পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙিকম রচনাবলী হি। তবে আপনি এ অঙ্গরীয় কোথায় পাইলেন ? কেনই বা আমার নিকট সর্বামিরাপে পরিচয় দিয়া, আমাকে প্রতারিত করিয়াছিলেন ? পােরন্দরের গহে বাস করিতেছি বলিয়া কেনই বা অন্য যোগ করিতেছিলেন ? রাজা। যে দন্ডে আমি আনন্দস্বামীর অননুজ্ঞা পাইলাম, সেই দন্ডেই আমি তোমার প্রহরায় লোক নিযক্ত করিলাম। সেই দিনই আমলা দবারা তোমার নিকট হার পাঠাই। তার পর আদ্য পঞ্চম বৎসর পণ্য হইবে জানিয়া, তোমার স্বামীকে ডাকাইয়া কহিলাম, ‘তোমার বিবাহবন্ত্তান্ত আমি সমন্দিয় জানি। তোমার সেই অঙ্গরীয়টি লইয়া একাদশ দন্ড রাত্রের সময় আসিও । তোমার স্ত্রীর সহিত মিলন হইবে।” তিনি কহিলেন যে, “মহারাজের আজ্ঞা শিরোধাৰ্য্য, কিন্তু বনিতার সহিত মিলনের আমার সপহো নাই। না হইলেই ভাল হয়।” আমি কহিলাম, ‘আমার আজ্ঞা ।” তাহাতে তোমার স্বামী সন্বীকৃত হইলেন, কিন্তু কহিলেন যে, “আমার সেই বনিতা সচ্চরিত্রা কি দশচরিত্রা, তাহা আপনি জানেন। যদি দশচরিত্রা স্ত্রী গ্রহণ করিতে আজ্ঞা করেন, তবে আপনাকে অধৰ্ম্মম সপশিবে।” আমি উত্তর করিলাম, ‘অঙ্গরীয়টি দিয়া যাও। আমি তোমার স্ত্রীর চরিত্র পরীক্ষা করিয়া গ্রহণ করিতে বলিব।’ তিনি কহিলেন, “এ অঙ্গরীয় অন্যকে বিশ্ববাস করিয়া দিতাম না, কিন্তু আপনাকে অবিশ্ববাস নাই।” আমি অঙ্গরীয় লইয়া তোমার যে পরীক্ষা করিয়াছি, তাহাতে তুমি জয়ী হইয়াছ। ا হি। পরীক্ষা ত কিছই বঝিতে পারিলাম না। এমন সময়ে রাজপরে মঙ্গলসচক ঘোরতর বাদ্যোদ্যম হইয়া উঠিল । রাজা কহিলেন, “রাত্রি একাদশ দন্ড অতীত হইল—-পরীক্ষার কথা পশ্চাৎ বলিব। এক্ষণে তোমার স্বামী আসিয়াছেন ; শভলগেন তাঁর সহিত শািভদ ভিট কর।” তখন পশ্চাৎ হইতে সেই কক্ষের দাবার উদঘাটিত হইল। এক জন মহাকায় পরিষ সেই দবার পথে কক্ষমধ্যে প্রবেশ করিল। রাজা কহিলেন, “হিরণ্যময়ি, ইনিই তোমার স্বামী ।” হিরণ্যময়ী চাহিয়া দেখিলেন—তাঁহার মাথা ঘরিয়া গেল—জাগ্রৎ-স্বপেনর হইলেন। দেখিলেন, পােরন্দর! উভয়ে উভয় নিরীক্ষণ করিয়া উন্মত্তপ্রায় কেহই যেন কথা বিশবাস করিলেন না। রাজা পােরন্দরকে কহিলেন, “সহৎ, হিরন্ময়ী তোমার যোগ্য পত্নী। আদরে গহে লইয়া যাও। ইনি অদ্যাপি তোমার প্রতি পৰ্ব্বব্যাবৎ স্নেহময়ী। আমি দিবারাত্র ইহাকে প্রহরাতে রাখিয়াছিলাম, তাহাতে বিশেষ জানি যে ইনি অনন্যানরাগিণী, তোমার ইচ্ছাক্ৰমে উপহার পরীক্ষা করিয়াছি, আমি উহার স্বামী বলিয়া পরিচয় দিয ছিলাম, কিন্তু রাজ্যলোভেও হিরণ্যময়ী লব্ধ হইয়া তোমাকে ভুলেন নাই। আপনাকে হিরন্ময়ীর স্বামী বলিয়া পরিচিত করিয়া ইঙ্গিতে জানাইলাম যে, হিরণ্যময়ীকে তোমার প্রতি অসৎ প্রণয়াসন্তু বলিয়া সন্দেহ করি। যদি হিরণ্যময়ী তাহাতে দঃখিত হইত, “আমি নিন্দোষী, আমাকে গ্রহণ করােন' বলিয়া কাতর হইত, তাহা হইলে বঝিতাম যে, হিরণ্যময়ী তোমাকে ভুলিয়াছে। কিন্তু হিরণ্যময়ী তােহা না করিয়া বলিল, ‘মহারাজ, আমি কুলটা, আমাকে ত্যাগ করবেন।” হিরণ্যময়ি! তোমার তখনকার মনের ভাব আমি সকলই বঝিয়াছিলাম। তুমি অন্য স্বামীর সংসগা করিবে না বলিয়াই আপনাকে কুলটা বলিয়া পরিচয় দিয়াছিলে। এক্ষণে আশীব্বাদ করি, তোমরা সখী হও ।” হি। মহারাজ ! আমাকে আর একটি কথা বঝাইয়া দিন। ইনি সিংহলে ছিলেন, কাশীতে আমার সঙেগ পরিণয় হইল কি প্রকারে ? যদি ইনি সিংহল হইতে সে সময় আসিয়াছিলেন, তবে আমরা কেহ জানিলাম না কেন ? রাজা। আনন্দস্বামী এবং পােরন্দরের পিতায় পরামর্শ করিয়া সিংহলে লোক পাঠাইয়া ইহাকে সিংহল হইতে একেবারে কাশী লইয়া গিয়াছিলেন, পরে সেইখান হইতে ইনি পানশাচ সিংহল গিয়াছিলেন। তাম্রলিতে আসেন নাই। এই জন্য তোমরা কেহ জানিতে পার নাই। পােরন্দর কহিলেন, “মহারাজ ! আপনি যেমন আমার চিরকালের মনোরথ পণ করিলেন, জগদীশবর এমনই আপনার সকল মনোরথ পণ্য করবেন। আদ্য আমি যেমন সখী হইলাম, এমন সখী কেহ আপনার রাজ্যে কখন বাস করে নাই।” ○ ふ け