পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বণ্ডিকম রচনাবলী চতুৰ্থ পরিচ্ছেদ আমি প্রতােহই ফল লইয়া যাইতাম, ছোট বােবর কথার শব্দশ্রবণ প্রায় ঘটিত না-কিন্তু কদাচিৎ দই এক দিন ঘটিত। সে আহাদের কথা বলিতে পারি না। আমার বোধ হইত, বর্ষার জলভরা মেঘ যখন ডাকিয়া বর্ষে, তখন মেঘের বঝি সেইরােপ আহাদ হয় ; আমারও সেইরাপ ডাকিতে ইচ্ছা করিত। আমি প্রত্যহ মনে করিতাম, আমি ছোট বাবকে কতকগলি বাছা। ফলের তোড়া বধিয়া দিয়া আসিবা-কিন্তু তােহা একদিনও পারিলাম না। একে লজজা করিত—আবার মনে ভাবিতম, ফলে দিলে তিনি দাম দিতে চাহিবেন।--কি বলিয়া না লইব ? মনের দঃখে ঘরে আসিয়া ফােল লইয়া ছোট বাবকেই গড়িতাম। কি গড়িতাম, তাহা জানি না-কখন দেখি নাই। এদিকে আমার যাতায়াতে একটি অচিন্তনীয় ফল ফলিতেছিল—আমি তাহার কিছই জানিতাম না। পিতা-মাতার কথোপকথনে তাহা প্রথম জানিতে পারলাম। একদিন সন্ধ্যার পর আমি মালা গাঁথিতে গাঁথিতে ঘামাইয়া পড়িয়ছিলাম। কি একটা শবেদ নিদ্ৰা ভাতিগল। জাগ্রত হইলে কণে পিতা-মাতার কথোপকথনের শব্দ প্রবেশ করিল। বোধ হয়, প্ৰদীপ নিবিয়া গিয়া থাকিবে; কেন না, পিতা-মাতা আমার নিদ্ৰাভঙ্গ জানিতে পারিলেন, এমত বোধ হইল না। আমিও আমার নাম শানিয়া কোন সাড়া শবদ করিলাম না। শনিলাম, মা বলিতেছেন, “তবে এক প্রকার সিথরই হইয়াছে ?” পিতা উত্তর করিলেন, “স্থির বৈ কি ? আমন বড় মানষে লোক, কথা দিলে কি আর নড়াচড় আছে ? আমার মেয়ের দোষের মধ্যে অন্ধ, নাহিলে আমন মেয়ে লোকে তপস্যা করিয়া পায় না।” মা। তা, পরে এত করবে। কেন ? পিতা। তুমি বঝিতে পার না যে, ওরা আমাদের মত টাকার কােণ্ডগাল নয়-হাজার দহোজাব টাকা ওরা টাকার মধ্যে ধরে না। যে দিন রজনীর সাক্ষাতে রামসদয় বাবার সত্ৰী বিবাহের কথা প্রথম পাড়িলেন, সেই দিন হইতে রজনী তাঁহার কাছে প্রত্যহ যাতায়াত আরম্ভ করিল। তিনি ছেলেকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, “টাকায় কি কাণার বিয়ে হয় ?” ইহাতে অবশ্য মেয়ের মনে আশা ভরসা হইতে পারে যে, বঝি ইনি দয়াবতী হইয়া টাকা খরচ করিয়া আমার বিবাহ দিবেন। সেই দিন হইতে রজনী নিত্য যায় আসে। সেই দিন হইতে নিত্য যাতায়াত দেখিয়া লবঙ্গ বঝিলেন যে, মেয়েটি বিবাহের জন্য বড় কাতর হয়েছে—না হবে কেন, বয়স তা হয়েছে! তাতে আবার ছোট বাব টাকা দিয়া হরনাথ বসকে রাজি করিয়াছেন। গোপালও রাজি হইয়াছে। হরনাথ বস, রামসদয় বাবার বাড়ীর সরকার। গোপাল তাহার পত্র। গোপালের কথা কিছ কিছ জানিতাম। গোপালের বয়স ত্ৰিশ বৎসর—একটি বিবাহ আছে, কিন্তু সন্তানাদি হয় নাই। গহধৰ্ম্মমাথে তাহার গহিণী আছে—সন্তানাথ অন্ধ পত্নীতে তাহার আপত্তি নাই। বিশেষ লবঙ্গ তাহাকে টাকা দিবে। পিতা-মাতার কথায় বঝিলাম, গোপালের সঙ্গে আমার সম্পৰ্ব্বন্ধ স্থির হইয়াছে।--টাকার লোভে সে কুড়ি বৎসরের মেয়েও বিবাহ করিতে প্ৰস্তুত। টাকায় জাতি কিনিবে। পিতামাতা মনে করিলেন, এ জন্মের মত অন্ধ কন্যা উদ্ধার প্রাপিত হইল। তাঁহারা আহাদ করিতে লাগিলেন। আমার মাথায় আকাশ ভাঙিগয়া পড়িল । তার পরদিন সিথর করিলাম, আর আমি লবঙ্গের কাছে। যাইব না।—মনে মনে তাহাকে শত বার পোড়ারমখী বলিয়া গালি দিলাম। লাজায় মরিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতে লাগিল। রাগে লবঙ্গকে মারিতে ইচ্ছা করিতে লাগিল। দঃখে কান্না আসিতে লাগিল। আমি লবঙ্গের কি করিয়াছি যে, সে আমার উপর এত অত্যাচার করিতে উদ্যত ? ভাবিলাম, যদি সে বড় মানয বলিয়া অত্যাচার করিয়াই সখী হয়, তবে জন্মান্ধি দঃখিনী ভিন্ন, আর কি অত্যাচার করিবার পাত্ৰ পাইল না ? মনে করিলাম—না, আর একদিন যাইব, তাহাকে এমনই করিয়া তিরস্কার করিয়া আসিব-তার পর আর যাইব না—আর ফল বেচিব না।---আর তাহার টাকা লইব না— মা যদি তাহাকে ফল দিয়া মাল্য লইয়া আসেন, তবে তাহার টাকার অন্ন ভোজন করিব নানা খাইয়া মরিতে হয়—সেও ভাল। ভাবিলাম, বলিব, বড় মানষি হইলেই কি পরপীড়ন করিতে হয় ? বলিব, আমি অন্ধ-অন্ধ বলিয়া কি দয়া হয় না ? বলিব, পথিবীতে যাহার কোন সখি 8 პა (სტ