািখ ফটিয়া কাহাকে ডাকিতে পারিলাম না। এমত সময়ে পালকীর অপর পাশেবা কি একটা শবদ হইল। যেন উপরিস্থ বটব্যুক্ষের শাখা হইতে কিছ গর, পদাৰ্থ পড়িল। আমি সে দিকের কপাট অলপ খলিয়া দেখিলাম। দেখিলাম যে, একজন কৃষ্ণবর্ণ বিকটাকার মনষ্যে! ভয়ে দবার বন্ধ করিলাম ; কিন্তু তখনই বঝিলাম যে, এ সময়ে দ্বার খালিয়া রাখাই ভাল। কিন্তু আমি পানশাচ দাবার খলিবার পকেবই আর একজন মানষে গাছের উপর হইতে লাফাইয়া পড়িল । দেখিতে দেখিতে আর একজন, আবার একজন ! এইরপ চারি জন প্রায় এককালেই গাছ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া পালকী কাঁধে করিয়া উঠাইল । উঠাইয়া উদ্ধাবশবাসে ছটিল। দেখিতে পাইয়া আমার দাবারবানেরা “কোন হ্যায় রে! কোন হ্যায় রে!” রব তুলিয়া জল হইতে দৌড়িল । তখন বঝিলাম যে, আমি দস্যহস্তে পড়িয়াছি। তখন আর লড়জায় কি করে ? পালকীর উভয় দাবার মক্ত করিলাম। আমি লাফাইয়া পড়িয়া পলাইব মনে করিলাম, কিন্তু দেখিলাম যে, আমার সঙেগর সকল গলোক অত্যন্ত কোলাহল করিয়া পালকীর পিছনে দৌড়াইল । অতএব ভরসা। হইল। কিন্তু শীঘ্রই সে ভরসা দর হইল। তখন নিকটস্থ অন্যান্য ব্যক্ষ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া বহিঃসংখ্যক দস্য দেখা দিতে লাগিল। আমি বলিয়াছি, জলের ধারে বটব্যুক্ষের শ্রেণী। সেই সকল বক্ষের নীচে দিয়া দস্যরা পালকী লইয়। যাইতেছিল। সেই সকল ব্যক্ষ হইতে মনষ্যে লাফাইয়া পড়িতে লাগিল। তাহদের কাহার ও হাতে বাঁশের লাঠি, কাহারও হাতে গাছের ডাল । লোকসংখ্যা অধিক দেখিয়া আমার সঙ্গের লোকেরা পিছাইয়া পড়িতে লাগিল। তখন আমি নিতান্ত হতাশাবাস হইয়া মনে করিলাম, লাফাইষা পড়ি। কিন্তু বাহকেরা যেরপ দ্রুতবেগে যাইতেছিল—তাহাতে পালকী হইতে নামিলে আঘাতপ্রাপিস্তব সম্পভাবনা। বিশেষতঃ একজন দস্য লাঠি দেখাইয়া বলিল যে, “নামিবি ত মাথা ভাঙিগয়া দিব।” সতরাং আমি নিরস্ত লাম । আমি দেখিতে লাগিলাম যে, একজন দেবারবান অগ্রসর হইয়া আসিয়া পালকী ধরিল, তখন একজন দস্য তাহাকে লাঠির আঘাত করল । সে অচেতন হইয়া মাত্তিকাতে পড়িল । তাহাকে আর উঠিতে দেখিলাম না। বোধ হয়, সে আর উঠিল না। ইহা দেখিয়া অবশিস্ট রক্ষিগণ নিরস্ত হইল। বাহকেরা আমাকে নিবিবাঘের লইয়া গেল ! রাত্ৰি এক প্রহর পর্য্যন্ত তাহারা এইরহপ বহন করিয়া পরিশেষে পালকী নামাইল। দেখিলাম, যেখানে নামাইল, সে সথান নিবিড় বন—অন্ধকার। দস্যরা একটা মশাল জবালিল। তখন আমাকে কহিল, “তোমার যাহা কিছ আছে, দাও-নইলে প্ৰাণে মারিব।” আমার অলঙ্কার বসত্ৰাদি সকল দিলাম--অঙ্গের অলঙকারও খালিয়া দিলাম। কেবল হাতের বালা খলিয়া দিই নাই—— তাহারা কাড়িয়া লইল । তাহারা এব-খানি মলিন, জীণ বস্ত্ৰ দিল, তাহা পরিয়া পরিধানের বহমাল্য বস্ত্ৰ ছাড়িয়া দিলাম। দস্যরা আমার সব সব লইয়া পালকী ভাঙ্গিয়া রােপা খালিয়া লাইল । পরিশেষে অগিন জবালিয়া ভগন শিবিকা দাহ করিয়া দস্যতার চিহ্নমাত্র লোপ করিল। তখন তাহারাও চলিয়া যায়, সেই নিবিড় অরণ্যে অন্ধকার রাত্ৰিতে আমাকে বন্য পশদিগের মখে সমপণ করিয়া যায় দেখিয়া আমি কাঁদিয়া উঠিলাম। আমি কহিলাম, “তোমাদের পায়ে পড়ি, আমাকে সঙ্গে লইয়া চলা।” দস্যর সংসগাঁও আমার সপািহণীয় হইল। এক প্রাচীন দস্য সকরণভাবে বলিল, “বাছা, আমন রাঙ্গা মেয়ে আমরা কোথায় লইয়া যাইব ? এ ডাকাতির এখনই সোহরৎ হইবে—তোমার মত রাঙগা মেয়ে আমাদের সঙ্গে দেখিলেই আমাদের ধরিবে ।” একজন যােবা দস্য কহিল, “আমি ইহাকে লইয়া ফাটকে যাই, সেও ২ ভাল, তব, ইহাকে ছাড়িতে পারি না।” সে আর যাহা বলিল, তাহা লিখিতে পারি না।—এখন মনেও আনিতে পারি না। সেই প্রাচীন দস্য ঐ দলের সন্দার। সে যাবাকে লাঠি দেখাইয়া কহিল, “এই লাঠির বাড়িতে এইখানেই তোর মাথা ভাঙিগয়া রাখিয়া যাইব । ও সকল পাপ কি আমাদের সয় ?” তাহারা চলিয়া গেল । Ꮤ0 8Ꮹ.