পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दक झष्नाबव्ी কথোপকথন করিতে লাগিলেন। তৎপরে প্রণাম করিবার জন্য আমি তাঁহাকে ডাকিয়া পাঠাইলাম । প্ৰণাম করিয়া, মগুগল জিজ্ঞাসার পর বলিলাম, “মহাশয় সৰ্ব্ববজ্ঞা; না জানেন, এমন তত্ত্বই নাই । শচীন্দ্রের কি রোগ আপনি অবশ্য জানেন।” তিনি বলিলেন, “উহা বায়রোগ। অতি দশিচকিৎস্য।” আমি বলিলাম, “তবে শচীন্দ্র সব্বদা রজনীর নাম করে কেন ?” সন্ন্যাসী বলিলেন, “তুমি বালিকা, বঝিবে কি—“” (কি সৰ্ব্বনাশ, আমি বালিকা। আমি শচীর মা !) “এই রোগের এক গতি এই যে, হৃদয়স্থ লক্কায়িত এবং অপরিচিত ভাব বা প্রবত্তি সকল প্রকাশিত হইয়া পড়ে, এবং অত্যন্ত বলবান হইয়া উঠে। শচীন্দ্ৰ কদাচিৎ। আমাদিগেব দৈববিদ্যা সকলের পরীক্ষাথী হইলে, আমি কোন তান্ত্রিক অনন্ঠান করিলাম, তাহাতে যে তাঁহাকে আন্তরিক ভালবাসে, তিনি তাহাকে স্বপেন দেখিবেন। শচীন্দ্র রাত্ৰিযোগে রজনীকে সাবপেন দেখিলেন। স্বাভাবিক নিয়ম এই যে, যে আমাদিগকে ভালবাসে বঝিতে পারি, আমরা তাহার প্রতি অন্যরক্ত হই। অতএব সেই রাত্রে শচীন্দ্রের মনে রজনীর প্রতি অন্যরাগের বীজ গোপনে সমারোপিত হইল। কিন্তু রজনী অন্ধ, এবং ইতর লোকের কন্যা, ইত্যাদি কারণে সে অন্যরাগ পরিসফট হইতে পারে নাই। অন্যরাগের লক্ষণ সবহৃদয়ে কিছ দেখিতে পাইলেও শচীন্দ্র তৎপ্রতি বিশ্ববাস করেন নাই। ক্ৰমে ঘোরতর দারিদ্র্যাদঃখের • আশঙ্কা তোমাদিগকে পীড়িত করিতে লাগিল। সব্বাপেক্ষা শচীন্দ্রই তাহাতে গরতের ব্যথা পাইলেন। অন্যমনে, দারিদ্র্যাদঃখ ভুলিবার জন্য শচীন্দ্ৰ অধ্যয়নে মন দিলেন। অনন্যমনা হইয়া বিদ্যালোচনা করিতে লাগিলেন। সেই বিদ্যালোচনার আধিক্য হেতু, চিত্ত উদভ্ৰান্ত হইয়া উঠিল। তাহাতে এই মানসিক রোগের সন্টি। সেই মানসিক রোগকে অবলম্বন করিয়া রজনীর প্রতি সেই বিলপতিপ্রায় অন্যরাগ পানঃপ্রস্ফটিত হইল। এখন আর শচীন্দ্রের সে মানসিক শক্তি ছিল না যে, তদদ্বারা তিনি সেই অবিহিত অন্যরাগকে প্রশমিত করেন। বিশেষ, পকেবই বলিয়াছি যে, এই সকল মানসিক পীড়ার কারণ যে যে গপত মানসিক ভাব বিকশিত হয়, তাহা অপ্রকৃত হইয়া উঠে। তখন তাহা বিকারের সবরােপ প্রতীয়মান হয়। শচীন্দ্রের সেইরােপ এ বিকার।” আমি তখন কাতর হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম যে, “ইহার প্রতীকারের কি উপায় হইবে ?” , সন্ন্যাসী বলিলেন, “আমি ডাক্তারি শাস্ত্রের কিছই জানি না। ডাক্তারদিগের দ্বারা এ রোগ উপশম হইতে পারে কি না, তাহা বিশেষ বলিতে পারি না। কিন্তু ডাক্তারেরা কখন এ সকল রোগের প্রতীকার করিয়াছেন, এমন আমি শনি নাই।” আমি বলিলাম যে, ”অনেক ডাক্তার দেখান হইয়াছে, কোন উপকার হয় নাই।” স। সচরাচর বৈদ্যচিকিৎসকের দবারাও কোনও উপকার হইবে না। আমি । তবে কি কোন উপায় নাই ? স। যদি বল, তবে আমি ঔষধ দিই। ડે আপনার ঔষধের অপেক্ষা কাহার ঔষধ ? আপনিই আমাদের রক্ষাকত্তা। আপনিই | | স। তুমি বাড়ীর গহিণী। তুমি বলিলেই ঔষধ দিতে পারি। শচীন্দ্ৰও তোমার বাধ্য। তুমি বলিলেই সে আমার ঔষধ সেবন করিবে। কিন্তু কেবল ঔষধে আরোগ্য হইবে না। মানসিক পীড়ার মানসিক চিকিৎসা চাই। রজনীকে চাই। আমি । রজনী আসিবে। ডাকিয়া পাঠাইয়াছি। স। কিন্তু রজনীর আগমনে ভাল হইবে, কি মন্দ হইবে, তাহাও বিবেচ্য। এমত হইতে পারে যে, রজনীর প্রতি এই অপ্রকৃত অন্যরাগ, রাগনাবস্থায় দেখা সাক্ষাৎ হইলে বন্ধমলে হইয়া স্থায়িত্ব প্রাপিত হইবে। যদি রজনীর সঙ্গে বিবাহ না হয় তবে রজনী না আসাই ভাল। আমি। রজনীর আসা ভাল হউক, মন্দ হউক, তাহা বিচার করিবার আর সময় নাই । ঐ দেখান, রজনী আসিতেছে। সেই সময়ে একজন পরিচারিকা সঙ্গে রজনী আসিয়া উপস্থিত হইল। অমরনাথও শচীন্দ্রের পীড়া শনিয়া সম্বয়ং শচীন্দ্রকে দেখিতে আসিয়াছিলেন। এবং রজনীকে সঙ্গে আনিয়া উপস্থিত করিয়াছিলেন। আপনি বহিববাটীতে থাকিয়া, পরিচারিকার সঙ্গে তাহাকে অন্তঃপরে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। C:\OR