পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s२४é ] প্রাচীন ভারতবর্ষ ১৯৭ আচারগত কোনরূপ বিশেষ বৈলক্ষণ্য ছিল না, অথবা মেগাস্থিনিস উভয়ের বিভেদ ভাল করিয়া জানিতেন না । শ্রমণ ভিষকগণ যে প্রণালীতে চিকিৎসা করিতেন, অদ্যাপি ভারতবর্ষে সেই প্রণালীই চলিতেছে । ইহাতে অনুমান হয় যে প্রচলিত চিকিৎসাপ্রণালী চন্দ্রগুপ্তেরও পূর্বে এতদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। মেগাস্থিনিস যাদৃশ দার্শনিক মতের উল্লেখ করিয়াছেন, তাহাতে বেদান্তের আভাস স্পষ্ট প্রতীত হয় । মেগাস্থিনিস ভারতবর্ষবাসীদিগকে যে সাতশ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছেন, তন্মধ্যে কৃষকেরা দ্বিতীয়শ্রেণী। দেশের অধিকাংশ লোক এই শ্রেণীর অন্তর্গত । ইহারা ধীর ও নম্রস্বভাব। ইহাদিগকে যুদ্ধ করিতে হয় না। যুদ্ধকালেও ইহাদিগের চাসের ব্যাঘাত হয় না । যেখানে দুষ্টদলে তুমুল যুদ্ধ হইতেছে, তাহার নিকটেই কৃষকদিগকে নিরাপদে ভূমি কর্ষণ করিতে দেখা যায়। রাজাই ভূস্বামী, কৃষকেরা উৎপল্পের এক চতুর্থাংশ পায় । তৃতীয় শ্রেণী গোপাল ও শিকারী। ইহারা শিকার করে, পশুপালন করে, পশু বিক্রয় করে, ইত্যাদি। ইহাদিগের নির্দিষ্ট বাসস্থান নাই। চতুর্থশ্রেণী কারুকর ও বাণিজ্যব্যবসায়ী । ইহাদিগের রাজকর দিতে হয় । কিন্তু যাহারা যুদ্ধাস্ত্র ও জাহাজ নিৰ্ম্মাণ করে, তাহারা রাজার নিকট হইতে বেতন পায় r পঞ্চম শ্রেণী যোদ্ধা । ইহালা সংখ্যায় কেবল কৃষকদিগের অপেক্ষা কম । রাজকোষ হইতে ইহাদিগের ভরণপোষণ হয়, এবং যুদ্ধের উপকরণ ইহার রাজসংসার হইতে পায় । এজন্য যখন আবশ্যক হয়, তখনই ইহারা সমরাঙ্গণে নামিতে প্রস্তুত । শাস্তির সময়ে তাহারা সুরাপানাদি করিয়া আমোদ প্রমোদে কালযাপন করে। ষষ্ঠ শ্রেণী চর, ইহারা সকল বিষয়ে রাজাকে গোপনে সংবাদ দেয়। সপ্তমশ্রেণী মন্ত্রিবর্গ। বিচারাসন, রাজকীয় উচ্চ উচ্চ পদ, এবং সাধারণ শাসনকাৰ্য্য ইহাদিগের হস্তে ; এবং ইহাদিগের দ্বারাই শাসনকৰ্ত্তা, কোষাধ্যক্ষ, সেনানী প্রভৃতি নির্বাচিত হয় । একশ্রেণীর লোকের সহিত অন্তশ্রেণীর লোকের বিবাহ হয় না। একশ্রেণীর লোক অন্যশ্রেণীভুক্ত হইতে পারে না, বা অন্যশ্রেণীর ব্যবসায় অবলম্বন করিতে পারে না । কেবল যে সে শ্রেণীর লোক তত্ত্ববিৎ হইতে পারে। এই শ্রেণীবিভাগ দেখিয়া বোধ হয় যে ব্যবসায়ের সহিত জাতির প্রকৃত সম্বন্ধ বুঝিতে না পারিয়া মেগাস্থিনিস কয়েকটি ভ্রমে পতিত হইয়াছিলেন। প্রথমতঃ তিনি জাত্যভিমানী ব্রাহ্মণদিগকে ও জাতিভেদরহিত শ্রমণদিগকে এক তত্ত্ববিৎশ্রেণীতে স্থান দিয়াছিলেন, এবং সৰ্ব্বজাতীয় লোক শ্রমণ হইতে পারিত বলিয়া যে সে শ্রেণীর লোক তত্ত্ববিৎ হইতে পারিত লিখিয়াছিলেন। দ্বিতীয়তঃ তিনি বুঝিতে পারেন নাই যে চর ও মন্ত্রিবর্গ ব্রাহ্মণশ্রেণীর অন্তর্গত। জ্ঞানচর্চা তাহ