পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী পশ্চাৎ বলিব কি না, তাহাও স্থির করিতে পারিতেছি না। সেই অবধি আমি গহত্যাগ করিলাম। সেই পৰ্যন্ত নানা দেশে ভ্ৰমণ করিয়াই বেড়াই। কোথাও সন্থায়ী হইতে পারি নাই। কোথাও সন্থায়ী হই নাই, কিন্তু মনে করিলেই স্থায়ী হইতে পারিতাম। মনে করিলে কুলীন ব্ৰাহ্মণের অপেক্ষা অধিক বিবাহ করিতে পারিতাম। আমার সব ছিল—ধন, সম্পদ, বয়স, বিদ্যা, বাহবল—কিছরই অভাব ছিল না ; আদমটদোষে, একদিনের দািব্ব দিধদোষে, সকল ত্যাগ করিয়া, আমি এই সখময় গহ--এই উদ্যানতুল্য পশুপময় সংসার ত্যাগ করিয়া, বাত্যাতাড়িত পতঙ্গের মত দেশে দেশে বেড়াইলাম। আমি মনে করিলে আমার সেই জন্মভূমিতে রম্য গহ রম্য সজায় সাজাইয়া, রঙ্গের পবনে সখের নিশান উড়াইয়া দিয়া, হাসির বাণে দঃখরাক্ষসকে বধ করিতে পারিতাম। কিন্তু— এখন তাই ভাবি, কেন করিলাম না। সখি দঃখের বিধান পরের হাতে, কিন্তু মন ত আমার। তরঙ্গে নৌকা ডুবিল বলিয়া, কেন ডুবিয়া রহিলাম—সাঁতার দিয়া ত কাল পাওয়া যায়। আর দুঃখ-দঃখ কি ? মনের অবস্থা, সে ত নিজের আয়ত্ত। সখি দঃখ, পরের হাত, না। আমার নিজের হাত ? পর কেবল বহিজগতের কত্তা—অন্তর্জগতে আমি একা কত্তা। আমার রাজ্য লইয়া আমি সখী হইতে পারি না কেন ? জড়াজগৎ, জগৎ, অন্তর্জগৎ কি জগৎ নয় ? আপনার মন লইয়া কি থাকা যায় না ? তোমার বাহ্য জগতে কয়টি সামগ্ৰী আছে, আমার অন্তরে কি বা নাই ? আমার অন্তরে যাহা আছে, তাহা তোমার বাহ্য জগৎ দেখাইবে, সাধ্য কি ? যে কুসন্ম এ মাত্তিকায় ফটে, যে বায়, এ আকাশে বয়, যে চাঁদ এ গগনে উঠে, যে সাগর এ অন্ধকারে আপনি মাতে, তোমার বাহ্য জগতে তেমন কোথায় ? তবে কেন, সেই নিশীথকালে, সােষপতা সন্দরীর সৌন্দৰ্য্যপ্ৰভা—দর হোক! একদিন নিশীথকালে—এই অসীম পথিবী সহসা আমার চক্ষে শক্তিক বন্দরীর মত ক্ষদ্র হইয়া গেল— আমি লঙ্কাইবার সােথান পাইলাম না। দেশে দেশে ফিরিলাম। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ কালের শীতল প্রলেপে সেই হৃদয়ক্ষতি ক্লামে পরিয়া উঠিতে লাগিল। কাশীধামে গোবিন্দকান্ত দত্ত নামে কোন সচ্চরিত্র, অতি প্রাচীন সম্প্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে আমার আলাপ হইল। ইনি বহনকাল হইতে কাশীবাস করিয়া আছেন। একদা তাঁহার সঙ্গে কথোপকথনকালে পলিসের অত্যাচারের কথা প্রসঙ্গক্ৰমে উত্থাপিত হইল। অনেকে পলিসের অত্যাচারঘটিত অনেকগালিন গলপ বলিলেন--দাই একটা বা সত্য, দই একটা বক্তাদিগের কপোলকলিপিত। গোবিন্দকান্ত বাবা একটি গলপ বলিলেন, তাহার সার মৰ্ম্ম এই। “হরেকৃষ্ণ দাস নামে আমাদিগের গ্রামে একঘর দরিদ্র কায়স্থ ছিল। তাহার একটি কন্যা ভিন্ন অন্য সন্তান ছিল না। তাহার গহিণীর মাতৃত্যু হইয়াছিল, এবং সে নিজেও রাগন। এজন্য সে কন্যাটি আপন শ্যালীপতিকে প্রতিপালন করিতে দিয়াছিল। তাহার কন্যাটির কতকগালিন সবৰ্ণালঙকার ছিল। লোভাবশতঃ তাহা সে শ্যালীপতিকে দেয় নাই। কিন্তু যখন মাতৃত্যু উপস্থিত। দেখিল, তখন সেই অলঙ্কারগলি সে আমাকে ডাকিয়া আমার কাছে রাখিল—বলিল যে, “আমার কন্যার জ্ঞান হইলে তাহাকে দিবেন-এখন দিলে রাজচন্দ্র ইহা আত্মসাৎ করিবে।” আমি সত্বীকৃত হইলাম। পরে হরেকৃষ্ণের মাতুত্যু হইলে সে লাওয়ারেশ মরিয়াছে বলিয়া, নন্দী ভৃঙ্গী সঙ্গে দেবাদিদেব মহাদেব দারোগা মহাশয় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হরেকৃষ্ণের ঘটনী বাটী পােতর টকনি লাওয়ারেশ মাল বলিয়া হস্তগত করিলেন। কেহ কেহ বলিল যে, হরেকৃষ্ণ লাওয়ারেশ নহে-কলিকাতায় তাহার কন্যা আছে। দারোগা মহাশয় তাহাকে কট বলিয়া আজ্ঞা করিলেন, “ওয়ারেশ থাকে, হজারে হাজির হইবে।” তখন আমার দই একজন শত্র সংযোগ মনে করিয়া বলিয়া দিল যে, গোবিন্দ দত্তের কাছে ইহার স্বর্ণালঙ্কার আছে। আমাকে তলব হইল। আমি তখন দেবাদিদেবের কাছে আসিয়া যন্ত করে দাঁড়াইলাম। কিছ গালি খাইলাম। আসামীর শ্রেণীতে চালান হইবার গতিক দেখিলাম। বলিব কি ? ঘাষাঘাষির উদ্যোগ দেখিয়া অলঙ্কারগলি, সকল দারোগা মহাশয়ের পাদপদ্মে ঢালিয়া দিলাম, তাহার উপর পঞ্চাশ টাকা নগদ দিয়া নিম্প্রকৃতি পাইলাম। (& OG