পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दक ब्रष्नाबव्ी বিংশতিতম পরিচ্ছেদ কিছ ভাল লাগে না-ভ্রমর একা। ভ্রমর শয্যা তুলিয়া ফেলিল—বড় নরম,-খাটের পাখা খালিয়া ফেলিল-বাতাস বড় গরম ; চাকরাণী দিগকে ফল আনিতে বারণ করিল—ফলে বড় পোকা। তাসখেলা বন্ধ করিল—সহচরীগণ জিজ্ঞাসা করিলে বলিত, তাস খেলিলে শাশড়ী রাগ করেন। সচ, সীতা, উল, পেটাণ,-—সব একে একে পাড়ার মেয়েদের বিলাইয়া দিল— জিজ্ঞাসা করিলে বলিল যে, বড় চোখ জবালা করে। বস্ত্ৰ মলিন কেন, কেহ জিজ্ঞাসা করিলে, ধোপাকে গালি পাড়ে, অথচ ধৌত বস্ত্ৰে গহ পরিপািণ । মাথায় চুলের সঙ্গে চিরনির সম্পক রহিত হইয়া আসিয়াছিল--উল-বনের খড়ের মত চুল বাতাসে দলিত, জিজ্ঞাসা করিলে ভ্ৰমর হাসিয়া, চুলগালি হাত দিয়া টানিয়া খোঁপায় গজিত—ঐ পয্যন্ত । আহারাদির সময় ভ্ৰমর নিত্য বাহানা করিতে আরম্ভ করিল—“আমি খাইব না, আমার জবর হইয়াছে।” শাশড়ী কবিরাজ দেখাইয়া, পাঁচন ও বাড়ির ব্যবস্থা করিয়া, ক্ষীরোদার প্রতি ভার দিলেন যে, “বোমাকে ঔষধগলি খাওয়াইবি।” বৌমা ক্ষীরির হাত হইতে বাড়ি পাঁচন কাড়িয়া লইয়া, জানেলা গলাইয়া ফেলিয়া দিল । ক্ৰমে ক্ৰমে এতটা বাড়াবাড়ি ক্ষীবি চাকরাণীর চক্ষে অসহ্য হইয়া উঠিল। ক্ষীরি বলিল, “ভাল, বউ ঠাকুরাণি, কার জন্য তুমি অমন করা ?—যাঁর জন্য তুমি আহার নিদ্রা ত্যাগ করিলে, তিনি কি তোমার কথা এক দিনের জন্য ভাবেন ? তুমি মরতেছ। কোদে কেটে, আর তিনি হয়ত হকার নল মাখে দিয়া, চক্ষ বজিয়া রোহিণী ঠাকুরাণীকে ধ্যান করিতেছেন।” ভ্রমর ক্ষীরিকে ঠাস করিয়া এক চড় মারিল। ভ্রমরের হাত বিলক্ষণ চলিত। প্রায় কাঁদ কাঁদ হইয়া বলিল, “তুই যা ইচ্ছা তাই বকিবি ত আমার কাছ থেকে উঠিয়া যা।” ক্ষীরি বলিল, “তা চড় চাপড় মারিলেই কি লোকের মািখ চাপা থাকিবে ? তুমি রাগ করিবে বলিয়া আমরা ভয়ে কিছ: বলিব না। কিন্তু না বলিলেও বাঁচি না। পাঁচি চাঁড়ালিনীকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ দেখি,-—সে দিন অত রাত্রে রোহিণী, বাবার বাগান হইতে আসিতেছিল কি না ? “ ক্ষীরোদার কপাল মন্দ, তাই এমন কথা সকাল বেলা ভ্ৰমরের কাছে বলিল। ভ্ৰমর উঠিয়া দাঁড়াইয়া ক্ষীরোদাকে চড়ের উপর চড় মারিল, কিলের উপর কিল মারিল, তাহাকে ঠেলা মারিয়া ফেলিয়া দিল, তাহার চুল ধরিয়া টানিল। শেষে আপনি কাঁদিতে লাগিল । ক্ষীরোদা, মধ্যে মধ্যে ভ্রমরের কাছে চড়াটা চাপড়টা খাইত, কখনও রাগ করিত না ; কিন্তু আজি কিছর বাড়াবাড়ি, আজ একটি রাগিল। বলিল, “তা ঠাকুরােণ, আমাদের মারিলে ধরিলে কি হইবে-তোমারই জন্য আমরা বলি। তোমাদের কথা লইয়া লোকে একটা হৈ হৈ করে, আমরা তা সইতে পারি না। তা আমার কথা বিশ্ববাস না হয়, তুমি পাঁচিকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা কর । ” ভ্রমর, ক্ৰোধে দঃখে কাঁদিতে কাঁদিতে বলিতে লাগিল, “তোর জিজ্ঞাসা করিতে হয় তুই করগে—আমি কি তোদের মত ছাঁচো পাজী যে, আমার স্বামীর কথা পাঁচ চাঁড়ালিনীকে জিজ্ঞাসা করিতে যাইব ? তুই এত বড় কথা আমাকে বলিস ! ঠাকুরাণীকে বলিয়া আমি ঝাঁটা মেরে তোকে দরে করিয়া দিব। তুই আমার সম্পমখ হইতে দরি হইয়া যা।” তখন সকাল বেলা উত্তম মধ্যম ভোজন করিয়া ক্ষীরোদা ওরফে ক্ষীরি চাকরাণী রাগে গর গর করিতে করিতে চলিয়া গেল। এ দিকে ভ্রমর উদ্ধাবমখে সজলনয়নে, যন্ত করে, মনে মনে গোবিন্দলালকে ডাকিয়া বলিতে লাগিল, “হে গারো! শিক্ষক, ধৰ্ম্মমাজ্ঞ, আমার একমাত্র সত্যস্বরপ! তুমি কি সে দিন এই কথা আমার কাছে গোপন করিয়াছিলে!” তার মনের ভিতর যে মন, হৃদয়ে যে লক্কায়িত স্থান কেহ কখনও দেখিতে পায় না— যেখানে আত্মপ্রতারণা নাই, সেখােন পৰ্যন্ত ভ্রমর দেখিলেন, স্বামীর প্রতি অবিশ্ববাস নাই। অবিশ্ববাস হয় না। ভ্রমর কেবল একবার মাত্ৰ মনে ভাবিলেন যে, “তিনি অবিশ্ববাসী হইলেই বা এমন দঃখ কি ? আমি মরিলেই সব ফরাইবে।” হিন্দীর মেয়ে, মরা বড় সহজ মনে করে। ○ Wり げ