পাতা:বঙ্গদর্শন-পঞ্চম খন্ড.djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

०२४8 ) করবেন । কিন্তু সম্প্রতি কিছু পীড়িত হইয়া পড়িয়াছিলেন। শয়নমন্দির ত্যাগ করিতে পারিতেন না । সেখানে গোবিনালাল র্তাহাকে প্রত্যহ দেখিতে আসিত, কিন্তু সৰ্ব্বদ। তিনি সেবকগণপরিবেষ্টিত থাকিতেন, গোবিন্দলালকে সকলের সাক্ষতে কিছু বলিতে পারিতেন না । কিন্তু পীড় বড় বৃদ্ধি পাষ্টল। হঠাৎ কৃষ্ণকাস্তের মনে হইল যে, বুঝি চিত্রগুপ্তের হিসাব নিকাশ হইয়া আসিল—এ জীবনের সাগরসঙ্গম বুঝি সম্মুখে । আর বিলম্ব করিলে কথা বুঝি বলা হইবে না । এক দিন গোবিন্দলাল অনেক রাত্রে বাগান হষ্টতে প্রত্যাগমন করিলেন। সেই দিন কৃষ্ণকান্ত মনের কথা বলিবেন মনে করিলেন । গোবিন্দলাল দেখিতে আসিলেন। কৃষ্ণকান্ত পার্শ্ববর্তিগণকে উঠিয়া যাইতে বলিলেন। পার্শ্ববৰ্ত্তিগণ সকলে উঠিয়া গেল । তখন গোবিন্দলাল কিঞ্চিৎ অপ্রতিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ আপনি আজি কেমন আছেন ?” কৃষ্ণকান্ত ক্ষীণুস্বরে বলিলেন, “ আজি বড় ভাল নই। এত রাত্রি হইল কেন ?” গোবিন্দলাল সে কথায় কোন উত্তর না দিয়া, কৃষ্ণকাত্তের প্রকোষ্ঠ হস্তমধ্যে লইয়া নাড়ি টিপিয়া দেখিলেন। অকস্মাৎ গোবিন্দলালের মুখ শুকাইয়া গেল । কৃষ্ণকাস্তের জীবনপ্রবাহ অতি ধীরে, ধীরে, ধীরে বহিতেছে । . গোবিন্দ্রলাল কেবল ৰলিলেন, “ আমি আসিতেছি।” তোমার কৃষ্ণকান্তের উইল । ఇ 3న, কৃষ্ণকান্তের শয়নগৃহ হইতে নির্গত হইয়। গোবিন্দলাল একবারে, স্বয়ং বৈদ্যের গুহে গিয়া উপস্থিত হইলেন । বৈদ্য বিস্মিত হইল। গোবিন্দলাল বলিলেন, . মহাশয় শীঘ্ৰ ঔষধ লইয়া আস্বন, জ্যেষ্ঠ । তাতের অবস্থা বড় ভাল বোধ হইতেছে না। বৈদ্য শশব্যস্তে একরাশি বটিকা লইয়া তাহার সঙ্গে ছুটলেন।—মনে মনে স্তিরসংকল্প অদ্য কৃষ্ণকান্তকে সংহার করিয়া গৃহে প্রত্যাগমন করিবেন। কৃষ্ণকাস্তের গুচে গোবিন্দলাল বৈদ্যসহিত উপস্থিত হইলেন, কৃষ্ণকান্ত কিছু ভীত হইলেন। কবিরাজ হাত দেখিলেন । কৃষ্ণকান্ত জিজ্ঞাসা করিলেন, “ কেমন কিছু শঙ্কা হইতেছে কি ?” বৈদ্য বলিলেন, “মনুষ্যশরীরে শঙ্কা কখন नाहे ?” কৃষ্ণকান্ত বুঝিলেন। বলিলেন, “কতক্ষণ মিয়াদ ?” বৈদ্য বলিলেন, “ ঔষধ খাওরাক্টর পশ্চাৎ বলিতে পারিব।” বৈদ্য ঔষধ মাড়িয়া সেবন জন্য কৃষ্ণকাস্তের নিকট উপস্থিত করিলেন । কৃষ্ণকান্ত ঔষধের খল হাতে লইয়া, একবার মাথায় স্পর্শ করাইলেন। তাহার পর ঔষধটুকু সমুদায় পিকদানিতে নিক্ষিপ্ত করিলেন । বৈদ্য বিষুব্ধ হইল। কৃষ্ণকান্ত দেখিয়া বলিলেন, “ বিষগ্ন হইবেন না । ঔষধ খাইয়া বাচিবার বয়স আমার নহে । ঔষধের অপেক্ষা হরিনামে আমার উপ কার। তোমরা হরিনাম কর,আমি শুনি।”