পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ ঃ অমরনাথের কথা রজনীর সম্পত্তির উদ্ধার জন্য আমার এত কস্ট সফল হইয়াছে, মিত্রেরাও নিবিববাদে বিষয় ছাড়িয়া দিয়াছে, তথাপি বিষয়ে দখল লওয়া হয় নাই, ইহা শনিয়া অনেকে চমৎকৃত হইতে পারেন। তাহাতে আমিও কিছ বিস্মিত। বিষয় আমার নহে, আমি দখল লইবার কেহ নাহি। বিষয় রজনীর, সে দখল না লইলে কে কি করিতে পারে ? কিন্তু রজনী কিছতেই বিষয়ে দখল লাইতে সক্ষমত নহে। বলে—আজি নহে—আর দই দিন যাক-পশ্চাৎ দখল লইবেন ইত্যাদি। দখল না। লিউক—কিন্তু দরিদ্রকন্যার ঐশবয্যে এত অনাসস্থা কেন, আমি অনেক ভাবিয়া চিন্তিয়া কিছই স্থির করিতে পারিতেছি না। রাজচন্দ্র এবং রাজচন্দ্রের সন্ত্রীও এ বিষয়ে রজনীকে অননুরোধ করিয়াছে, কিন্তু রজনী বিষয়ে সম্প্রতি দখল লইতে চায় না। ইহার মৰ্ম্মম কি ? কাহার জন্য এত পরিশ্রম করিলাম ? ইহার যা হয়, একটা চড়ান্ত স্থির করিবার জন্য আমি রজনীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে গেলাম। রজনীর সঙেগ আমার বিবাহের কথা উত্থাপিত হওয়া অবধি আমি আর রজনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে বড় যাইতাম না—কেন না, এখন আমাকে দেখিলে রজনী কিছ লক্তিজতা হইত। কিন্তু আজ না গেলে নয় বলিয়া রজনীর কাছে গেলাম। সে বাড়ীতে আমার অবারিত দাবার। আমি রজনীর সন্ধানে তাহার ঘরে গিয়া তাহাকে দেখিতে পাইলাম না। ফিরিয়া আসিতেছি, এমত সময়ে দেখিতে পাইলাম, রজনী আর একটি সত্ৰীলোকের সঙ্গে উপরে উঠিতেছে। সে সত্ৰীলোককে দেখিয়াই চিনিলাম—অনেক দিন দেখি নাই, কিন্তু দেখিয়াই চিনিলাম যে, ঐ গজেন্দ্ৰগামিনী ললিতলবঙ্গলতা! রজনী ইচ্ছাপাকবািক জীর্ণ বস্ত্র পরিয়াছিল, লজায় সে লবঙ্গলতার সঙ্গে ভাল করিয়া কথা কহিতেছিল না। লবঙ্গলতা হাসিতে উছলিয়া পড়িতেছিল—রাগ বা বিদ্বেষের কিছমাত্র লক্ষণ দেখা গেল না। সে হাসি অনেক দিন শনি নাই। সে হাসি তেমনই ছিল—পণিমার সমদ্রে ক্ষদ্র তরঙ্গের তুল্য, সপক্ষেপ বসন্তলতার আন্দোলন তুল্য—তাহা হইতে সখি, ভাঙ্গিয়া ভাঙিগয়া, ঝিরিয়া পডিতেছিল। আমি অবাক হইয়া নিম্পন্দশরীরে, সশঙ্কচিত্তে, এই বিচিত্ৰচরিত্রা রমণীর মানসিক শক্তির আলোচনা করিতেছিলাম। ললিতলবঙ্গলতা কিছতেই টলে না। লবঙ্গলতা মহান ঐশবষ্য হইতে দারিদ্র্যে পড়িয়াছে—তব সেই সখময় হাসি; যে রজনী হইতে এই ঘোর বিপদ ঘটিয়াছে, তাহারই গহে উঠিতেছে, তাহার সঙ্গে আলাপ করিতেছে, তব সেই সখময় হাসি। আমি সম্পম খে—তব, সেই সখময় হাসি! অথচ আমি জানি, লবঙ্গ কোন কথাই ভুলে নাই। আমি সরিয়া পাশেবার ঘরে গেলাম। লবঙ্গলতা প্রথমে সেই ঘরে প্রবেশ করিল—নিঃশঙকচিত্তে, আজ্ঞাদায়িনী রাজরাজেশবরীর ন্যায় রজনীকে বলিল, “রজনি—তুই এখন আর কোথাও যা! তোর বরের সঙ্গে আমার গোপনে কিছ কথা আছে। ভয় নাই! তোর বর সন্দর হলেও আমার বন্ধ স্বামীর অপেক্ষা সন্দির নহে।” রজনী অপ্রতিভ হইয়া, কি ভাবিতে ভাবিতে সরিয়া গেল । ললিতলবঙ্গলতা ভ্ৰকুটি কুটিল করিয়া, সেই মধর হাসি হাসিয়া, ইন্দ্রাণীর মত আমার সম্মখে দাঁড়াইল। একবার বৈ কৈহ অমরনাথকে আত্মবিস্মত দেখে নাই। আবার আত্মবিস্মত হইলাম। সেবারও ললিতলবঙ্গলতী—এবার ললিত লবঙ্গলতা। লবঙ্গ হাসিয়া বলিল, “আমার মািখপানে চাহিয়া কি দেখিতেছি ? তোমার আভিজাত ঐশবষ্য কাড়িয়া লইতে আসিয়াছি কি না ? মনে করিলে তাহা পারি।” আমি বলিলাম, “তুমি সব পাের, কিন্তু ঐটি পার না। পারিলে কখন রজনীকে বিষয় দিয়া, এখন স্বহস্তে রাঁধিয়া সতীনকে খাওয়াইবার বন্দোবস্ত করিতে না।” লবঙ্গ উচ্চ হাসি হাসিয়া বলিল, “ওটা বঝি বড় গায়ে লাগিবে মনে করেছ ? সতীনকে রাঁধিয়া দিতে হয়, বড় দঃখের কথা বটে ; কিন্তু একটা পাহারাওয়ালাকে ডাকিয়া তোমাকে ধরাইয়া দিলে, এখনই আবার পাঁচটা রাঁধনি রাখিতে পারি।” Ct RGk