পাতা:বঙ্গদর্শন-পঞ্চম খন্ড.djvu/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s२४8 l) তাহার উপর, কোন প্রকারে অন্যের উপর প্রাধান্যলাভ উদ্দেশ্য । উদরপুর্কির পর, ধনে হউক, বা অন্য প্রকারে হউক, লোকমধ্যে যথাসাধ্য প্রাধান্য লাভ করাকে মনুষ্যগণ, আপনাদিগের জীবনের উদ্দেশ্য বিযেচনা করিয়া কাৰ্য্য করে । এই প্রাধান্যলাভের উপায়, লোকের বিবেচনার প্রধানতঃ ধন, তৎপরে রাজপদ ও যশঃ । অতএব ধন, পদ, ও যশঃ মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য বলিয়া মুখে স্বীকৃত হউক বা না হউক, কাৰ্য্যতঃ মমুষ্যলোকে সৰ্ব্ববাদিসম্মত । এই তিনটির সমবায়, সমাজে সম্পদ বলিয়া পরিচিত। তিনটির একত্রীকরণ দুর্লভ, অতএব দুই একটি, বিশেষতঃ ধন, থাকিলেই সম্পদ বর্তমান বলিয়া স্বীকৃত হইয়া থাকে। এই সম্পদাকাজঙ্কাই সমাজমধ্যে লোকজীবনের উদ্দেশ্য স্বরূপ অগ্রবর্তী, এবং ইহাই সমাজের ঘোরতর অনিষ্টের কারণ। সমাজের উন্নতির গতি বে এত মন্দ, তাহার প্রধান কারণই এই যে বাহ্যসম্পদ মমুষ্যের জীবনের উদ্দেশ্য স্বরূপ হইয়া দাড়াইয়াছে। কেবল সাধারণ মনুষ্যদিগের কাছে নহে, ইউরোপীয় প্রধান পণ্ডিত এবং রাজপুরুষগণের কাছেও বটে। কদাচিৎ কথন এমন কেহ জন্মগ্রহণ করেন, যে তিনি সম্পদকে মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্যমধ্যে গণ্য করা দুরে থাকুক জীবনোদেশ্যের প্রধান বিঘ্ন বলিয়া ভাবিয় থাকেন। যে রাজ্য সম্পদকে অপর লোকে, জীবনসফলকর বিবেচনা করে, শাক্যসিংহ তাহ বিঘ্নকর বলিয়া প্রত্যাখ্যান করিয়া ছিলেন। ভারতবর্ষে, বা ইউরোপে এমন অনেকই মুনিবৃত্তি + স্বীকার করি, কিয়ংপরিমাণে ধনাকাজা সমাজের মঙ্গলকর । জন ষ্টুয়ার্ট মিলের জীবনবৃত্তের সমালোচনা ।

byፃ

মহাপুরুষ জন্মিয়াছেন, যে র্তাহারা বাহ্য সম্পদকে ঐ রূপ ঘৃণা করিয়াছেন। ইহায় প্রকৃত পথ অবলম্বন করিয়াছিলেন এমন্ত কথ। বলিতে পারিতেছি না । শাক্যসিংহ শিগাইলেন—যে ঐহিক ব্যাপারে চিত্তনিবেশ মাত্র অনিষ্টপ্রদ, মনুষ্য সৰ্ব্বত্যাগী হইরা নিৰ্ব্বাণাকাজী হউক । ভারতে এই শিক্ষার ফল যে বিষময় হইয়াছে, বঙ্গদর্শনের অনেক স্থানেই তাহা প্রমাণীকৃত হইয়াছে । এইরূপ, আর অনেকানেক মুনিবৃত্ত মহাপুরুষ, মনুষ্যজীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভ্ৰান্ত হওরাতে ঐহিক সম্পদে অনমুরক্ত হইরাও সমাজের ইষ্টসাধনে বিশেষ কৃতকার্য হইতে পারেন নাই। সামান্যতঃ সন্ন্যাসী প্রভৃতি সৰ্ব্বদেশীয় বৈরাগী সম্প্রদায় সকলকে উদাহরণ স্বরূপ নির্দিষ্ট করিলেই, একথা যথেষ্ট প্রমাণীকৃত হইবে । স্থল কথা এই বে ধনসঞ্চয়াদির ন্যায়, স্বথশূন্য, শুভফলশূন্য, মহত্বশূন্য ব্যাপার প্রয়োজনীয় হইলেও কখনই মনুযাজীবনের উদ্দেশ্য বলির গৃহীত হইতে পারে ন। এ জীবন ভবিষ্যৎ পারলৌকিক জীবনের জন্য পরীক্ষা মাত্র-পৃথিবী স্বৰ্গলাভের জন্য কৰ্ম্মভূমি মাত্র—এ কথা যদি যথার্থ হয়, তবে পরলোকে মুখপ্রদ কার্য্যের অনুষ্ঠানই জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বটে, কিন্তু প্রথমতঃ সেই সকল কাৰ্য্য কি, তদ্বিযয়ে মতভেদ, নিশ্চয়তার একেবারে উপায়াভাব ; দ্বিতীয়তঃ পরলোকের অস্তিত্বেরই প্রমাণাভাব । তৃতীয়তঃ পরলোক থাকিলে, এবং ইহলোক পরীক্ষা ভূমিমাত্র হইলেও, ঐহিক এরং পারত্রিক শুভের মধ্যে ভিন্নতা হইবার কোন কারণ দেখা যার না । ধনের আকাঙ্ক্ষা মাত্র অমঙ্গলজনক এ কথা বলি না, ধন, মনুষ্যজীবনের উদেশ্য হওয়াই অমঙ্গলকর ।