পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ চঞ্চল। রাজারা বহশত মহিষী কর্তৃক পরিবােত থাকিয়াও রাজকায্যে অমনোযোগী হয়েন না। আমার ন্যায় বালিকার প্রণয়ে মহারাণা রাজসিংহের রাজকায্যে বিরাগ জন্মিবে, ইহা অতি অশ্রদর্ধার কথা । রাজসিংহ। কথা তত আশ্রদ্ধেয় নহে। শাস্ত্রে বলে, “বন্ধস্য তরণী বিষম।।” চঞ্চল। মহারাজ কি বদ্ধ ? রাজ। যােবা নাহি। চঞ্চল। যাহার বাহতে বল আছে, রাজপত্যকন্যার কাছে সেই যাবা। দািববলৈ যাবাকে রাজপত্যকন্যাগণ ব্যুদ্ধের মধ্যে গণ্য করেন। রাজ। আমি সরাপ নাহি। চঞ্চল। কীৰ্ত্তিই রাজাদিগের রােপ। রাজ্য। রপবান, বলবান, যােবা। রাজপত্রের অভাব নাই। চঞ্চল। আমি আপনাকে আত্মসমপণ করিয়াছি। অন্যের পত্নী হইলে দিবচারিণী হইব। আমি অত্যন্ত নিলজের মত কথা বলিতেছি। কিন্তু মনে করিয়া দেখিবেন, দশমন্ত কর্তৃক পরিত্যক্ত হইলে, শকুন্তলা লজা ত্যাগ করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। আমারও আজ প্রায় সেই দশা। আপনি আমায় পরিত্যাগ করিলে আমি রাজসমন্দিরে* ডুবিয়া মরিব । রাজসিংহ বাক যন্ধে এইরহপ পরাভব প্রাপিত হইলে বলিলেন, “তুমিই আমার উপযক্তি মহিষী। তবে তুমি কেবল বিপদে পড়িয়া আমাকে পতিত্বে বরণ করিয়াছিলো; এক্ষণে আমার হাত হইতে উদ্ধারের ইচ্ছা রাখা কি না, আমার এই বয়সে তুমি আমাতে অন্যরাগিণী হইতে পরিবে: কি না, আমার মনে এই সকল সংশয় ছিল। সে সকল সংশয় আজিকার কথাবাৰ্ত্তীয় দরি হইয়াছে। তুমি আমার মহিষী হইবে। তবে একটা কথার অপেক্ষা করিতে চাই। তোমার পিতার মত হইবে কি ? তাঁহার অমতে আমি বিবাহ করিতে চাহি না। তাহার কারণ, যদিও তোমার পিতার ক্ষদ্র রাজ্য এবং তাঁহার সৈন্য অলপ, কিন্তু বিক্রম সোলাঙিক যে একজন বীরপরিষ এবং উপযক্তি সেনানায়ক, ইহা প্ৰসিদ্ধ। মোগলের সঙ্গে আমার যন্ধ বাধিবেই বাধিবে। বাধিলে, তাঁহার সাহায্য আমার পক্ষে বিশেষ মঙ্গলজনক হইবে। তাঁহার অনমতি লইয়া বিবাহ না করিলে তিনি কখনও আমার সহায় হইবেন না। বরং তাঁর অমতে বিবাহ করিলে তিনি মোগলের সহায় এবং আমার শত্ৰ হইতে পারেন। তাহা বাঞ্ছনীয় নহে, অতএব আমার ইচ্ছা, তাঁহাকে পত্ৰ লিখিয়া, তাঁহার সম্পমতি আনাইয়া তোমাকে বিবাহ করি। তিনি সম্মত হইবেন কি ?” চঞ্চল। না হইবার ত কোন কারণ দেখি না। আমার ইচ্ছা, পিতা-মাতার আশীৰ্ব্ববাদ লইয়াই আপনার চরণসেবাৱত গ্রহণ করি। লোক পাঠান আমারও ইচ্ছা। তখন রাজসিংহ একখানি সবিনয় পত্র লিখিয়া, বিক্ৰম সোলাণ্ডিকর নিকট দতে প্রেরণ করিলেন। চঞ্চলকুমারীও মাতার আশীৰ্ব্ববাদ কামনা করিয়া একখানা পত্র লিখিলেন। তৃতীয় পরিচ্ছেদ ঃ অগিন জবালিবার প্রয়োজন রপনগরের অধিপতির উত্তর উপযন্ত সময়ে পৌছিল। উত্তর বড় ভয়ানক। তাহার মৰ্ম্ম এই:-রাজসিংহকে তিনি লিখিতেছেন, “আপনি রাজপতনার মধ্যে সব্বপ্রধান। রাজপতনার মাকুটস্যুবরােপ। এক্ষণে আপনি রাজপতের নামে কলঙক দিতে প্ৰস্তুত। আপনি বলপ বর্বক আমার অপমান করিয়া, আমার কন্যাকে হরণ করিয়াছেন। আমার কন্যা পথিবীশবরী হইত, আপনি তাহাতে বাদ সাধিয়াছেন। আপনাবও শত্রতা করা আমার কৰ্ত্তব্য। আমার সম্পমতিক্ৰমে আপনি আমার কন্যার পাণিগ্রহণ করিতে পরিবেন না। “আপনি বলিতে পারেন, সেকালে ক্ষত্ৰিয়বীরেরা কন্যা হরণ করিয়া বিবাহ করিতেন। ভীস্ম, অৰ্ন্তজািন, স্বয়ং শ্ৰীকৃষ্ণ কন্যাহরণ করিয়াছিলেন। কিন্তু আপনার সে বলবনীয্য কই ? আপনার বাহতে যদি বল আছে, তবে হিন্দ স্থানে মোগল বাদশাহ কেন ? শগাল হইয়া সিংহের অন্যাকরণ করা কত্তব্য নহে। আমিও রাজপতি, মসলমানকে কন্যা দান করিলে আমার গৌরব

  • রাজসিংহের নিৰ্ম্মিত সরোবর।

V VN