পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপন্যাস-প্রসঙগ f শধ ঐতিহাসিক আলোচনার দিক হইতেই নহে, অন্যান্য দিক হইতেও বঙ্কিমচন্দ্ৰ লিখিত ইহার চতুৰ্থ সংস্করণের বিজ্ঞাপনটি বিশেষ মাল্যবান। এজন্য এটি এখানে পর্যাপরি ऐन्क्षज्ञ् छ्छेळ्न : “রাজসিংহের পক্ব তিন সংস্করণে যে ঐতিহাসিক ঘটনাটি অবলম্বন করা হইয়াছিল, তাহা একটা অতি গরতের ঐতিহাসিক ঘটনার একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। মোগল সাম্রাজ্যের প্রধান কথা, হিন্দীদিগের সঙ্গে মোগলের বিবাদ । মোগলের নদ্বী হিন্দীদিগের মধ্যে প্রধান রাজপতি ও মহারাষ্ট্ৰীয়। মহা রাষ্ট্ৰীয়দিগের কথা সকলেই জানে। রাজপতিগণের বীৰ্য্য অধিকতর হইলেও, এদেশে তেমন সপরিচিত নহে। তাহা সপরিচিত করিবার যথার্থ উপায়, ইতিহাস। কিন্তু ইতিহাস লিখিবার পক্ষে অনেক বিঘা। প্রকৃত ঐতিহাসিক ঘটনা কি, তাহা স্থির করা দঃসাধ্য। মসলমান ইতিহাস লেখকেরা অত্যন্ত সবজাতিপক্ষপাতী ; হিন্দদেবষক। হিন্দীদিগের গৌরবের কথা প্রায় লাকাইয়া থাকেন—বিশেষতঃ মসলমানদিগের চির শত্র রাজপতিদিগের কথা। রাজপত ইতিহাসের উপর সম্পপণ্য নিভাির করা যায় না—স্বজাতিপক্ষপাত নাই, এমন নহে। মনীষী নামে একজন বিনিসীয় চিকিৎসক মোগলাদিগের সময়ে ভারতবর্ষে বাস করিয়াছিলেন। তিনিও মোগল সাম্রাজ্যেব। ইতিহাস লিখিয়া রাখিয়াছিলেন; কত্র নামা একজন পাদ্রি তাহা প্রকাশিত করিয়াছিলেন। কিন্তু এই তিন জাতীয় ইতিহাসে পরস্পরের সহিত অনৈক্য আছে। ইহাদের মধ্যে কাহার কথা সত্য, কাহার কথা মিথ্যা, তাহা মীমাংসা দঃসাধ্য। অন্ততঃ এ কায্য বিশেঘ পরিশ্রমসাপেক্ষ । “ইতিহাসের উদ্দেশ্য কখন কখন উপন্যাসে সসিদ্ধ হইতে পারে। উপন্যাস-লেখক সৰ্ব্বত্র সত্যের শওখলে বন্ধ নহেন। ইচ্ছামত অভীভট সিদ্ধিব জন্য কলপনার আশ্রয় লইতে পারেন। তবে, সকল সস্থানে উপন্যাস, ইতিহাসের আসনে বসিতে পারে না। কিন্তু এই গ্রন্থে আমার যে উদ্দেশ্য, তাহাতে এই নিষেধ বাক্য খাটে না। এক্ষণে বৰ্ব্বাইতেছি, এই উদ্দেশ্য কি। “ ‘ভারতকালওক” নামক প্রবন্ধে আমি বৰ্ব্বাইতে চেন্টা করিয়াছি, ভারতবর্ষের অধঃপতনেব কাবণ কি কি। হিন্দীদিগের বাহবিলের অভাব সে সকল কারণের মধ্যে নহে। এই উনবিংশ শতাব্দীতে হিন্দুদিগের বাহবিলের কোন চিহ্ন দেখা যায় না। ব্যায়ামের অভাবে মনতুষ্যের সববাঙগ দকবল হয়। জাতি সম্বন্ধেও সে কথা খাটে। ইংবেজ, সাম্রাজ্যে হিন্দর বাহ বল লপিত হইয়াছে। কিন্তু তাহার পকেব কখনও লপিত হয় নাই। হিন্দীদিগের বাহাবলই আমার প্রতিপাদ্য। উদাহরণ স্বরপ আমি রাজসিংহকে লইয়াছি। মহারাষ্ট্ৰীয় অপেক্ষাও রাজপত বাহবিলে বলবান ছিলেন বলিযা আমার বিশ্ববাস। তবে রাজকীয় অন্যান্য গণে তাঁহারা নিকৃষট ছিলেন। “যখন বাহবল মাত্র আমার প্রতিপাদ্য, তখন উপন্যাসেব আশ্রয় লওয়া যাইতে পারে। উপন্যাসে সে কথা পাঠকেবা হৃদয়ঙ্গম করাইতে গেলে, রাজসিংহেব পািকব পািৰবা সংস্করণে যে ক্ষদ্র ঘটনাটি অবলম্বন কবা গিয়াছিল, তদন্দ্বারা অভীষ্মন্ট সিদ্ধ হয় না। রাজসিংহের সঙ্গে মোগল বাদশাহের যে মহাযাদ্ধ হইয়াছিল, তাহা সমস্তই উপন্যাস্যভুক্ত করিতে হয়। তাহা করিতে প্রয়াস পাইয়াছি বলিয়া গ্রন্থের কলেবাব। এত বাড়িয়াছে। বিশেষতঃ উপন্যাসের ঔপন্যাসিকতা বক্ষা করিবার জন্য কলপনাপ্রসােত অনেক বিষয়ই গ্রন্থমধ্যে সন্নিবেশিত কবিতে হইয়াছে। “স্থলে ঘটনা, অর্থাৎ যাদ্ধাদির ফল, ইতিহাসে যেমন আছে, প্রায় তেমনিই রাখিয়াছি। কোন যাদ্ধ বা তাহার ফল কলপনাপ্রসন্ত নহে। তবে যন্ধের প্রকরণ, যাহা ইতিহাসে নাই, তাহা গড়িয়া দিতে হইযাছে। ঔরঙ্গজেব, রাজসিংহ, জেব-উন্নিসা, উদিপারী, ইহাবা ঐতিহাসিক ব্যক্তি। ইহাদেব চরিত্রও ইতিহাসে যোেরােপ আছে, সেইরােপ রাখা গিয়াছে। তবে তাঁহাদের সম্বন্ধে যে সকল ঘটনা লিখিত হইযাছে, সকলই ঐতিহাসিক নহে। উপন্যাসে সকল কথা ঐতিহাসিক হইবার প্রয়োজন নাই। “ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে কোনটি প্রকৃত বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে, তাহার পক্ষে বিচােব আবশ্যক। আমি সে বিচার বড় করি নাই। দই একটা উদাহরণ দিলে বঝা যাই । রািপনগরেন। রাজকন্যা সম্পবন্ধে যে সস্থল ঘটনা বিবত হইয়াছে, তাহা টডের গ্রন্থে আছে, কিন্তু অমের গ্রন্থে নাই। আমি উভয় ঘটনাই সত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছি। রন্ধ মধ্যে ঔরঙ্গজেব যে অবস্থায় পতিত হওয়ার কথা লিখিয়াছি, অম এরােপ লেখেন। কিন্তু টডের গ্রন্থে শাহজাদা সম্পবন্ধে ঐ ঘটনা ঘটিয়াছিল বলিয়া লিখিত হইয়াছে। আমি এখানে আমেরি অন্যবিত্তী হইয়াছি। এইরহপ অনেক আছে। “কথিত আছে, নিত্যগীত কেহ না করিতে পারে, এমন আদেশ ঔরঙ্গজেব প্রচার করিয়াছিলেন। তাঁহার নিজের অন্তঃপরেই সে আদেশের অবমাননা ঘটিয়াছিল, এ উপন্যাসে এই রােপ লিখিয়াছি। আমার স্থির বিশবাস, ঐতিহাসিক সত্য আমার দিকে। “ঔরঙ্গজেব নিজে মদ্য পান করিতেন না, কিন্তু ইহার পিতা ও পিতামহ, খািল্লতাত এবং সহোদর প্রভৃতি আতিশয় মদ্যপ ছিলেন। তাঁহার পৌরাঙ্গনাগণও যে মদ্যপায়িনী ছিল, তাহারও ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে। কেহ যদি এ বিষয়ে সন্দেহ করেন, তবে সে সন্দেহ ভঞ্জন করিতে প্ৰস্তুত আছি। SO