পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৮৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সীতারাম এই সকল ব্যাপাের সসম্পন্ন হইয়া উঠিল। কিন্তু তিনি রাজা নাম গ্রহণ করিলেন না; কেন না, দিল্লীর বাদশাহ তাঁহাকে রাজা না করিলে, তিনি যদি রাজোপাধি গ্রহণ করেন, তবে মসলমানেরা তাঁহাকে বিদ্রোহী বিবেচনা করিয়া তাঁহার উচ্ছেদের চেস্টা করিবে, ইহা তিনি জানিতেন এ পয্যন্ত তিনি বিদ্রোহিতার কোন কায্য করেন নাই। গঙগারামের উদ্ধারের জন্য যে হােঙগামা হইয়াছিল, তাহাতে তিনি প্রকাশ্যে অস্ত্ৰধারী বা উৎসাহী ছিলেন বলিয়া ফৌজদারের জানিবার কোন কারণ উপস্থিত হয় নাই। কাজেই তাঁহাকে বিদ্রোহী বিবেচনা করার কোন কারণ ছিল না। যখন তিনি রাজা নাম এখনও গ্রহণ করেন নাই; বরং দিল্লীশ্ববরকে সমাট স্বীকার করিয়া জমিদারীর খাজনা পৰ্ব্বমত রাজ-কোষাগারে পৌছিয়া দিতে লাগিলেন, এবং সৰ্ব্বপ্রকারে মসলমানের সঙ্গে সদ্ভাব রাখিতে লাগিলেন; আর নতন নগরীর নাম “মহম্মদপাের।” রাখিয়া, হিন্দ ও মসলমান প্রজার প্রতি তুল্য ব্যবহার করিতে লাগিলেন, তখন মসলমানের অপ্ৰীতিভাজন হইবার আর কোন কারণই রহিল না। তথাপি, তাঁহার প্রজাবদ্ধি, ক্ষমতাবদ্ধি, প্রতাপ, খ্যাতি এবং সমদ্ধি শনিয়া ফৌজদার তোরাব খাঁ উদিবগনচিত্ত হইলেন। মনে মনে স্থির করিলেন, একটা কোন ছল পাইলেই মহম্মদপাের লািঠপার্ট করিয়া সীতারামকে বিনম্ৰাট করিবেন। ছল ছাতারই বা অভাব কি ? তোরাব খাঁ সীতারামকে আজ্ঞা করিয়া পাঠাইলেন যে, তোমার জমিদারীতে অনেকগলি বিদ্রোহী ও পলাতক বদমাস বাস করিতেছে, ধরিয়া পাঠাইয়া দিবা। সীতারাম উত্তর করিলেন যে, অপরাধীদিগের নাম পাঠাইয়া দিলে তিনি তাহাদিগকে ধরিয়া পঠাইয়া দিবেন। ফৌজদার পলাতক প্রজাদিগের নামের একটি তালিকা পাঠাইয়া দিলেন। শনিয়া পলাতক প্রজারা সকলেই নাম বদলাইয়া বসিল। সীতারাম কাহারও নামের সহিত তালিকার মিল না দেখিয়া, লিখিয়া পাঠাইলেন যে, ফন্দোর লিখিত, নাম প্রজা স্বীকার করে না। এইরনুপে বাগবিতণডা চলিতে লাগিল। উভয়ে উভয়ের মনের ভােব বঝিলেন। তোরাব খাঁ, সীতারামের ধবংসের জন্য সৈন্য সংগ্ৰহ করিতে লাগিলেন। সীতারামও আত্মরক্ষাৰ্থ মহম্মদপরের চারি পাশে বা দল্লঙিঘ্য গড় প্রস্তুত করিতে লাগিলেন। প্রজাদিগকে অস্ত্রবিদ্যা ও যন্ধর নীতি শিখাইতে লাগিলেন, এবং সন্দরবন-পথে গোপনে অস্ত্ৰ সংগ্ৰহ করিতে লাগিলেন। এই সকল কায্যে সীতারাম তিন জন উপযক্ত সহায় পাইয়াছিলেন। এই তিন জন সহায় ছিল বলিয়া এই গারতের কায্য এত শীঘ্র এবং সচারচরপে নিববাহ হইয়াছিল। প্রথম সহায় চন্দ্র চড়ে তকােলণ্ডকার, দিবতীয়ের নাম মন্ময়, তৃতীয় গঙ্গারাম। বন্ধিতে চন্দ্রচড়ি, বলে ও সাহসে মন্ময়, এবং ক্ষিপ্রকারিতায় গঙ্গারাম। গঙ্গারাম সীতারামের একান্ত অনগত ও কায্যকারী হইয়া মহম্মদপরে বাস করিতেছিল। এই সময়ে চাঁদ শাহ নামে এক জন মসলমান ফকির, সীতারামের সভায় যাতায়ােত আরম্ভ করিল। ফকির বিজ্ঞ, পন্ডিত, নিরীহ এবং হিন্দমসলমানে সমদশী । তাঁহার সহিত সীতারামের বিশেষ সম্প্রীতি হইল। তাঁহারই পরামর্শমতে, নবাবকে সন্তুষ্ট রাখিবার জন্য, সীতারাম রাজধানীর নাম রাখিলেন, “মহম্মদপাের”। ফকির আসে যায়। জিজ্ঞাসমতে সৎপরামর্শ দেয়। কেহ বিবাদের কথা তুলিলে তাহাকে ক্ষান্ত করে। অতএব আপাততঃ সকল বিষয় সচার মতে নিববাহ হইতে লাগিল। দশম পরিচ্ছেদ সীতারামের যেমন তিন জন সহায় ছিল, তেমনই তাঁহার এই মহৎ কায্যে এক জন পরম শত্র ছিল। শত্ৰ— তাঁহার কনিষ্পাঠা পত্নী রমা। রামা বড় ছোট মেয়েটি, জলে ধোয়া যাইফলের মত বড় কোমল প্রকৃতি। তাহার পক্ষে এই জগতের যাহা কিছ. সকলই দণ্ডেজ্ঞায় বিষম পদার্থ—সকলই তাহার কাছে ভয়ের বিষয়। বিবাদে রামার বড় ভয়। সীতারামের সাহসকে ও বীৰ্য্যকে রমার বড় ভয় । বিশেষ মসলমান রাজা, তাহদের সঙেগ বিবাদে রামার বড় ভয় । তার উপরে আবার রমা ভীষণ সর্বপন দেখিলেন। সর্বপন দেখিলেন যে, মসলমানেরা যন্ধে জয়ী হইয়া তাঁহাকে এবং সীতারামকে ধরিয়া প্রহার করিতেছে। এখন রমা। সেই অসংখ্য মসলমানের দন্তশ্রেণী-প্রভাসিত বিশাল শমশ্রল বদনমন্ডল রাত্রিদিন চক্ষতে দেখিতে লাগিল। তাহদের বিকট চীৎকার রাত্রিদিন কাণে শনিতে লাগিল। রমা। brbf cl