পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী 2 ov5 রজনীর কথা প্রথম পরিচ্ছেদ তোমাদের সংখদঃখ আমার সখদঃখ পরিমিত হইতে পারে না। তোমরা আর আমি ভিন্নপ্রকৃতি। আমার সখে তোমরা সখী হইতে পরিবে না—আমার দঃখ তোমরা বঝিবে না-আমি একটি ক্ষ-দ্র যাথিকার গন্ধে সখী হইব; আর ষোলকলা শশী আমার লোচনাগ্রে সহস্র নক্ষত্রমন্ডলমধ্যস্থ হইয়া বিকসিত হইলেও আমি সখী হইব না—আমার উপাখ্যান কি তোমরা মন দিয়া শনিবে ? আমি জন্মান্ধ। কি প্রকারে বঝিবে ? তোমাদের জীবন দভিটময়—আমার জীবন অন্ধকার--দঃখ, এই, আমি ইহা অন্ধকার বলিয়া জানি না। আমার এ রন্ধ নয়নে, তাই আলো! না জানি তোমাদের আলো কেমন ! তাই বলিয়া কি আমার সখ নাই ? তাহা নহে। সখি দঃখ তোমার আমার প্রায় সমান। তুমি রােপ দেখিয়া সখী, আমি শব্দ শনিয়াই সখী। দেখ, এই ক্ষদ্র ক্ষদ্র যাথিকাসকলের বািন্তগলি কত সক্ষম, আর আমার এই করস্থ সচিকাগ্রভাগ আরও কত সক্ষম! আমি এই সচিকাগ্রে সেই ক্ষদ্র পলাপবন্ত সকল বিন্ধ করিয়া মালা গাঁথি—আশৈশব মালাই গাঁথিয়াছিকেহ কখন আমার গাঁথা মালা পরিয়া বলে না যে, কাণায় মালা গাঁথিয়াছে। আমি মালাই গাঁথিতাম। বালিগঞ্জের প্রান্তভাগে আমার পিতার একখানি পক্ষেপাদ্যান জমা ছিল—তাহাই তাঁহার উপজীবিকা ছিল। ফালগন মাস হইতে যত দিন ফল ফটিত, তত দিন পৰ্যন্ত পিতা প্রত্যহ তথা হইতে পাপচয়ন করিয়া আনিয়া দিতেন, আমি মালা গাঁথিয়া দিতাম। পিতা তাহা লইয়া মহানগরীর পথে পথে বিব্রুয়া করিতেন। মাতা গাহকৰ্মম করিতেন। অবকাশমতে পিতামাতা উভয়েই আমার মালা গাঁথার সহায়তা করিতেন। ফলের সপশ বড় সন্দর—পরিতে বঝি বড় সন্দর হইবে—ঘাণে পরম সন্দর বটে। কিন্তু ফল গাঁথিয়া দিন চলে না। অন্নের বক্ষের ফল নাই। সতরাং পিতা নিতান্ত দরিদ্র ছিলেন। মজাপারে একখানি সামান্য খােপরেলের ঘরে বাস করিতেন। তাহারই এক প্রান্তে, ফলে বিছাইয়া, ফলে সত্যুপাকৃত করিয়া, ফলে ছড়াইয়া, আমি ফল গাঁথিতাম। পিতা বাহির হইয়া গেলে গান গাইতাম— 像 আমার এত সাধের প্রভাতে সই, ফািটলো নাকো কলি— ও হরি—এখনও আমার বলা হয় নাই, আমি পরিষ, কি মেয়ে ! তবে, এতক্ষণে যিনি না বঝিয়াছেন, তাঁহাকে না বলাই ভাল। আমি এখন বলিব না। পরষই হই, মেয়েই হই, অন্ধের বিবাহের বড় গোল। কাণা বলিয়া আমার বিবাহ হইল না। সেটা দভাগ্য, কি সৌভাগ্য, যে চোখের মাথা না খাইয়াছে, সেই বঝিবে। অনেক অপাঙগরঙগরঙিগণী, আমার চিরকৌমায্যের কথা শনিয়া বলিয়া গিয়াছে, “আহা, আমিও যদি কাণা হইতাম !” বিবাহ না হউক—তাতে আমার দঃখ ছিল না। আমি স্বয়ম্বারা হইয়াছিলাম। একদিন পিতার কাছে কলিকাতার বণনা শনিতেছিলাম। শানিলাম, মনমেন্ট বড় ভারি ব্যাপার। অতি উচু, আটল, আচল, ঝড়ে ভাঙ্গে না, গলায় চেন-একা একাই বাবা। মনে মনে মনমেণ্টকে বিবাহ করিলাম। আমার স্বামীর চেয়ে বড় কে ? আমি মনমেন্টমহিষী ৷ কেবল একটা বিবাহ নহে। যখন মনমেণ্টকে বিবাহ করি, তখন আমার বয়স পনের বৎসর। সতের বৎসর বয়সে, বলিতে লাভজা করে, সধবাবস্থাতেই—আর একটা বিবাহ ঘটিয়া গেল । আমাদের বাড়ীর কাছে, কালীচরণ বস নামে একজন কায়স্থ ছিল। চীনাবাজারে তাহার একখানি 8NS