পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ নাট্যসান্টির শক্তি এখন বাড়িতেছে।” বঙ্কিমবাবা--"হাঁ, দেখিয়াছি, সে কথা সে দিন কুন্দচরিত্রের শেষে লিখিয়াছ। চন্দ্রবাবও তাই বলেন, আমার নিজেরও তাই বোধ হয়।” (বঙিকম-প্রসঙ্গ, পঃ ১৯১) বঙিকমবাব বিষবক্ষ’ তাঁহার অকৃত্রিম বন্ধ জগদীশচন্দ্র রায়কে এই কথাকয়টি লিখিয়া উৎসগা করেন : “কাব্যপ্রিয় পন্ডিতগ্রগণ্য শ্ৰীযক্ত বাবা জগদীশনাথ রায় সহৃদাবরকে এই গ্রন্থ বন্ধত্ব ও স্নেহের চিহ্নস্বরপ অপিত হইল।” বঙ্কিম-জীবনীকার শচীশচন্দ্র লিখিয়াছেন, বিষবক্ষের অন্তগত হরদেব ঘোষালের পত্ৰ জগদীশনাথ রায় কর্তৃক লিখিত (বঙ্কিম-জীবনী, ৩য় সং, পঃ ২৭৩)। বাংলা সাহিত্যের রসজ্ঞ সমালোচকগণ নানা দিক হইতে এ উপন্যাসখানির আলোচনা করিয়াছেন - 'বিষবক্ষ’ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ভাষায় অনদিত হইয়াছে। হিন্দ স্থানী অন্যবাদ বাহির হয়। ১৮৯১ সনে শিয়ালকোট হইতে। ইংরেজীতে অন্যবাদ করেন মিরিয়াম এস. নাইট ১৮৮৪ সনে। নামকরণ হয় The Poz0072 Tree । ইহার ভূমিকায় সরল এডউইন আনল'ড উপন্যাসের বিশেষ প্রশংসা করেন। শচীশচন্দ্ৰ বলেন, ছোটলাট ইলিয়ট সাহেবের পত্নীকে উপহার দিবার জন্য বঙ্কিম বিষবক্ষে’র অংশবিশেষ Tbe Bane of Life নামে অন্যবাদ করেন (বঙ্কিম-জীবনী, ৩য় সং, পঃ ১৪১)। ১৮৯৪ সনে ‘বিষবক্ষে’র সোয়েডিশ অন্যবাদ প্রকাশিত হয়। বিষবক্ষের নাট্যরােপ দেন আমতলাল বস। সাধারণ রঙগালয়ে এখানি বহ বার অভিনীত হয়। छेब्ाझा ইন্দিরা প্রথম বর্ষের চৈত্র সংখ্যা (১২৭৯) “বঙ্গদর্শনে’ সম্পপণ্য প্রকাশিত হয়। ইহাকে আধনিক যাগের ছোট গলেপর পয্যায়ে ফেলা যাইতে পারে। বঙ্কিমচন্দ্র অন্যান্য নানা বিষয়ের মত ‘বঙগদশনে’ ছোট গলপ রচনার পরীক্ষায়ও প্রবত্ত হন। ‘ইন্দিরা” এই পরীক্ষার প্রথম ফল । এখানি প্রথম পােস্তকাকারে প্রকাশিত হয় ১৮৭৩ সনে। তখন ইহার আকার ছিল ক্ষদ্র, মাত্র ৪৫ পাঠায় সমাপত। বঙ্কিমচন্দ্র মন্ত্যুর এক বৎসর পকেবা ‘ইন্দিরা'র প্রচুর সংস্কার সাধন করিয়া ইহাকে ১৭৭ পন্ঠার একখানি নাতিবােহৎ উপন্যাসে পরিণত করান। ১৮৯৩ সনে এই আকারে ‘ইন্দিরা’র পঞ্চম সংস্করণ বাহির হয় । ‘পঞ্চম বারের বিজ্ঞাপন।” শীষে বঙ্কিমচন্দ্র এই রােপ আকার বন্ধির যে কৈফিয়ত দেন তাহা বড়ই উপভোগ্য। তিনি লেখেন : “ইন্দিরা ছোট ছিল—বড় হইয়াছে। ইহা যদি কেহ অপরাধ বলিয়া গণ্য করেন, তবে ইন্দিরা বিনীতভাবে নিবেদন করিতে পারে যে, এমন অনেক ছোটই বড় হইয়া থাকে। ভগবানের ইচ্ছায় নিতান্তই ছোট বড় হইতেছে। রাজার কাজ ত এই দেখি, ছোটকে বড় করিয়া, বড়কে ছোট করেন। সমাজও দেখিতে পাই বড়কে ছোট, ছোটকে বড় করেন। আমিও যাহার অধীন, সে না হয়, আমাকে ছোট দেখিয়া বড় করিল। তার আর কৈফিয়ৎ কি দিব ? “তবে দোষের কথাটা এই যে, বড় হইলে দর বাড়ে। রাজার কৃপায় বা সমাজের কৃপায় যাঁহারা বড় হয়েন, তাঁহারা বড় হইলেও আপনার আপনার দর বাড়াইয়া বসেন। এমন কি, পলিসের জমাদার যিনি এক টাকা ঘষেই সন্তুষ্পট, ‘দারোগা হইলেই তিনি দই টাকা চাহিয়া বসেন, কেন না, বড় হইয়া তাঁহার দর বাড়িয়াছে। গরীব ইন্দিরা বলিতে পারে, আমি হঠাৎ বড় হইলাম, আমার কেন দর বাড়িবে না ? “তবে, ইন্দিরা বড় হইয়া ভাল করিয়াছে, কি মন্দ করিয়াছে, সেটা খাব সংশয়ের সন্থল। সেটার বিচার আবশ্যক বটে। ছোট, ছোট থাকিলেই ভাল। ছোট লোক বড় হইয়া কবে ভাল হইয়াছে ? কিন্তু অনেক ছোট লোকই তাহা স্বীকার করিবে না। ইন্দিরা কেন তাহা স্বীকার করিবে ? “পাঠক বোধ হয়, ইন্দিরার কলেবর বন্ধির কারণ জানিতে ইচ্ছা করিতে পারেন। তাহা বঝাইতে গেলে আপনার পস্তকের আপনি সমালোচনায় প্রবত্ত হইতে হয়। সে অবিধেয় কায্যে আমার প্রবত্তি নাই। যিনি বোদ্ধা, তিনি ছোট ইন্দিরাখানি মনঃসংযোগ দিয়া পাঠ করিলেই জানিতে পরিবেন যে, তাহাতে কি কি দোষ ছিল এবং এক্ষণে তাহা কি প্রকারে সংশোধিত হইয়াছে। প্রকৃত পক্ষে, পরাতন ܕܠ নামে এ একখানা নািতন গ্রন্থ। নািতন গ্রন্থ প্রণয়নে সকলেরই অধিকার আছে। গ্রন্থকারের ইহাই যথেস্ট সাফাই ।” OS