পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধরাণী নিশি। ভগিনি ! প্ৰাণে বাঁচিলে এক দিন না এক দিন সবামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হইবেক । আজি ডাঙগায় উঠিয়া প্রাণরক্ষা করবে। চল। এখনও যদি ডাঙগায় সিপাহী আসে নাই, তবে ডাঙগা-পথে এখন প্রাণরক্ষার উপায় আছে। দেবী। যদি প্রাণের জন্য আমি এত কাতর হইব, তবে আমি সকল সংবাদ জানিয়া শনিয়া এখানে আসিলাম কেন ? আসিলাম যদি, তবে লোকজন সবাইকে বিদায় দিলাম কেন ? আমার হাজার বরকন্দাজ আছে—তাহদের সকলকে অন্য স্থানে পাঠাইলাম কেন ? দিবা। আমরা আগে যদি জানিতাম, তাহা হইলে তোমায় এমন কৰ্ম্ম করিতে দিতাম না। দেবী। তোমার সাধ্য কি, দিবা ! যা আমি সিথর করিয়াছি, তা অবশ্য করিব। আজ সবমিদংশন করিব, স্বামীর অননুমতি লইয়া জন্মান্তরে তাঁহাকে কামনা করিয়া প্ৰাণ সমাপণ করিব। তোমরা আমার কথা শানিও, দিবা নিশি! আমার স্বামী যখন ফিরিয়া যাইবেন, তখন তাঁহার নৌকায় উঠিয়া তাঁহার সঙ্গে চলিয়া যাইও । আমি এক ধরা দিব, আমি একা ফাঁসি যাব। সেই জন্যই বজরা হইতে আর সকলকে বিদায় দিয়াছি। তোমরা তখন গেলে না। কিন্তু আমায় এই ভিক্ষা দাও—আমার স্বামীর নৌকায় উঠিয়া পলায়ন করিও । নিশি। ধড়ে প্রাণ থাকিতে তোমায় ছাড়িব না। মরিতে হয়, একত্র মরিব । প্র। ও সকল কথা এখন থাক। —যাহা বলিতেছিলাম, তা বলিয়া শেষ করি। যাহা চাক্ষষ প্রত্যক্ষ করিতে পারিতেছিলেন না, তা যেমন দরবীক্ষণের সাহায্যে প্রত্যক্ষ করিলে, তেমন ঈশবরকে মানস প্রত্যক্ষ করিতে দরবীন চাই। দিবা। মনের আবার দরবীন কি ? প্ৰ । যোগ । দিবা। কি—সেই ন্যাস, প্রাণায়াম, কুক্ষভক, বজরাকি, ভেলিক— প্রা। তাকে আমি যোগ বলি না। যোগ অভ্যাস মাত্র। কিন্তু সকল অভ্যাসই যোগ নয়। তুমি যদি দধি ঘি খাইতে অভ্যাস কর, তাকে যোগ বলিব না। তিনটি অভ্যাসকেই যোগ বলি। দিবা। কি কি তিনটি ? প্রা। জ্ঞান, কৰ্ম্মম, ভক্তি। জ্ঞানযোগ, কৰ্ম্মম যোগ, ভক্তিযোগ। ততক্ষণ নিশি দরবীন লইয়া এদিক ওদিক দেখিতেছিল। দেখিতে দেখিতে বলিল, “সম্প্রতি উপসিথত গোলযোগ।” প্রা। সে আবার কি ? আবার গোলযোগ কি ? নিশি। একখানা পান্সী আসিতেছে। বঝি ইংরেজের চর। প্রফতুল্ল নিশির হােত হইতে দরবীন লইয়া পান্সী দেখিল। বলিল, “এই আমার সহযোগ। DBDDBDD BDDBDLDLSDBD S LJBBB DBBLL BBDL S দিবা ও নিশি ছাদ হইতে নামিয়া কামরার ভিতর গেল। পান্সী ক্ৰমে বাহিয়া আসিয়া বজরার গায়ে লাগিল। সেই পান্সীতে— ব্লজেশবির। ব্ৰজেশবর, লাফাইয়া বজরায় উঠিয়া, পান্সী তফাতে বাঁধিয়া রাখিতে হকুম দিলেন। পান্সীওয়ালা তাঁহাই করিল। ব্রজেশবের নিকটে আসিলে, প্রফতুল্ল উঠিয়া দাঁড়াইয়া আনত মস্তকে তাঁহার পদধলি গ্রহণ করিল। পরে উভয়ে বসিলে, ব্রজেশবের বলিল, “আজি টাকা আনিতে পারি নাই, দই চারি দিনে দিতে পারিব বোধ হয়। দই চারি দিনের পরে কবে কোথায় তোমার সঙ্গে দেখা হইবে, সেটা अाना bाझे ।” ও ছি! ছি! ব্রজেশবের ! দশ বছরের পর প্রফল্লের সঙ্গে এই কি কথা! দেবী উত্তর করিল, “আমার সঙ্গে আর সাক্ষাৎ হইবে না।--” বলিতে বলিতে দেবীর গলাটা বজিয়া আসিল—দেবী একবার চোখ মছিল—“আমার সঙ্গে আর দেখা হবে না, কিন্তু আমার ঋণ শধিবার অন্য উপায় আছে। যখন সংবিধা হইবে, ঐ টাকা গরীব-দঃখীকে বিলাইয়া দিবেন।--তাহা হইলে আমি পাইব ।” ব্রজেশবের দেবীর হাত ধরিল। বলিল, “প্ৰফল্ল! তোমার টাকা৷-“ ছাই টাকা! কথা শেষ হইল না—মখের কথা মাখে রহিল। যেমন ব্রজেশবের “প্ৰফল্ল' বলিয়া ডাকিয়া হাত ধরিয়াছে, অমনি প্ৰফীল্লের দশ বছরের বাঁধা বাঁধ ভাঙ্গিয়া, চোখের জলের স্রোত ছটিল। ব্ৰজেশবরের ছাই টাকার কথা সে স্রোতে কোথায় ভাসিয়া গেল। তেজস্বিনী 8C