পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী ব্ৰহ্ম। কাল নাইতে গিয়ে রানায় বসে কি, ভাই, ভাবছিলি ? চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। কেন ? ব্রজ। ভাবছিলাম যে, সনান করেই তোমার রান্না খেতে হবে। সেই দঃখে চোখে জল ७q6ञ्नीछन । ব্ৰহ্ম। সাগর এসে রোধে দিবে? তা হলে খেতে পারাবি ত ? ব্রজ। কেন, সাগর ত রোজ রাঁধিত ? খেয়া-ঘরে যাও নি কোনও দিন ? ধলো-চড়চড়ি, কাদার সক্তি, ইটের ঘণ্ট—এক দিন। আপনি খেয়ে দেখ না ? তার পর আমায় খেতে ব'লো। ব্ৰহ্ম। প্রফতুল্ল এসে রোধে দিবে ? যেমন পথে কেহ প্ৰদীপ লইয়া যখন চলিয়া যায়, তখন পথিপােশ বাসস্থ অন্ধকার ঘরের উপর সেই আলো পড়িলে, ঘর একবার হাসিয়া আবার তখনই অাঁধার হয়, প্রফল্পের নামে ব্রজেশবরের মখ তেমনই হইল। ব্রজ উত্তর করিল, “বাগদী যে। " ব্ৰহ্ম। বাগদী না। সবাই জানে, সে মিছে কথা। তোমার বাপের কেবল সমাজের ভয়। ছেলের চেয়ে কিছ, সমাজ বড় নয়। কথাটা আবার পাড়ব ? ব্রজ । না, আমার জন্য সমাজে আমার বাপের অপমান হবে—তাও কি হয় ? সে দিন আর বেশী কথা হইল না। ব্ৰহ্মঠাকুরাণীও সবটকু বঝিতে পারিলেন না। কথাটা বড় সোজা নয়। প্রফল্লের রােপ অতুলনীয়,-একে ত রাপেই সে ব্রজেশবরের হৃদয় অধিকার করিয়া বসিয়াছিল, আবার সেই এক দিনেই ব্রজেশবের দেখিয়াছিলেন, প্রফল্লের বাহির অপেক্ষা ভিতর আরও সন্দর, আরও মধর। যদি প্রফােল্ল—বিবাহিতা সত্ৰী—স্বাধিকারপ্রাপতি হইয়া নয়নতারার মত কাছে থাকিত, তবে এই উন্মাদকর মোহ সস্নিগধ স্নেহে পরিণত হইত। রাপের মোহ কাটিয়া যাইত, গণের মোহ থাকিয়া যাইত। কিন্তু তা হইল না। প্ৰফল্প-বিদ্যুৎ একবার চমকাইয়া, চিরকালের জন্য অন্ধকারে মিশিল, সেই জন্য সেই মোহ সহস্র গণে বল পাইল। কিন্তু এ ত গেল সোজা কথা। কঠিন এই যে, ইহার উপর দারণ করণা। সেই সোণার প্রতিমাকে তাহার অধিকারে বঞ্চিত করিয়া, অপমান করিয়া, মিথ্যা অপবাদ দিয়া, চিরকালের জন্য বহিস্কৃত করিয়া দিতে হইয়াছে। সে এখন অন্নের কাঙ্গাল। বঝি না খাইয়া মরিয়া যাইবে! যখন সেই প্রগাঢ় অন্যরাগের উপর এই গভীর করণী—তখন মাত্রা পর্ণ। ব্ৰজেশবরের হৃদয় প্রফতুল্লময়—আর কিছরই সন্থান নাই। বাড়ী এত কথাও বঝিল না। কিছ দিন পরে ফলমণি নাপিতনীর প্রচারিত প্রফল্পের তিরোধান-বত্তান্ত হরিবল্লাভের গহে পৌছিল। গলপ ম্যুখে মাখে বদল হইতে হইতে চলে। সংবাদটা এখানে এইরনুপ আকারে পৌছিল যে, প্ৰফল্ল বাত-শোলস্মা-বিকারে মরিয়াছে।--মাতৃত্যুর পকেবা তার মরা মাকে দেখিতে পাইয়াছিল। ব্রজেশবেরও শনিল । হরিবল্লভ শৌচ স্নান করিলেন, কিন্তু শ্ৰাদ্ধাদি নিষেধ করিলেন। বলিলেন, “বাগদীর শ্রাদ্ধ বামনে করিবে ? " নয়নতারাও স্নান করিল—মাথা মাছিয়া বলিল, “একটা পাপ গোল—আর একটার জন্য নাওয়াটা নাইতে পারলেই শরীর জড়ায়।” কিছ দিন গেল। ক্ৰমে ক্ৰমে শকাইয়া শকাইয়া, ব্রজেশবের বিছানা লইল । রোগ এমন কিছ নয়, একটা একটা জবর হয় মাত্র, কিন্তু ব্রজ নিজজীব, শয্যাগত। বৈদ্য দেখিল। ঔষধপত্রে কিছ হইল না। রোগ বন্ধি পাইল। শেষ ব্রজেশবের বাঁচে না বাঁচে । আসল কথা আর বড় লকান রহিল না। প্রথমে বাড়ী বঝিয়াছিল, তার পর গিন্নী বঝিলেন। এ সকল কথা মেয়েরাই আগে বঝে। গিন্নী বঝিলেই, কাজেই কত্তা বঝিলেন। তখন হরবল্লাভের বকে শেল বিধিল । হরিবল্লভ কাঁদিতে কাঁদিতে বলিল, “ছি! ছিঃ! কি করিয়াছি। আপনার পায়ে আপনি কুড়ােল মারিয়াছি।” গিন্নী প্রতিজ্ঞা করিলেন, “ছেলে না। বাঁচিলে আমি বিষ খাইব।” হরিবল্লভ প্রতিজ্ঞা করিলেন, “এবার দেবতা ব্ৰজেশবরকে বাঁচাইলে, আর আমি তার মন না বঝিয়া কোন কাজ করিব না।” ব্রজেশবের বাঁচিল । ক্ৰমে আরোগ্যলাভ করিতে লাগিল—ক্ৰমে শয্যা ত্যাগ করিল।—এক দিন হরিবল্লাভের পিতার সাংবাৎসরিক শ্রাদ্ধ উপস্থিত । হরিবল্লভ শ্রাদ্ধ করিতেছেন, ব্রিজেশবের সেখানে কোন কায্যোপলক্ষে উপস্থিত আছেন। তিনি শনিলেন, শ্রাদ্ধান্তে পরোহিত মন্ত্র পড়াইলেন— “পিতা সবগঃ পিতা ধৰ্ম্মমঃ পিতাহি পরমন্তপঃ। পিতাঁর প্রীতিমাপক্ষে প্ৰীয়ন্তে সবাব দেবতাঃ ৷ ” 'S 6