ক্ষম।” অতএব যাহা সম্বন্ধ নহে, তাহার প্রত্যক্ষ হইতে পারে না। এই লক্ষণ প্রতি দুইটি দোষ পড়ে। যোগীগণ যোগবলে অসম্বন্ধ ও প্রত্যক্ষ করিতে পারেন । ڈھاهه স্বত্রকার সে দোষ অপনীত করিলেন। দ্বিতীয় দোষ, ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ নিত্য, তৎ সম্বন্ধে সম্বন্ধ কথাটি ব্যবহার হইতে পারে না । সুত্রকার তাহার এই উত্তর দেন, যে ঈশ্বরই সিদ্ধ নহেন—ঈশ্বর আছেন, এমত কোন প্রমাণ নাই—অতএব তাহার প্রত্যক্ষ সম্বন্ধে না বৰ্ত্তিলে এই লক্ষণ দুষ্ট হইল না। তাহাতে ভাষ্যকার বলেন যে দেখ, ঈশ্বর অসিদ্ধ ইহা উক্ত হইয়াছে, কিন্তু ঈশ্বর নাই, এমত কথা বলা হইল না । না হউক, তথাপি এই দর্শনকে নিরীশ্বর বলিতে হইবে। এমত নাস্তিক বিরল, যে বলে যে ঈশ্বর নাই। যে বলে যে ঈশ্বর আছেন, এমত কোন প্রমাণ নাই, তাহাকেও নাস্তিক বলা যায়। যাহার অস্তিত্বের প্রমাণ নাই, এবং যাহার অনস্তিত্বের প্রমাণ আছে, এ দুইটি পৃথক্ বিষয়। রক্তবর্ণ কাকের অস্তিত্বে কোন প্রমাণ নাই, কিন্তু তাহার অনস্তিত্বের ওকোন প্রমাণ নাই। কিন্তু গোলাকার চতুষ্কোণের অনস্তিত্বের প্রমাণ আছে। গোলাকার চতুষ্কোণ মানিব না, ইহ নিশ্চিত; কিন্তু রক্তবর্ণ কাক মানিব কি না ? তাহার অনস্তিত্বের প্রমাণ নাই বটে, কিন্তু তাহার অস্তিত্বের ও প্রমাণ নাই। যেখানে অস্তিত্বের প্রমাণ প্রমাণ নাই থাক, যতক্ষণ অস্তিত্বের প্রমাণ না পাই ততক্ষণ মানিব না । অস্তি । ত্বের প্রমাণ পাইলে তখন মানিব। ইহাই প্রত্যয়ের প্রকৃত নিয়ম । ইহার ব্যতয়ে যে বিশ্বাস তাহা ভ্রাত্তি। “কোন পদার্থ আছে এমত প্রমাণ নাই বটে, কিন্তু থাকিলে থাকিতে পারে,” ইহা ভাবিয়া যে সেই পদার্থের অস্তিত্ব কল্পনা করে সে ভ্রান্ত । অতএব নাস্তিকের দুই শ্রেণীতে বিভক্ত হইলেন। র্যাহাঁরা কেবল ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণাভাব বাদী,—র্তাহারা বলেন, ঈশ্বর থাকিলে থাকিতে পারেন,–কিন্তু আছেন এমত কোন প্রমাণ নাই। কোমৃতের মতাবলম্বীরা এই শ্রেণীর নাস্তিক। অপর শ্রেণীর নাস্তিকেরা বলেন যে ঈশ্বর আছেন, শুধু ইহারই প্রমাণাভাব, এমত নহে, ঈশ্বর যে নাই, তাহার ও প্রমাণ আছে। আধুনিক ইউরোপীয়ের কেহ২ এই মতাবলম্বী। একজন ফরাসিস লেখক বলিয়াছেন, তোমরা বল ঈশ্বর নিরাকার, অথচ চেতনাদি মানসিক বৃত্তি বিশিষ্ট। কিন্তু কোথায় দেখিয়াছ যে চেতনাদি মানসিক বৃত্তি সকল শরীর হইতে বিযুক্ত ? যদি তাহা কোথাও দেখ নাই, তবে হয় ঈশ্বর সাকার, নয় তিনি নাই ৷ সাকার ঈশ্বর, এ কথা তোমরা মানিবে না, অতএব ঈশ্বর নাই, ইহা মানিতে হইবে। ইনি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাস্তিক ।
পাতা:বঙ্গদর্শন-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।