পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৩৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬২ -- বঙ্গদর্শন [ কান্তিক তুমিও সেইরূপ কাটাইবে । আমরা পুরুষানুক্রমে রাজদেওয়ান, আমার পর তুমি অবগু দেওয়ান হইবে, রাজা তোমাকে ভালবাসেন। চূড়াধন বাবু তোমার প্রতি হস্তক্ষেপ করিবেন না ; তুমি অল্পবয়স্ক এই জন্য তুমি তাহার লক্ষ্য নহ। তাহার সম্মুখে বালকের মত ব্যবহার করিবে। আর এক কথা—রাজার যদি পুত্র না থাকে, বিষয় অধিকারী চূড়াধন বাবু হইবেন । রাজপুত্র বালক, এতএব রাজপুত্রকে বিশেষ সাবধানে রাখিবে । বোধ হয়, রাজপুত্রের উপর চূড়াধন বাবুর লক্ষ্য ఇf পুত্র। আমি দেখিয়াছি রাজপুত্রের প্রতি র্তাহার যত্ন অধিক। যখনই রাজপুত্রকে চূড়াধন বাবু দেখেন, কতই আদর করেন। প্রত্যহ দুই তিন বার করিয়া রাজপুত্রের তত্ব করেন। রাজপুত্রও তাহাকে ভালবাসেন । দেওয়ান আবার বিমর্ষ হইলেন । আর কোন কথা কহিলেন না । তাহার পুত্র আপন বৈঠকখানায় গিয়া ভাবিতে লাগিলেন, “পিতা অনর্থক চূড়াধন বাবুকে সন্দেহ করিয়াছেন । বৃদ্ধ হইলে অন্যের প্রতি সৰ্ব্বদাই সন্দেহ হয়, এই বয়সে যেমন প্রত্যেক পীড়ার প্রতি সন্দেহ হয় তেমনই আবার প্রত্যেক মনুষ্যের প্রতি সন্দেহ হয় । সন্দেহই এই বয়সের নিয়ম, সন্দেহের নাম বিজ্ঞতা ।” २. ক্রীড়ান্তে ইন্দ্রভূপ প্রত্যহ নিয়মিতরূপে কোন না কোন সংস্থত মূলগ্রন্থ শ্রবণ করিতেন, রাজসভায় কখন ভাগবদগীত, কখন যোগবাশিষ্ঠ, কখন রামায়ণ, কখন মহাভারত পাঠ হইত। শ্রোতারা সকলেই সংস্কৃতজ্ঞ, ব্যাখ্যার আর প্রয়োজন হইত না । এই সময় যে কথাবার্তা আবশ্বক হুইত, তাহা সমুদয় সংস্কৃত ভাষায় কহিতে হইত। ফল এই দাড়াইয়াছিল যে, ইচ্ছা হইলেও বড় কেহ কথা কহিতে পাইতেন না, কাজেই নিৰ্ব্বিত্নে পাঠ হইত। কিন্তু রামায়ণ কি মহাভারত পাঠকালে এ নিয়ম বড় খাটিত না । রামের বিলাপ, বা অন্ধমুনির বিলাপ, সীতার বিলাপ বা দশরথের বিলাপ বা তত্ত্বং কোন অংশ পাঠ হইতে আরম্ভ হইলে, প্রথমে সকলেই নিম্পন্দ হইয়া শুনিতেন, ক্রমে সকলের হৃদয় যখন পূর্ণ হইয়া উঠিত, তখন হয়ত কোন শ্রোতা আর শোকসম্বরণ করিতে অসমর্থ হইয়া কুষ্ঠিত ভাবে নিশ্বাস ফেলিতেন, অমনি নিকটেই সজোরে নস্ত গ্রহণের দুই একটি শব্দ হুইত, তাহার পরেই চারিদিকে উপযুপিরি নস্তগ্রহণের তুমুল শব্দ হইয়া উঠিত । কেবল নাসার দীর্ঘ শব্দ । এই একরূপ ক্রমদন । অধ্যাপকের ক্ৰন্দন শেষ হইলে ইন্দ্রস্তুপ স্বয়ং কম্পিতকণ্ঠে শোক প্রকাশ করিয়া