পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>રના ] জটাধারীর রোজনামচা २१ ভঙ্গী করিয়া মহাশয়ের নিকট যাইয়া বসিলাম, নিম্নস্বরে “মশয় মশয়” বলিয়া ডাকিলাম ও অবশেষে বেতের অগ্রভাগ ধরিয়া ধীরে একবার টানিলাম, মহাশয় তাহাতেও চমকাইলেন না, জানিলাম তিনি যথার্থ ই নিদ্রিত। সঙ্গিগণকে ইঙ্গিত করিয়া এক লম্ফে পাঠশালার বহির্দেশে উপস্থিত হইলাম ; পরক্ষণেই দেখিলাম দত্তজ মহাশয় কহিতেছেন, “কে ছেলেটা আমার বেত ধরিয়া টানিল রে ? নষ্ট জটা— আমার সঙ্গেও ব্যঙ্গ ?” এই কথা কহিতে কহিতে বেত হস্তে আমাদের পশ্চাতে ধাবমান হইলেন, অগ্নিমুখে পতঙ্গের হ্যায় এই সময়ে পাঠশালায় প্রত্যাগমন করা অবিধেয় মনে করিয়া অগ্রভাগে আরও দ্বিগুণ ধাবমান হইলাম, কিয়দর আসিয়া মহাশয়ও শুনিলেন “সাহেব আসিয়াছে।” তখন আমরা তাহাকে সঙ্গে লইয়া আসি নাই এই অভিমানেই পূৰ্ব্ব ক্রোধ ভুলিয়া তিনিও সাহেব দেখিতে ব্যস্ত সমস্ত হইয়া লম্বা পদদ্বয় চালাষ্টয়া দিলেন। সাহেব দেখিতে গ্রাম সমস্ত এত ব্যস্ত কেন ? ইহার কারণ আছে ; তখন পল্লীগ্রামে সাহেবের প্রায় আগমন ছিল না। এখন যেমন বায় সাহেব, পল সাহেব, কর সাহেব, দে সাহেব, দত্ত সাহেব, চটবজি, বানরজি, পালিত সাহেবদেব কৃষ্ণাঙ্গে কালকোট পেন্টলুনেব বাহার দেখা যায় সে সময়ে এ শোভা কোথাও দেখা যাইত না, কেবল শ্যামাঙ্গ সাহেবের মধ্যে মহাত্মা রাজা বামমোহন বায়েব সহিত বিলাতগামী এক রামহরি মালী সাহেবকে সাহেব পরিচ্ছদে ভ্ৰমণ কবিতে দেখা যাইত ও কোন মহারাজাব বিখ্যাত উদ্যানে অধীনস্থ মালী সকলকে অঙ্গ,লি নির্দেশ কবিয়া "টুমি নিটান্ট ঠক্‌ আডমি" বলিয়া ভৎসনা কবিতে শুনিতাম। এখন রামহবি সাহেবের নাম ডুবিয়া গিয়াছে, পুঞ্জ পুঞ্জ রামহরি সাহেব দেখা দিয়াছেন। সাহেব দেখিতে কৌতুকেরও হ্রাস হইয়াছে। কিন্তু যে সময় হইতে আমার এই বৃত্তান্ত উদ্ধৃত হইতেছে তখন প্রশস্ত দেশবিভাগের মধ্যে দুই তিনটি শ্বেত কলেবর সাহেব দেখা যাইত। আমরা শুনিলাম ইহাদেরই মধ্যে একটা সাহেবের আশুতোষ বাবুর বৈঠকখানায় আবির্ভাব হইয়াছে। বৈঠকখানার বৃহৎ কক্ষে প্রবেশ কবিয়া দেখিলাম বড় ভিড়, দুই পাশ্বে দেওয়ালে দুটি বৃহৎ আরসি আলম্বিত থাকায় একজন লোকের দশ দশ মূৰ্ত্তি দেখিতে পাইলাম, এক গুরুমহাশয় দশ অবতার দেখিয়া ভীত হইলাম ; যাহার এক সংহার মূৰ্ত্তিতেই রক্ষা নাই তার দশমূৰ্ত্তি । কিন্তু এই মূৰ্ত্তি দেখিয়া বোধ হয় দত্তজ মহাশয়ের বিশেষ ক্ষুৰ্ত্তি বৃদ্ধি হইল, আপনার বালকের দলবৃদ্ধিতে রাজত্ববৃদ্ধি দেখিলেন ও ক্রুদ্ধ মূৰ্ত্তি শীতল করিয়া এখন আমায় সম্মুখে রাখিয়া দাড়াইলেন ; তখন আমাদের সাহেব দর্শন হইল, র্তাহার আয়ত লোচনে নীলপদ্মের আভা প্রশস্ত ললাট ও প্রকাগু মস্তক দেখিয়া বোধ হইল ইনি রাজপুরুষ মধ্যে যথার্থই অগ্রগণ্য। ইতিমধ্যে সাহেব একবার চুরুটের পাইপে টান দিলেন, অগ্নির আভায় তাহার অাখি, মুখ