পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७दश झान्नाव्ली মাধবীনাথ তাঁহার সঙেগ কথা কহিলেন না-মাধবীনাথ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন যে, ইহ জন্মে। আর গোবিন্দলালের সঙ্গে কথা কহিবেন না। বিনাবাক্যে মাধবীনাথ চলিয়া গেলেন । গোবিন্দলাল গহ হইতে নিম্প্রকান্ত হইয়া ভ্ৰমরের শয্যাগােহ তলস্থ সেই পক্ষেপাদ্যানে গেলেন। যামিনী যথার্থই বলিয়াছেন, সেখানে আর পক্ষেপাদ্যান নাই। সকলই ঘাস খড় ও জঙ্গলে পরিয়া গিয়াছে—দই একটি অমর পশুপব্যক্ষ সেই জঙ্গলের মধ্যে অন্ধমতবৎ আছে—কিন্তু তাহাতে আর ফল ফটে না। গোবিন্দলাল অনেকক্ষণ সেই খড়বনের মধ্যে বেড়াইলেন। অনেক বেলা হইল—রৌদ্রের অত্যন্ত তেজঃ হইল-— গোবিন্দলাল বেড়াইয়া বেড়াইয়া শ্রান্ত হইয়া শেষে নিৰ্ভক্রান্ত হইলেন। তথা হইতে গোবিন্দলাল কাহারও সঙ্গে বাক্যালাপ না করিয়া, কাহারও মািখপানে না চাহিয়া বারণী-পঙ্করিণী-তটে গেলেন। বেলা দেড় প্রহর হইয়াছে। তীব্র রৌদ্রের তেজে বারণীর গভীর কৃষ্ণোঙ্গজেবল বারিরাশি জীবলিতেছিল—স্ত্ৰী পরিষ বহসংখ্যক লোক ঘাটে স্নান করিতেছিল—ছেলেরা কালো জলে সফটিক চৰণ করিতে করিতে সাঁতার দিতেছিল। গোবিন্দলালের তত লোকসমাগম ভাল লাগিল না। ঘাট হইতে যেখানে বারণ নীতীরে, তাঁহার সেই নানাপশুপরিঞ্জিত নন্দনতুল্য পক্ষেপাদ্যান ছিল, গোবিন্দলাল সেই দিকে গেলেন। প্রথমেই দেখিলেন, রেলিং ভাঙিগয়া গিয়াছে--সেই লৌহনিমিত বিচিত্র দবারের পরিবত্তে কণি8র বেড়া। ভ্রমর গোবিন্দলালের জন্য সকল সম্পত্তি যত্নে রক্ষা করিয়াছিলেন, কিন্তু এ উদ্যানের প্রতি কিছমাত্র যত্ন করেন নাই। একদিন যামিনী সে বাগানের কথা বলিয়াছিলেন—ভ্রমর বলিয়াছিল, “আমি যমের বাড়ী চলিলাম-আমার সে নন্দনকাননও ধবংস হউক। দিদি, পথিবীতে যা আমার সবগ ছিল—তা আর কাহাকে দিয়া যাইব ?” গোবিন্দলাল দেখিলেন, ফটক নাই—রোলিং পড়িয়া গিয়াছে। প্রবেশ করিয়া দেখিলেন— ফলগাছ নাই— কেবল উলবেন, আর কচুগাছ, ঘোট, ফলের গাছ, কালকাসিন্দা গাছে বাগান পরিপািণ । লতামন্ডপ সকল ভাঙ্গিয়া পড়িয়া গিয়াছে---প্রস্তরমতি সকল দই তিন খন্ডে বিভক্ত হইয়া ভুমে গডোগড়ি যাইতেছে—তাহার উপর লতা সকল ব্যাপিয়াছে, কোনটা বা ভপনাবস্থায় দণডায়মান আছে। প্রমোদ ভবনের ছাদ ভাঙিগয়া গিয়াছে; ঝিলমিল শাসি কে ভাঙিগয়া লইয়া গিয়াছে—মক্ষমরপ্রস্তর সকল কে হম্মমতল হইতে খালিয়া তুলিয়া লইয়া গিয়াছে — সে বাগানে আর ফল ফটে না—ফল ফলে না—বঝি সবাতাসও আর বয় না। একটা ভগন প্রস্তরমতির পদতলে গোবিন্দলাল বসিলেন। ক্লামে মধ্যাহাকাল উপস্থিত হইল, গোবিন্দলাল সেইখানে বসিয়া রহিলেন। প্রচন্ড সােয্যতেজে তাঁহার মস্তক উত্তপত হইয়া উঠিল। কিন্তু গোবিন্দলাল কিছই অনভব করিলেন না। তাঁহার প্রাণ যায়। রাত্রি অবধি কেবল ভ্ৰমর ও রোহিণী ভাবিতেছিলেন। একবার ভ্রমর, তার পর রোহিণী, আবার ভ্রমর, আবার রোহিণী । ভাবিতে ভাবিতে চক্ষে ভ্রমরকে দেখিতে লাগিলেন, সম্মখে রোহিণীকে দেখিতে লাগিলেন। জগৎ ভ্রমর-রোহিণীময় হইয়া উঠিল। সেই উদ্যানে বসিয়া প্রত্যেক বক্ষকে ভ্ৰমর বলিয়া ভ্ৰম হইতে লাগিল-প্রত্যেক বক্ষচ্ছায়ায় রোহিণী বসিয়া আছে দেখিতে লাগিলেন। এই ভ্ৰমর দাঁড়াইয়াছিল—আর নাই--এই রোহিণী আসিল, আবার কোথায় গেল ? প্রতি শবেদ ভ্ৰমর বা রোহিণীর কন্ঠ শনিতে লাগিলেন। ঘাটে সমানকারীরা কথা কহিতেছে, তাহাতে কখনও বোধ হইল ভ্রমর কথা কহিতেছে-কখনও বোধ হইতে লাগিল রোহিণী কথা কহিতেছে-কখনও বোধ হইল। তাহারা দই জনে কথোপকথন করিতেছে। শম্ভক পত্র নড়িতেছে—বোধ হইল ভ্ৰমর আসিতেছে-বনমধ্যে বন্য কীটপতঙগ নড়িতেছে—বোধ হইল রোহিণী পলাইতেছে। বাতাসে শাখা দলিতেছে—বোধ হইল ভ্রমর নিশবাস ত্যাগ করিতেছে—দায়েল ডাকিলে বোধ হইল। রোহিণী গান করিতেছে । জগৎ ভ্ৰমর-রোহিণীময় হইল। বেলা দই প্রহর—আড়াই প্রহর হইল-গোবিন্দলাল সেইখানে—সেই ভগনপত্তলপদতলে— সেই ভ্ৰমর-রোহিণীময় জগতে। বেলা তিন প্রহর, সান্ধ তিন প্রহর হইল-অস্নাত অনাহারী গোবিন্দলাল সেইখানে, সেই ভ্ৰমর-রোহিণীময় জগতে-ভ্ৰমর-রোহিণীময় অনলকুন্ডে। সন্ধ্যা হইল, তথাপি গোবিন্দলালের উত্থান নাই—চৈতন্য নাই। তাঁহার পৌরজনে তাঁহাকে সমস্ত দিন না দেখিয়া মনে করিয়াছিল, তিনি কলিকাতায় চলিয়া গিয়াছেন, সতরাং তাঁহার অধিক সন্ধান Vy O8