দ্বিতীয় সংখ্যা । ] চীন-কাহিনী । eve ক্ষমতার পরিচয় দিয়াছে। মূৰ্ত্তি চতুভূজ । প্রত্যেক হস্ত হইতেই ২৫/৩০হাত করিয়া কাষ্ঠগুচ্ছের মালা লম্বমান । গলদেশেও মুণ্ডমালার ভায় গুচ্ছগুচ্ছ কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত মাল্যদাম । সুন্দর কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত রং-করা একটি বেদীর উপর মুনি দাড়াইয়া আছেন—-মস্তক প্রায় গগন স্পর্শ করিতেছে। যেন মহাপুরুষ মস্তক উন্নত করিয়া বিস্তৃত সাম্রাজ্যের সর্বত্র দর্শন করিতেছেন । মুনির অঙ্গে একটি গেরুয়া বর্ণের আলখাল্লা । আমি প্রথমে উহা বস্ত্রনিৰ্ম্মিত ভাবিয়াছিলাম, পরে দেখিলাম, উহা ও কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত –এবং উহার উপরিভাগ কাঠনিৰ্ম্মিত মনোরম পুষ্পসমূহে শোভিত । মুনির চরণতলে একটি কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত পদ্মফুল রহিয়াছে, ফুলটি সদসৰ্ব্বদা মুনিধরের চরণামৃতে অভিষিক্ত । অগণিত ভক্তবৃন্দ আসিয়া আনন্দের সহিত প্রভুর চরণামৃত লইতেছে—কেহ লইয়া চলিয়া খঙ্গইতেছে, কেহ বা তথায় পান করিতেছে । -একজন লামা কৃপাপরবশ হুইয়া অামাকে ও একটু চরণামৃত দান করিলেন—আমিও উহা ভক্তিভরে পান করিলাম । মনে হইল, এই চরণোদক তণ্ডুলচুর্ণ ও চিনি মিশ্রিত । চরণামৃত-পান করার পর লামা দর্শনী চাহিলেন, আমি তাহীকে ৫ সেণ্ট দিতে গেলাম । তিনি প্রধান লামাকে দেখাইয়। দিলেন । এক এক মন্দিরে একএকজন ভারপ্রাপ্ত গামা থাকেন । • সেই সেই মন্দিরের প্রণানীতে কেবল র্তাহারই অধিকার । পঞ্চামুনির এই অপরূপ মূৰ্ত্তি দেখিয়া *ার অলৌকিক বিবরণ শুনিতে আমাদের সকলেরই কৌতুহল জন্সিয়াছিল। একজন সংস্কৃত ও ইংরাজী জানা লামা অনুগ্রহ করিয়া আমাদের কৌতুহল পরিতৃপ্ত করিলেন । তিনি বলিলেন—“পুরাকালে এক চীনদেশীয় মরপতি পিকিনের দক্ষিণে বহুদুরব্যাপী এক অরণ্যের মধ্যে মৃগয়া করিতে গিয়াছিলেন । সমস্ত দিবসের পর অপরাহ্লে এক মৃগের অমুসরণ করিয়া মহারাজ ঐ অরণ্যের পথহীন নিবিড়তার মধ্যে উপস্থিত হন। ক্রমে চতুর্দিক অন্ধকারে অণচছন্ন হইয়া আসিল । সমস্ত দিনের পরিশ্রমে নরপতি অবসন্ন হুইয়াছিলেন । তিনি নিরুপায় হইয়া এক বিশালশালবৃক্ষ-তলে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন এবং অচিরে নিদ্রাভিভুত হইয়া পড়িলেন । “নিদ্রাঘোরে তিনি স্বপ্ন দেখিলেন, যেন এক দীর্ঘশ্মশ্র জটাজুটধারী ভীমকায় তাপস আসিয়া বলিতেছেন, ‘রাজন, তুমি যে বৃক্ষের তলদেশে আশ্ৰয় লইয়াছ, সেই বৃক্ষই আমি । আমার নাম “পঞ্চামুনি।” মহীরুহরূপে বহুদিন তপস্তা করিয়া আমি নিরতিশয় পরিশ্রান্ত হইয়াছি । অন্ত দেহ-পরিগ্রহেরও কাল উপস্থিত হয় নাই। সুতরাং, তুমি আমায় জনসমাজে লইয়া গিয় প্রতিষ্ঠিত কর । আমি আপন হইতেই আমার শাখণপ্রশাখারূপ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ত্যাগ করিতেছি । ত্যাগান্তে যে দেহ থাকিরে, দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে তাহার কিছুমাত্র হ্রাস না করিয়া অামায় প্রতিষ্ঠিত করিবে ।” “মহারাজ স্বপ্নযোগে এই আদেশ পাইল । চমকিয়া জাগিয়া উঠিলেন । দেখিলেন, সত্যসত্যই বৃক্ষেয় মোট মোট সরস শাখাগুলি বৃক্ষচ্যুত হইয়ু ভূতলে পতিত রহিয়াছে।
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১০৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।