পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उआनन्लार्छ সিপাহী গাড়ির গোেরর দড়ি দিয়া মহেন্দ্রকে হাতে-পায়ে বাঁধিয়া গোেরর গাড়িতে তুলিল। মহেন্দ্ৰ দেখিলেন, এত লোকের সঙ্গে জোর করা ব্যথা, জোর করিয়া মন্তিলাভ করিয়াই বা কি হইবে ? সন্ত্রী-কন্যার শোকে তখন মহেন্দ্ৰ কাতর, বাঁচিবার কোন ইচ্ছা ছিল না। সিপাহীরা মহেন্দ্রকে উত্তম করিয়া গাড়ির চাকার সঙেগ বাঁধিল । পরে সিপাহীরা খাজনা লইয়া যেমন চলিতেছিল, তেমনি মদগম্ভীরাপদে চলিল। অভটম পরিচ্ছেদ ব্ৰহ্মচারীর আজ্ঞা পাইয়া ভবানন্দ মদ, মদ, হরিনাম করিতে করিতে, যে চাটীতে মহেন্দ্র বসিয়াছিল, সেই চাটনীর দিকে চলিলেন। সেইখানেই মহেন্দ্রেব সন্ধান পাওয়া সম্পভব বিবেচনা করিলেন। সে সময়ে ইংরেজের কৃত আধনিক রাস্তাসকল ছিল না। নগর সকল হইতে কলিকাতায় আসিতে হইলে, মসলমান সম্রাট নিশ্চিমত অপব্ব বস্ত্ৰ দিয়া আসিতে হইত। মহেন্দ্রও পদচিহ্ন হইতে নগর যাইতে দক্ষিণ হইতে উত্তর দিকে যাইতেছিলেন। এই জন্য পথে সিপাহীদিগের সঙ্গে তাঁহার সাক্ষাৎ হইয়াছিল। ভবানন্দ তালপাহাড় হইতে যে চাটনীর দিকে চলিলেন, সেও দক্ষিণ হইতে উত্তর। যাইতে যাইতে কাজে কাজেই অচিরাং ধনরক্ষাকারী সিপাহীদিগের সহিত সাক্ষাৎ হইল। তিনিও মহেন্দ্রের ন্যায় সিপাহীদিগকে পাশ দিলেন। একে সিপাহীদিগের সহজেই বিশ্ববাস ছিল যে, এই চালান লািঠ করিবার জন্য ডাকাই তেরা অবশ্য চেন্টা করিবে, তাতে আবার পথিমধ্যে এক জন ডাকাইতকে গ্রেপতার করিয়াছে। কাজে কাজেই ভবানন্দকে আবার রাত্রিকালে পাশ দিতে দেখিয়াই তাহাদিগের বিশ্ববাস হইল যে, এও আর একজন ডাকাত। অতএব তৎক্ষণাৎ সিপাহীরা তাঁহাকেও ধন্ত করিল। ভবানন্দ মদ হাসিয়া বলিলেন, “কেন বাপ ?” সিপাহী বলিল, “তোমাৰ শালা ডাকু হে৷” ভবা। “দেখিতে পাইতেছ, গেরিয়াবাসন পরা ব্রহ্মচারী আমি, ডাকাত কি এই রকম ?” সিপাহী। অনেক শালা ব্ৰহ্মচারী সন্ন্যাসী ডাকাতি করে। এই বলিয়া সিপাহী ভবানন্দের গলাধাক্কা দিয়া, টানিয়া আনিল। ভবানন্দের চক্ষ সে অন্ধকারে জবলিয়া উঠিল। কিন্তু তিনি আর কিছ না বলিয়া অতি বিনীতভাবে বলিলেন, “প্ৰভু, কি করিতে হইবে আজ্ঞা করবেন।” সিপাহী ভবানন্দের বিনযে সন্তুষ্ট হইয়া বলিল, “লেও শালা, মাথে পব একঠো মোট লোও ৷ ” এই বলিয়া সিপাহী ভবানন্দের মাথার উপর একটা তলিপ চাপাইয়া দিল। তখন আর এক জন সিপাহী তাহাকে বলিল, “না; পলাবে। আর এক শালাকে যেখানে বেধে রেখেছি, এ শালাকেও গাড়ির উপর সেইখানে বেধে রাখা।” ভবানন্দের তখন কৌতহল হইল যে, কাহাকে বধিয়া রাখিয়াছে দেখিব। তখন ভবানন্দ মাথার তলিপ ফেলিয়া দিয়া, যে সিপাহী তলিপি মাথায় তুলিয়া দিয়াছিল, তাহার গালে এক চড় মারিলেন। সতরাং সিপাহী ভবানন্দকেও বাঁধিয়া গাড়ির উপর তুলিয়া মহেন্দ্রের নিকট ফেলিল। ভবানন্দ চিনিলেন যে, মহেন্দ্ৰ সিংহ। সিপাহীরা পনরায় অন্যমনস্কে কোলাহল করিতে করিতে চলিল, আর গোেরর গাড়ির চাকার কচকচী শবদ হইতে লাগিল। তখন ভবানন্দ ধীরে ধীরে কেবল মহেন্দ্র মাত্ৰ শনিতে পায়, এইরােপ স্বরে বলিলেন, “মহেন্দ্ৰ সিংহ, আমি তোমায় চিনি, তোমার সাহায্যের জন্যই আমি এখানে আসিয়াছি। কে আমি, তাহা এখন তোমার শনিবার প্রয়োজন নাই। আমি যাহা বলি, সাবধানে তাহ কর । তোমার হাতের বাঁধনটা গাড়ির চাকার উপর রােখ।” মহেন্দ্ৰ বিসিমত হইলেন। কিন্তু বিনা বাক্যব্যয়ে ভবানন্দের কথামত কাজ করিলেন । অন্ধকারে গাড়ির চাকার নিকট একটি খানি সরিয়া গিয়া, হস্তবন্ধনরজিজ, চাকায় সপশ করাইয়া রাখিলেন। চাকার ঘষণে ক্ৰমে দড়িটা কাটিয়া গেল। তার পর পায়ের দাঁড়ি ঐরাপ করিয়া কাটিলেন। এইরপে বন্ধন হইতে মক্ত হইয়া ভবানন্দের পরামশে নিশ্চেন্ট হইয়া গাড়ির উপরে পড়িয়া রহিলেন। ভবানন্দও সেইরাপ করিয়া বন্ধন ছিন্ন করিলেন। উভয়ে নিস্তবধ । যেখানে সেই জঙ্গলের কাছে রাজপথে দাঁড়াইয়া, ব্রহ্মচারী চারি দিক নিরীক্ষণ কুরিয়াছিলেন, GA NRO