পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্গদর্শন । • نا۔ [ ৩য় বর্ষ, বৈশাখ। । ইহাদের সমান হইয়া উঠিতে পারি। ইংরাজ ক্রিমিনাল দেশীয়ের প্রতি অন্যায় করিয়া স্কায়সঙ্গত শাস্তি পাইলে ইংরাজকে দেশীয় আপন সমতুল্য বলিয়া জ্ঞান করিবে, এই ভয়টুকু যখন ইংরাজের মনে প্রবেশ করিয়াছে, তখন তাহার আত্মসম্মান নষ্ট হইয়াছে। এই উপলক্ষ্যে আমাদের চিত্তও ইংরাজের কাছে নতিস্বীকারের দায় হইতে নিস্কৃতিলাভ করিতেছে—প্রত্যহ তাহার প্রমাণ পাইতেছি। সম্পাদক মহাশয় বলেন, আমরা যদি ঘূষির পরিবর্তে ঘুষি ফিরাইতে পারি, তবে রাস্তায়-ঘাটে ইংরাজকে অনেক অন্যায় হইতে নিরস্ত রাখিতে পারি। কথাটা সত্য—মুষ্টিযোগের মত চিকিৎসা নাই—কিন্তু সম্পাদকের উপদেশ সহসা কেহ মানিতে রাজি হইবে না। তাহার গুটিকতক কারণ আছে । একটি কারণ এই যে, আমরা একান্নবর্তী পরিবারে মানুষ হইয়াছি—পরম্পর মিলিয়ামিশিয়া থাকিবার যত-কিছু আদেশ-উপদেশঅনুশাসন, সমস্তই শিশুকাল হইতে আমাদিগকুে প্রত্যহ পালন করিতে হইয়াছে। ঘুষাল্গুষি করা, বিবাদ করা, পরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা ও নিজের অধিকার লড়াই করিয়া রাখু, একান্নবর্তী পরিবারে কিছুতেই চলে না। আমাদের পরিবার ভালমানুষ হইবার, পরস্পরের অমুকুলকারী হইবার, একটু কারখানাবিশেষ। অতএব, ঘুষি শিক্ষা করিলেও মামুষের নাসিকাগ্রে ও চক্ষুতারকায় প্তাহ নিৰ্ব্বিচারে প্রয়োগ করিবার ক্ষিপ্ৰকারিতা আমাদের অভ্যাস হয় না। নিজের অসুবিধা করিয়াও পরম্পরের সহিত মিলিবার ভাবই আমাদের স্বভাব ও অভ্যাস সঙ্গত— পরস্পরের সহিত লড়িবার ভাব আমাদের সমাজব্যবস্থার মধ্যে কোথাও স্ফৰ্ত্তি পাইবার স্থান পায় নাই । এক, ইস্কুলের ছেলেদের মধ্যে যেটুকু বীররসের অবসর আছে, কর্তৃপক্ষ তাহ সহজে প্রশ্রয় দিতে চান না । তার কেবলি বলেন, আমাদের ছাত্রদিগকে যথেষ্ট শাসনে রাখা হয় না। র্তাহীদের স্বদেশে ছাত্রেরা যে ভাবে মানুষ হয়, এদেশের ছাত্রদের ব্যবহারে তাহার আভাসমাত্রও তাহারা সহ করিতে পারেন না। যাহা দলন করিতে হইবে, তাহ অস্কুরেই দলন করা ভাল, এ কথা ইংরাজ জানে। একটা দৃষ্টান্ত দিই । কোন কলেজের ছাত্র ফুটবল খেলিতে খেলিতে আহত হইয়াছিল । তাহার সঙ্গীর শুশ্রষার প্রয়োজনে কাছেল একটি সরোবর হইতে কাপড়ে ভিজাইয়া জল লইয়াছিল। সেই সরোবর সাহেবদের পানীয়জলের জন্ত স্বরক্ষিত ছিল । সেখানে ছাত্রকে নাবিতে দেখিয়া পাহারাওয়ালা নিষেধ করে। সেই উপলক্ষ্যে উভয়পক্ষে বচস, এমন কি, হাতাহাতিও হইয়া থাকিবে । ম্যাজিষ্ট্রেটু সেই ছাত্ৰকয়টিকে লইয়া দীর্ঘকাল তাহার ডিষ্ট্রীষ্টের যত দুৰ্গম স্থানে যে, কৌশলে ঘুরাইয়া-মারিয়া অবশেষে জরিমানা করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছিলেন, তাহ সেই ছাত্রগণ ও তাহাদের অভিভাবকেল্লা কোনকালে ভুলিতে পরিবে না। বাল্যলীলার এরূপ দণ্ডবিধি ইংরাজুের নিজের দেশে যে নাই, সে কথা সকলেই জানেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের মত বিদ্যালয়েও, দেশীয় প্রিন্সিপালের বিচারেও,