পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

YR 8 বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, আষাঢ় । কমলার এই বয়োমর্য্যাদণর অভিমানে রমেশ ঈষৎ হাসিয়া কহিল, “তোমার চেয়েও অনেক বড় মেয়ে ইস্কুলে যায়।” : কমলা তাহার পরে আর কিছু বলিল না, গাড়ি করিয়া একদিন রমেশের সঙ্গে ইস্কুলে গেল। প্রকাণ্ডবাড়ী—তাহার চেয়ে অনেক বড় এবং ছোট কত যে মেয়ে, তাহার ঠিকানা নাই । বিদ্যালয়ের কত্রীর হাতে কমলাকে সমৰ্পণ করিয়া রমেশ যখন চলিয়া আসিতেছে, কমলাও তাহার সঙ্গে সঙ্গে আসিতে লাগিল । রমেশ কৃছিল, “কোথায় আসিতেছ? তোমাকে যে এইখানে থাকিতে হইবে।” কমলা ভীতকণ্ঠে কহিল, “তুমি এখানে থাকিবে না ?” রমেশ । আমি ত এখানে থাকিতে পারি না । কমলা রমেশের হাত চাপিয়া-ধরিয়া কহিল, “তবে আমি এখানে থাকিতে পারিব না, অামাকে লইয়া চল ।” - রমেশ হাত ছাড়াইয়া কহিল—“ছি কমলা ৷” এই ধিক্কারে কমলা স্তব্ধ হইয়া দাড়াইল, তাহার মুখখানি একেবারে ছোট হইয়া গেল । রমেশ ব্যথিতচিত্তে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করিল, কিন্তু বালিকার সেই স্তম্ভিত অসহায় ভীতমুখশ্ৰী তাহার মনে মুদ্রিত হইয়া রহিল । هو এইবার আলিপুরে ওকালতীর কাজ শুরু করিয়া দিবে, রমেশের এইরূপ সঙ্কল্প ছিল । কিন্তু তাহার মন ভাঙিয়া গেছে। চিত্ত স্থির করিয়া কাজে হাত দিবার এবং প্রথম কাৰ্য্যা ● } রম্ভের নানা বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিবার মত স্ফৰ্ত্তি তাহার ছিল না। সে এখন কিছুদিন গঙ্গণর পোলের উপর এবং গোলদীঘিতে অনাবশুক ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। একবার মনে করিল কিছুদিন পশ্চিমে ভ্রমণ করিয়া আসি, এমন-সময় অন্নদীবাবুর কাছ হইতে একখানি চিঠি পাইল । অন্নদাবাবু লিখিতেছেন, “গেজেটে দেখিলাম তুমি পাস হুইয়াছ—কিন্তু সে খবর তোমার নিকট হইতে না পাইয়া হুঃখিত হইলাম । বহুকাল তোমার কোন সংবাদই পাই নাই । তুমি কেমন আছ এবং কবে কলিকাতায় আসিবে, জানাইয়া অামাকে নিশ্চিন্ত ও সুখী করিবে ।” এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হইবে না যে, অন্নদাবাবু যে বিলাতগত ছেলেটির পরে র্তাহার এক চক্ষু রাখিয়াছিলেন, সে ব্যারিষ্টার হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছে এবং এক ধনিকন্যার সহিত তাহার বিবাহের আয়োজন চলিতেছে। সুতরাং হঠাৎ রমেশের উপরেই অন্নদাবাবুর দুই চক্ষুর দ্বিধাবিহীন প্রসন্নদৃষ্টি নিপতিত হইল । ইতিপূৰ্ব্বে হেমনলিনীর স্মৃতি বিদ্যুতের মত রমেশের মনে • মাঝে মাঝে থেলিয়া গেছে । কিন্তু রেখাপাত করিয়া, দিবার সময় পায় নাই । কমলা যখন বিদ্যালয়ে চলিয়া গেল, তখন হঠাৎ অন্নদীবাবুর এই চিঠি পাইয়া তাহার শূন্তমনে পুৰ্ব্বেকার কথা সমস্ত জাগিয়া উঠিল । তখন অধ্যয়নপর তাহার সেই পুৰ্ব্বপ্রতিবেশিনীর মুখচ্ছবি তাহার মনের মধ্যে জোয়ারের টান ধরাইয়া দিল । -