পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>રાન્સ ] জটাধারীর রোজনামচা । ১২৭ “তোমার সঙ্গে” কহিয়াই অামি গজানন দাদার শিবিকার এক কোণে বসিলাম। অধিকক্ষণ মুখ বন্ধ রাখা আমার পক্ষে কষ্টকর, বাহকগণ কয়েকটি পদ না চলিতেই কহিলাম “গজু দাদা আজ আবার দাঙ্গ হবে ?” - গজা । রাম কহ, রাম কহ ! রঘুবীর রঘুবীর । সন্ধি মানসে যাইতেছি যাত্রার সময় এ কুকথা কেন শুনালি ? w আমি বলিলাম “কি কুকথা দাদা দাঙ্গা ? দাঙ্গা দেখায় আমোদ আছে।” গজা । রাম কহ, গঙ্গা কত, আবার ঐ অকথা । আমি কহিলাম “কি অকথা দাঙ্গা” ! গজা । তুমি আজ বিপদ ঘটাইবে দেখিতেছি ! আবার ঐ কথা বল ত, নামিয়ে দিয়ে যাব । “আর কহিব না –কিন্তু দাদা আমি সেদিন দেখেছিলাম—আপনার কৌশল চমৎকার ।" e গজা । ভাই এ সকল শিক্ষা নিতান্ত আবশ্যক, বেটা ছেলে হয়ে কেবল পুথি পড়া নয়—বল চাই, বুক্‌ চাই, দস্তু চাই, তবে অদৃষ্ট যোগ দেয় বড়লোক হয়— হয় বে—ভাই—হয় । এদিকে বলুবার সর্দার আজ রুদ্রাক্ষের মালা গলায়, রাঙ্গা পাগড়ি মাথায় দিয়া কুম্ভাবচৰ্ম্মনিৰ্ম্মিত ঢাল পুষ্ঠে বান্ধিয, কোমরেব বামপাশ্বে মহিষের চৰ্ম্মকৃত কোয সংযুক্ত তরবাল ঝুলাইয়া, লাঠি হাতে পালকির এক বাড় ধরিয়া চঞ্চল পদচালনায় বাহকদলের সঙ্গে সঙ্গে চলিতেছিল । আমাদের কথা শুনিয়া কহিয়া উঠিল, “বেটা ছেলে হলেই কি ভাগ্য হয় হজুর ? আমরাও ত বেটা ছেলে, বেটা ছেলে হওয়া বড় সুখ । বরং মেয়ের কাটন কাটিয়া, মাছ ধরিয়া ভাল থাকে, আমাদের—” সর্দার বেহার কহিয়া উঠিল, “এই বোঝা কান্ধে করিয়া কাদা কাটা ভাঙ্গিতে বড় মুখ ” রঘুবীর কহিয়া উঠিল “আর মধ্যে মধ্যে দারগা সাহেবের পয়জারে বড় মুখ ?” i কথা কহিতে কহিতে বিস্তৃত হরিত ক্ষেত্র, শেষে নিবিড় বৃক্ষশির ভেদ করিয়া সিংহ বাবুদের প্রাসাদের শ্বেত উৰ্ম্মিপৃষ্ঠবৎ আলিসা ও কারনিস দৃষ্ট হইল। বেহারাগণ সজোরে হাকিতে লাগিল, রঘুবীর ক্রতপদ হইল, সর্দারের লালকুকুর যেন ভারি বিষয় কাৰ্য্যে তৎপর হইয়া সবার অগ্ৰে দোঁড়িল—জমাদারের টাটু ঘোড়া দৌড়িল, কিয়ৎক্ষণ মধ্যে সিংহ বাবুদের গুহম্বারে পান্ধী থামিল।