পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

/ইন্দিরা সভা। বাছা, তা হলে আমাকেও বলিতে হইবে, তুমি একে হারামজাদী বলেছ। বাড়ী তখন গালে চড়াইতে আরম্ভ করিল, “আমি কখন হারামজাদী বল্লেম! (এক ঘা)— আমি কখন হারামজাদী বল্লেম! (দই ঘা)—আমি কখন হারামজাদী বল্লোম!! (তিন ঘা) ইতি সমাপত।। তখন আমরা বাড়ীকে কিছ. মিস্ট কথা বলিতে আরম্ভ করিলাম। প্রথমে আমি বলিলাম, “হাঁ গা বৌ ঠাকুরাণ-হারামজাদী বলতে তুমি কখন শনিলে ? উনি কখন এ কথা বললেন ? কই আমি ত শনি নাই।” বাড়ী তখন বলিল, “এই শনিলে, বৌ দিদি ! আমার মাখে কি আমন সব কথা বেরোয়া!” সভাষিণী বলিল, “তা হবে—বাহিরে কে কা'কে বলিতেছিল, সেই কথাটা আমার কাণে গিয়া থাকিবে। বামন ঠাকুরাণী কি তেমন লোক ! ও’র রান্না কাল খেয়েছিলো ত ? এ কলিকাতার ভিতর অমন কেউ রিধিতে পারে না।” বামনী আমার দিকে চাহিয়া বলিল, “শািনলে গা ?” আমি বলিলাম, “তা ত সবাই বলে। আমি আমন রান্না কখনও খাই নাই।” বাড়ী এক গাল হাসিয়া বলিল, “তা তোমরা বলবে বৈ কি মা ! তোমরা হলে ভাল মানষের মেয়ে, তোমরা ত রাষা চেন। আহা! এমন মেয়েকে কি আমি গালি দিতে পারি—এ কোন বড় ঘরের মেয়ে। তা তুমি দিদি ভেবো না, আমি তোমাকে রান্নাবান্না শিখিয়ে দিয়ে তবে যাব।” বাড়ীর সঙ্গে এইরনুপে আপোষ হইয়া গেল। আমি অনেক দিন ধরিয়া কেবল কাঁদিয়াছিলাম । অনেক দিনের পর আজ হাসিলাম। সে হাসি-তামাসা দরিদ্রের নিধির মত, বড় মিন্ট লাগিয়াছিল। তাই বাড়ীর কথাটা এত সবিস্তারে লিখিলাম। সে হাসি। আমি এ জন্মে ভুলিব না। আর কখন হাসিয়া তেমন সখি পাইব না। তার পর গহিণী আহারে বসিলেন। বসিয়া থাকিয়া যত্নপৰ্ব্বক তাঁহাকে ব্যঞ্জনগলি খাওয়াইলাম। মাগনী গিলিল অনেক । শেষে বলিল, “রাঁধ ভাল ত গা ! কোথায় রান্না শিখিলে ?” আমি বলিলাম, ‘বাপের বাড়ী।” গহি। তোমার বাপের বাড়ী কোথায় গা ? আমি একটা মিছে কথা বলিলাম। গহিণী বলিলেন, “এ ত বড় মানষের ঘরের মত রান্না। তোমার বাপ কি বড় মানষে ছিলেন ? ज्ञा । ऊा ष्ट्6व्ान् । গহি। তবে তুমি রধিতে এসেছি কেন ? আমি। দরবস্থায় পড়িয়াছি। গহি। তা আমার কাছে থােক, বেশ থাকিবে । তুমি বড় মানষের মেয়ে, আমার ঘরে তেমনই থাকিবে। পরে সভাষিণীকে ডাকিয়া বলিলেন, “বোঁ মা, দেখো গো, একে যেন কেউ কড়া কথা না বলে—আর তুমি ত বলবেই না, তুমি তেমন মানষের মেয়ে নও।” সভাষিণীর ছেলে সেখানে বসিয়াছিল। ছেলে বলিল, “আমি কলা কতা বলব।” আমি বলিলাম, “বল দেখি !” সে বলিল, “কলা চাতু (চাট) হলি-আল কি মা ?” সভাষিণী বলিল, “আর তোর শাশড়ী।” ছেলে বলিল, “কৈ ছাছ-লী ?” সভাষিণীর মেয়ে আমাকে দেখাইয়া বলিল, “ঐ তোর শাশড়ী।” তখন ছেলে বলিতে লাগিল, “কুনডিনী ছাছ-লী! কুনডিনী ছাছ-লী!” সভাষিণী আমার সঙ্গে একটা সম্পবিন্ধ পাতাইবার জন্য বেড়াইতেছিল। ছেলে-মেয়ের মখের এই কথা শনিয়া সে আমাকে বলিল, “তবে আজ হইতে তুমি আমার বেহাইন হইলে ।” তার পর সম্ভাষিণী খাইতে বসিল। আমিও তার কাছে খাইতে বসিলাম। খাইতে খাইতে সে জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার কয়টি বিয়ে, বেহান ?” কথাটা বঝিলাম। বলিলাম, “কেন, রান্নাটা দ্ৰৌপদীর মত লাগিল না কি ?” Ꮼ Ꮹ CᎸ