পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] নৌকাডুবি । ડેર? কিন্তু পাঠকগণ রমেশের যেটুকু পরিচয় পাইয়াছেন, তাহাতে এটুকু বুঝিয়া থাকিবেন, কৰ্ত্তব্যসম্বন্ধে রমেশের বোধশক্তি অত্যন্ত সচেতন । যেখানে কোনপ্রকার দ্বিধার কারণ আছে, সেখানে সে অতিশয় সুহ্ম করিয়া চিন্তা করে। প্রবৃত্তি যখন তাহার প্রবল হয়, তখন তাহার চিস্তার প্রবলতাও বাড়িয়া উঠে । এইজন্য যেটা সে অত্যন্ত বেশি চায়, সেইটেতে প্রবৃত্ত হইতেই তাহার সব চেয়ে বিলম্ব ঘটে । * ইতিমধ্যে যে সমস্ত ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহার পরে হুেমনলিনীর সহিত পুর্বের স্থায় সাক্ষাৎ করা তাহার কৰ্ত্তব্য হইবে কি না, তাহ সে কোনমতেই স্থির করিতে পারিল না । মনে মনে তাহীদের উভয়ের মধ্যে যে সম্বন্ধ বাধিয়াছিল, সে বন্ধন সে কি পিতার অাদেশে ছিন্ন করে নাই ? সে যে বিবাহ করিতে বাধ্য হইয়াছে, এ সংবাদটুকুও সে হেমনলিনীর কর্ণগোচর হইতে দেয় নাই । যদিচ দৈবক্রমে তাহার সে বিবাহ হইয়াও না হইবারই মত হইল, তথাপি তাহার অদৃষ্টজাল যথেষ্ট জটিল হইয়া পড়িয়াছে। সম্প্রতি কমলার সহিত তাহার যে সম্বন্ধ দাড়াইয়াছে, সে কথা কাহাকেও বলা সে কৰ্ত্তব্য বোধ করে না ৭ নিরপরাধা কমলাকে সে সংসারের কাছে অপদস্থ করিতে পারে না । অথচ সকল কথা স্পষ্ট-ন বলিয়া হেমনলিনীর নিকট সে তাহার পূৰ্ব্বের অধিকার লাভ করিবে কি করিয়া ? কিন্তু অন্নদীবাবুর পত্রের উত্তর দিতে বিলম্ব করা আর ত উচিত হয় না। সে লিখিল, *গুরুতরকারণবশত আপনাদের সহিত সাক্ষাৎ করিতে অক্ষম হইয়াছি, অামাকে মার্জনা করিবেন।” নিজের নূতন ঠিকানা পত্রে দিল না । এই চিঠিখানি ডাকে ফেলিয়া তাহার পরদিনেই রমেশ শামূলা মাথায় দিয়া আলিপুরের আদালতে হাজিরা দিতে বাহির হইল । একদিন সে আদালত হইতে ফিরিবার সময় কতক পথ হঁাটিয়া একটি ঠিকাগাড়ির গাড়োয়ানের সঙ্গে ভাড়ার বন্দোবস্ত করুিতেছে, এমন-সময় একটি পরিচিত ব্যগ্রকণ্ঠের স্বরে শুনিতে পাইল—“বাবা, ঐ যে রমেশবাবু!” ... • . “গাড়োয়ান, রোখে, রোখে৷ ” গাড়ি রমেশের পাশ্বে আসিয়া দাড়াইল । সেদিন আলিপুরের পশুশালায়ু একটি চড়িভাতির নিমন্ত্রণ সারিয়া অন্নদণবাবু ও তাহার কন্ত বাড়ী ফিরিতেছিলেন—এমন সময়ে হঠাৎ এই সাক্ষাৎ । 象 গাড়িতে হেমনলিনীর সেই স্নিগ্ধগম্ভীর মুখ, তাহার বিশেষ ধরণের সেই শাড়ীপরা, তাহার চুল বাধিবার পরিচিত ভঙ্গী, তাহার হাতের সেই প্লেন বালা এবং তারাকাটা দুইগনছি করিয়া সোনার চুড়ি দেখিবামাত্র রমেশের সেই ছাত্রাবস্থার পুৰ্ব্বজীবন তাহার মনেগরাজ্যের রসাতল হইতে কারামুক্ত হইয়া একমুহূর্তে তাহাৰু হৃদয়মঞ্চের উপর চড়িয়া বসিল—তাহার বুকের মধ্যে একটা ঢেউ যেন একেবারে. কণ্ঠ পৰ্য্যন্ত উচ্ছসিত হইল। - অন্নদাবাবু কছিলেন—“এই যে রমেশ; ভাগ্যে পথে দেখা হইল ! আজিকাল চিঠিলেখাই বন্ধ করিয়াছ, যদি-বা লেথ, তবু,