পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৯৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊद्धा কিন্তু বস্ত্র রক্ষা করিতে পারি নাই। তোমাকেও আমি, তোমার আচরণ দেখিয়া সেইরােপ বন্য পশ মনে করিতেছি, অতএব তোমার কাছে আমার লঙ্কজা হইতেছে না। কিন্তু তোমার লজজা হওয়া উচিত—কেন না, তুমি রাজা এবং গহী, তোমার মহিষী আছেন, চক্ষ বােজ ।” বথা বলা ! তখন মহাক্ৰোধান্ধকারে রাজা একেবারে অন্ধ হইয়াছেন। জয়ন্তীর কথার কোন উত্তর না দিয়া কসাইকে বলিলেন, “জবরদস্তী কাপড়া উতার লেও।” তখন জয়ন্তী আর ব্যথা কথা না কহিয়া, জানা পাতিয়া মঞ্চের উপর বসিল। জয়ন্তী আপনার কাছে আপনি ঠকিয়াছে—এখন বঝি জয়ন্তীর চোখে জল আসে। জয়ন্তী মনে করিয়াছিল, “যখন পথিবীর সকল সখ-দঃখ জলাঞ্জলি দিয়াছি, যখন আর আমার সখও নাই, দঃখিও নাই, তখন আমার আবার লজজা কি ? ইন্দ্ৰিয়ের সঙেগ আমার মনের যখন কোন সম্পবিন্ধ নাই, তখন আমার আর বিবস্ত্র আর সবসন্ত্র কি ? পাপাই লণ্ডজ, আবার কিসে লতাজা করিব ? জগদীশবরের নিকট ভিন্ন, সখে-দঃখের অধীন মনষ্যের কাছে লজা কি ? আমি কেন এই সভামধ্যে বিবসন্ত্র হইতে পারিব না ?” তাই জয়ন্তী এতক্ষণ আপনাকে বিপন্নই মনে করে নাই— বেত্ৰাঘাতটা ত গণ্যের মধ্যে নহে। কিন্তু এখন যখন বিবস্ত্ৰ হইবার সময় উপস্থিত হইল—তখন কোথা হইতে এই পাপ লজা আসিয়া সেই ইন্দ্রিয়বিজয়িনী সখ-দঃখবভিজাত জয়ন্তীকেও অভিভূত করিল। তাই নারীজন্মকে ধিক্কার দিয়া জয়ন্তী মঞ্চতলে জানা পাতিয়া বসিল। তখন যক্ত করে, পবিত্ৰচিত্তে জয়ন্তী আত্মাকে সমাহিত করিয়া মনে মনে ডাকিতে লাগিল, “দীনবন্ধ! আজ রক্ষা করা! মনে করিয়াছিলাম, বঝি এ পথিবীর সকল সখদঃখে জলাঞ্জলি দিয়াছি, কিন্তু হে দপহারী ! আমার দপ চণ্য হইয়াছে, আমায় আজ রক্ষা করা! নারীদেহ কেন দিয়াছিলে, প্ৰভু! সব সখ-দঃখ বিসঙ্জন করা যায়, কিন্তু নারীদেহ থাকিতে লজা বিসর্জন করা যায় না। তাই আজ কাতরে ডাকিতেছি, জগন্নাথ ! আজি রক্ষা কর।” যতক্ষণ জয়ন্তী জগদীশবরকে ডাকিতেছিল, ততক্ষণ কসাই তাহার অণ8ল ধরিয়া আকষণ করিতেছিল। দেখিয়া সমস্ত জনমণ্ডডলী এককন্ঠে হাহাকার শব্দ করিতে লাগিল-—বলিতে লাগিল, “মহারাজ ! এই পাপে তোমার সববনাশ হইবে—তোমার রাজ্য গেল।” রাজা কৰ্ণপাত করিলেন না। নিরাপায় জয়ন্তী আপনার অঞ্চল ধরিয়া টানাটানি করিতেছিল, ছাড়িতেছিল না। তাহার চক্ষা দিয়া জল পড়িতেছিল। শ্ৰী থাকিলে বড় বিস্মিতা হইত—জয়ন্তীর চক্ষাতে আর কখনও কেহ জল দেখে নাই। জয়ন্তী রধিরাক্ত ক্ষত হস্তে আপনার অঞ্চল ধরিয়া ডাকিতেছিল, “জগন্নাথ ! রক্ষা কর।” বঝি জগন্নাথ সে কথা শানিলেন। সেই অসংখ্য জনসমােহ হাহাকার করিতে করিতে সহসা আবার জয়ধবনি করিয়া উঠিল। “রাণীজিকি জয় ! মহারাণীকি জয়! দেবীকি জয়!” এই সময়ে অধোমখী জয়ন্তীর কণে অলঙ্কারশিঞ্জিত প্রবেশ করিল। তখন জয়ন্তী মখা তুলিয়া চাহিয়া দেখিল, সমস্ত পৌরস্ত্ৰী সঙ্গে কবিয়া মহারাণী নন্দা মঞ্চোপরি আরোহণ कब्रिटऊँछन। জয়ন্তী উঠিয়া দাঁড়াইল । সেই সমস্ত পৌরস্ত্রী জয়ন্তীকে ঘেরিয়া দাঁড়াইল। মহারাণী নিজে জয়ন্তীকে আড়াল করিয়া, তাহার সম্মখে দাঁড়াইলেন। দশকেরা সকলে করতালি দিয়া হরিবোল দিতে লাগিল। কসাই জয়ন্তীর হাত ছাড়িয়া দিল, কিন্তু মণ্ড হইতে নামিল না। বুড়া অত্যন্ত বিস্মত ও রােষ্ট হইয়া অতি পরযেভাবে নন্দাকে বললেন, “এ কি এ মহারাণা !” নন্দা বলিলেন, “মহারাজ ! আমি পতিপত্ৰবতী । আমি জীবিত থাকিতে তোমাকে কখনও ঐ পাপ করিতে দিব না। তাহা হইলে আমার কেহ থাকিবে না।” রাজা পাকবািবং ক্লদ্ধভাবে বলিলেন, “তোমার ঠাঁই অন্তঃপারে, এখানে নয়। অন্তঃপরে যাও।” নন্দা সে কথার কোন উত্তর না দিয়া বলিল, “মহারাজ ! আমি যে, মণ্ডের উপর দাঁড়াইয়াছি, এই কসাইটা সেই মণ্ডে দাঁড়াইয়া থাকে কোন সাহাসৈ ? উহাকে নামিতে আজ্ঞা দিন।” রাজা কথা কহিলেন না। তখন নন্দা উচ্চৈঃস্বরে , “এই রাজপরীমধ্যে আমার কি এমন কেহ নাই যে, এটাকে নামাইয়া দেয় ?” তখন সাহসী দশক এককালে “মার! মার!” শব্দ করিয়া কসাইয়ের প্রতি ধাবমান হইল। সে লম্ফ দিয়া মণ্ড হইতে পড়িয়া পলাইবার চেন্টা করিল, কিন্তু দশকগণ তাহাকে ধরিয়া ফেলিয়া, S8C