পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮৫ ] রাজসিংহ পাহাড়ের তলদেশে গেল, তাহার পর উহাদের আর দেখা গেল না । তখন রাজপুত সিদ্ধান্ত করিলেন যে উহারা হয় ঐখানে বসিয়া বিশ্রাম করিতেছে, বৃক্ষাদির জন্ত দেখা যাইতেছে না ; নয় ঐ পৰ্ব্বততলে গুহা আছে দস্যরা তাহার মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে। রাজপুত, বৃক্ষাদি চিহ্ন দ্বারা সেই স্থানে যাইবার পথ বিলক্ষণ করিয়া নিরূপণ করিলেন। পরে অবতরণ করিয়া বন্যপথে প্রবেশপুৰ্ব্বক, সেই সকল চিহ্ন লক্ষিত পথে চলিলেন । এইরূপে, বিবিধ কৌশলে তিনি পূৰ্ব্বলক্ষিত স্থানে আসিয়া দেখিলেন, পৰ্ব্বততলে একটা গুহা আছে । গুহামধ্যে মমুস্থ্যের কথাবার্তা শুনিতে পাইলেন । এই পৰ্য্যন্ত আসিয়া রাজপুত কিছু ইতস্তত: করিতে লাগিলেন। উহারা চারি জন—তিনি একা ; এক্ষণে গুহামধ্যে প্রবেশ করা উচিত কি না। যদি গুহাদ্বার রোধ করিয়া উহার চারিজনে সংগ্রাম করে, তবে তাহার বাচিবার সম্ভাবনা নাই। কিন্তু এ কথা রাজপুতের মনে বড় অধিকক্ষণ স্থান পাইল না— মৃত্যুভয় আবার ভয় কি ? মৃত্যু ভয়ে রাজপুত কোন কাৰ্য্য হইতে বিরত হয় না ! কিন্তু দ্বিতীয় কথা এই যে তিনি গুহা মধ্যে প্রবেশ কবিলেই তাহার হস্তে দুই একজন অবশ্য মৰিবে। যদি উহারা সে দসু্যদল না হয় ? তবে নিদপরাধাব হত্যা হইবে । এই ভাবিয়া রাজপুত সন্দেহভঞ্জনার্থ অতি ধারে ধারে গুহাদ্বারের নিকট আসিয়া দাড়াইয়া অভ্যন্তরস্থ ব্যক্তিগণেব কথাবাৰ্ত্ত কর্ণপাত করিয়া শুনিতে লাগিলেন । দমু্যরা তখন অপহৃত সম্পত্তির বিভাগেৰ কথা কহিতেছিল। শুনিয়া রাজপুতের নিশ্চয় প্রতীতি হইল যে, ইহারা দস্থ্য বটে। রাজপুত তখন গুহা মধ্যে প্রবেশ করাই স্থির করিলেন । ধীরে ধীবে বর্ষা বনমধ্যে লুকাইলেন। পরে অসি নিস্কোষিত করিয়া দক্ষিণ হস্তে দৃঢ় মুষ্টিতে ধারণ করিলেন। বাম হস্তে পিস্তল লইলেন। দসু্যরা যখন চঞ্চলকুমারীর পত্র পাইয়া অর্থলাভের আকাজক্ষায় বিমুগ্ধ হইয়া অন্যমনস্ক ছিল—সেই সময়ে রাজপুত অতি সাবধানে পাদবিক্ষেপ করিতে করিতে গুহামধ্যে প্রবেশ করিলেন । দলপতি গুহাদ্বারের দিকে পশ্চাৎ ফিরিয়া বসিয়াছিল। প্রবেশ করিয়া রাজপুত দৃঢ়মুষ্টিধূত তরবারিতে দলপতির মস্তকে আঘাত করিলেন। তাহার হস্তে এত বল যে এক আঘাতেই মস্তক দ্বিখণ্ড হইয়া ভূতলে পড়িয়া গেল । সেই মুহূৰ্ত্তেই, দ্বিতীয় একজন দস্থ্য যে দলপতির কাছে বসিয়াছিল, তাহার দিকে ফিরিয়া রাজপুত তাহার মস্তকে এঁরূপ কঠিন পদাঘাত করিলেন