পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৫০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$२ve ] বাজাল বর্ণমালা সংস্কার 8:00 প্রাকৃত ভাষায় অনুস্বার ভিন্ন অপর কোন চিহুেরই ব্যবহার নাই। স্থলবিশেষে ইহাতে বিসর্গের স্থানে “ও” লেখা হয় মাত্র। & পূৰ্ব্বোক্ত বাক্য দ্বারা ইহা স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতেছে যে, প্রাকৃতের বর্ণসংখ্যা সংস্কৃত অপেক্ষ অনেক নূ্যন ; ইহাতে ক, খ, গ, চ, ছ, জ, ঝ, প্রভৃতি যে কয়ট বর্ণও আছে, অনেকস্থলে তাহাদের আবার সকলটির ব্যবহার হয় না। কারণ ইহাতে ‘মুকুল' শব্দ স্থলে 'মুউল ‘মুখ’ স্থলে 'মূহ ‘আগার' স্থানে আআর, সূচী স্থানে সূঙ্গ এইরূপ লেখা হয়। প্রাকৃত ভাষার ব্যাকরণে এইরূপ লিখিবার নিয়ম নিৰ্দ্ধারিত হইয়াছে ॥৫ এই প্রাকৃত হইতেই বাঙ্গালা হিন্দী প্রভৃতি দেশী ভাষা সকল উৎপন্ন হইয়াছে। যদ্যপি এই সকল ভাষার বর্তমান অবস্থা দেশ কাল পাত্রভেদে ভিন্নরূপে পরিপুষ্টিলাভ করিয়াছে, কিন্তু ইহাদের বাল্যাবস্থা দেখিলে বুঝিতে পারা যায় যে ইহারা এক প্রাকৃতরূপ মূল প্রকৃতি হইতে উৎপন্ন। কারণ তৎতৎকালের হিন্দী এবং বঙ্গভাষার আকারগত অনেক সাদৃশ্য ছিল এবং তাহাতে প্রাকৃতের চিন্তু অনেক পরিমাণে লক্ষিত হইত। হিন্দী প্রভৃতি ভাষা অদ্যাপি অধিক পরিমাণে সেই বাল্যকালের প্রাকৃতভাব ধারণ করিতেছে । এই সকল ভাষায় অদ্যাপি স্ত, ন, ম্প, প্রভৃতি বর্গের পঞ্চমবর্ণসংযুক্ত বর্ণস্থলে প্রাকৃতের নিয়ম অনুসরণ করা হয়। প্রাকৃতে এইরূপ স্থলে ং পূৰ্ব্বে দিয়া লেখা হয়, যথা- দন্ত স্থলে দংত ইত্যাদি কিন্তু আজকালকার বঙ্গভাষা “বাশ অপেক্ষা কঞ্চী শক্ত” হইয়াছে। ইহাতে অনেকস্থলে প্রাকৃতের অনুযায়ী উচ্চারণ অবস্থান করিলেও লেখনপদ্ধতি প্রাকৃতকে তুচ্ছ করিয়া সংস্কৃতানুরূপ রূপ ধারণ করিয়াছে। আমরাও যদিও উচ্চারণ করিবার সময় কাজ, দার, বিস্সাস কৃশ্ন বা কৃন্ন ইত্যাদি রূপ উচ্চারণ করি কিন্তু লিখিবার সময় কায, স্বার, বিশ্বাস, কৃষ্ণ এইরূপ লিখি, এরূপ না লিখিলে সৰ্ব্বশাস্ত্রবেত্তাও মূর্থ হন। সুতরাং এক্ষণে বাঙ্গাল বর্ণমালা প্রায় সংস্কৃতের স্তায় বিস্তৃত হইয়া পড়িয়াছে। আমরা সৰ্ব্বাস্ত;করণে বাঙ্গালাভাষার উন্নতি প্রার্থনা করি, কিন্তু বাঙ্গালা বর্ণমালার বিস্তার আমাদের অল্পমাত্রও অভীলিত নয়। কারণ বর্ণমালার বিস্তারের সহিত মুদ্রণ (ছাপা) বিষয়ে প্রয়াস এবং ব্যয় বুদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ইহা পূর্বেই বলা হইয়াছে যে মুদ্রণব্যয় অনুসারে পুস্তকের মূল্য বৰ্দ্ধিত হয়। পুস্তকের মূল্যাধিক্যই সাধারণের জ্ঞানলাভের প্রতি একটি মহৎ অন্তরায়। এই নিমিত্ত আমরা বাঙ্গালা বর্ণমালার সেইরূপ সংস্কারে প্রবৃত্ত হইলাম, যাহাতে পুস্তক • “ক গ চ জ ত দ প ৰবাং প্রায়োলোপ:" “খ ঘ ধ ভাং হঃ” ইত্যাদি ছত্র দেখ।