পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী বদ্ধ ব্রাহ্মণ যাজক, পৌরোহিত্য করেন। আমার বস্ত্রের অবস্থা দেখিয়া বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা, তোমার কাপড়ের এমন দশা কেন ? তোমার কাপড় কি কেহ কাড়িয়া লইয়াছে ?” আমি বলিলাম, “আজ্ঞা হাঁ।” তিনি যজমানদিগের নিকট অনেক কাপড় পাইতেন—দইখানা খাটো বহরের চৌড়া রাঙ্গাপেড়ে সাড়ী আমাকে পরিতে দিলেন। শাঁখার কড়ও তাঁর ঘরে ছিল, তাহাও চাহিয়া লইয়া পরিলাম । এ সকল কাষ্য সমাধা করিলাম—অতি কন্টে। শরীর ভাঙিগয়া পড়িতেছিল। ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণী দটি ভাত দিলেন-খাইলাম। একটা মাদর দিলেন, পাতিয়া শইলাম। কিন্তু এত কন্টেও ঘনমাইলাম না। আমি যে জন্মের মত গিয়াছি—আমার যে মরাই ভাল ছিল, কেবল তাহাই মনে পড়িতে লাগিল। ঘােম হইল না। প্রভাতে একটা ঘাম আসিল। আবার একটা স্বপন দেখিলাম। দেখিলাম, সম্মখে অন্ধকারময় যমমাত্তি, বিকট দংভট্টারাশি প্রকটিত করিয়া হাসিতেছে। আর ঘামাইলাম না। পরদিন প্রাতে উঠিয়া দেখিলাম যে, আমার অত্যন্ত গা বেদনা হইয়াছে। পা ফলিয়া উঠিয়াছে, বসিবার *ाजुि काथे । যত দিন না। গায়ের বেদনা আরাম হইল, তাত দিন আমাকে কাজে কাজেই ব্রাহ্মণের গহে। থাকিতে হইল। ব্ৰাহ্মণ ও তাঁহার গহিণী আমাকে যত্ন করিয়া রাখিলেন । কিন্তু মহেশপর যাইবার কোন উপায় দেখিলাম না। কোন সত্ৰীলোকই পথ চিনিত না, অথবা যাইতে স্বীকার করিল না। পরিষে অনেকেই স্বীকৃত হইল—কিন্তু তাহাদিগের সঙ্গে একাকিনী যাইতে ভয় করিতে লাগিল। ব্রাহ্মণও নিষেধ করিলেন, বললেন, “উহাদিগের চরিত্র ভাল নহে, উহাদিগের সঙেগ যাইও না। উহাদের কি মতলব বলা যায় না। আমি ভদ্রসন্তান হইয়া তোমার ন্যায় সন্দরীকে পরিষের সঙ্গে কোথাও পাঠাইতে পারি না।” সতরাং আমি নিরস্ত হইলাম। এক দিন শানিলাম যে, ঐ গ্রামের কৃষ্ণদাস বস নামক একজন ভদ্রলোক সপরিবারে কলিকাতায় যাইবেন। শনিয়া আমি উত্তম সংযোগ বিবেচনা করিলাম। কলিকাতা হইতে আমার পিত্ৰালয় ও শবশরোলয় অনেক দীর বটে, কিন্তু সেখানে আমার জ্ঞাতি খািল্লতাত বিযয়কম্পেমাপলক্ষে বাস করিতেন। আমি ভাবিলাম যে, কলিকাতায় গেলে অবশ্য খািল্লতাতের সন্ধান পাইব । তিনি অবশ্য আমাকে পিত্ৰালয়ে পাঠাইয়া দিবেন। না হয় আমার পিতাকে সংবাদ দিবেন। আমি এই কথা ব্রাহ্মণকে জানাইলাম। ব্রাহ্মণ বলিলেন, “এ উত্তম বিবেচনা করিয়াছ । কৃষ্ণদাস বােব আমার যজমান। সঙ্গে করিয়া লইয়া বলিয়া দিয়া আসিব । তিনি প্রাচীন, আর বড় ভাল মানষে।” ব্রাহ্মণ আমাকে কৃষ্ণদাস বাবার কাছে লইয়া গেলেন। ব্রাহ্মণ কহিলেন, “এটি ভদ্রলোকের কন্যা, বিপাকে পড়িয়া পথ হারাইয়া এ দেশে আসিয়া পড়িয়াছেন। আপনি যদি ইহাকে সঙেগ করিয়া কলিকাতায় লইয়া যান, তবে এ অনাথা। আপনি পিত্ৰালয়ে পাহছিতে পারে।” কৃষ্ণদাস বােব সম্মত হইলেন। আমি তাঁহার অন্তঃপরে গেলাম। পরদিন তাঁহার পরিবারস্থ সত্ৰীলোকদিগের সঙ্গে, বাস মহাশয়ের পরিবার কর্তৃক অনাদত হইয়াও, কলিকাতায় যাত্ৰা করিলাম। প্রথম দিন, চারি পাঁচ ক্লোশ হাঁটিয়া গঙ্গাতীরে আসিতে হইল। পরদিন নৌকায় উঠিলাম। পশ্চিম পরিচ্ছেদ ঃ বাজিয়ে যাব মল আমি গঙ্গা কখনও দেখি নাই। এখন গঙ্গা দেখিয়া, আহাদে প্ৰাণ ভরিয়া গেল। আমার এত দঃখ, মহত্তজন্য সব ভুলিলাম। গঙ্গার প্রশস্ত হৃদয়! তাহাতে ছোট ছোট ঢেউ-ছোট ঢেউর উপর রৌদ্রের চিকিমিকি—যত দাির চক্ষ যায়, তত দীর জল জীবলিতে জীবলিতে ছটিয়াছে --তীরে কুঞ্জের মত সাজান বক্ষের অনন্ত শ্রেণী; জলে কত রকমের কত নৌকা; জলের উপর দাঁড়ের শবদ, দাঁড়ি-মাঝির শব্দ, জলের উপর কোলাহল, তীরে ঘাটে ঘাটে কোলাহল ; কত রকমের লোক, কত রকমে স্নান করিতেছে। আবার কোথাও সাদা মেঘের মত অসীম সৈকত ভূমি— তাতে কত প্রকারের পক্ষী কত শব্দ করিতেছে। গঙগা যথার্থ পণ্যময়ী। অতৃপত নয়নে কয় দিন দেখিতে দেখিতে আসিলাম । Ꮼ 8 Ꮜ