পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਲੌਂਸ਼ সংখ্যা । ] করিয়া অন্নদীবাবু অক্ষয়কে খাইয়া যাইবার জল্প পীড়াপীড়ি করিতেন। অধিক পীড়াপীড়ি করিতে হইত না । ఏ রমেশ পূর্বের বাসায় করিল না । ইহার আগে হেমনলিনীর সঙ্গে রমেশের যতটুকু দুরভাব ছিল, এবারে তাঙ্গ আর রহিল না । দেখিতে দেখিতে উভয়ের মধ্যে স্বজনসুলভ অসঙ্কোচসম্বন্ধ স্থাপিত হইয় গেল । রমেশ যেন একেবারে ঘরের লোক । হাসিকৌতুক নিমন্ত্রণ-আমন্ত্রণ খুব জমিয়া উঠিল। অনেককাল অনেক পড়া মুখস্থ করিয়৷ ইতিপূৰ্ব্বে হেমনলিনীর চেহারা এক প্রকার ক্ষণভঙ্গুর গোছের ছিল । মনে হইত, যেন একটু জোরে হাওয়া লাগিলেই শরীরটা কোমর হইতে হেলিয়া ভাঙিয়া পড়িতে পারে। তখন তাহার কথা অল্প ছিল, এবং তাহার সঙ্গে কথা কহিতেই ভয় হইত পাছে সামান্ত কিছুতেই সে অপরাধ লয় । অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই তাহার আশ্চর্য্য পরিবর্তন হইয়াছে। তাহার তনু দেহলতা যেন কোন গুঢ় বসন্তের-বাতাসে পল্পবিত মুকুলিত হইয়া উঠিল । তাহার পাংশুবর্ণ কপোলে লবণ্যের মস্থণত দেখা দিল । তাহার দুটি চক্ষু এখন কথায় কথায় হাস্যচ্ছটায় নাচিয় উঠে। আগে সে বেশভূষায় মনোযোগ দেওয়াকে চাপলা, এমন কি, অন্তীয় মনে করিত । এখনকার বেশবাহুলাবিলাসিতা-সম্বন্ধে সে অনেকসময়ে তীব্রভাষায় আপনার প্রতিকুল মন্তব্য প্রকাশ করিয়া অন্নদীবাবুর প্রশংসাভাজন হুইয়াছে। আসিতে বিলম্ব নৌকাডুবি । >:Rఫి. এখন কারে সঙ্গে কোন তর্ক না করিয়া কেমন করিয়া যে তাহার মত ফিরিয়া আসিতেছে, তাহ অন্তর্যামী ছাড়া আর কেহ বলিতে পারে না । এখন তাহার জামায়কাপড়ে রেশমের আভা ও রঙের বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাহার চুলবাধায় নুতন নুতন নৈপুণ্যের পরিচয় পাওয়া যাইতেছে, এমন কি, কোন কোন বিশেষ দিনে তাহার বস্ত্রাঞ্চলসঞ্চলিত বায়ুহিল্লোলে বিলাতী কুঞ্জকাননের পুষ্পদেীরভস্মৃতি ভ্ৰাণেন্দ্রিয়দ্বারে আঘাত করিয়া যায়। নদী যেমন নববর্ষায় ভরিয়া উঠিতে থাকে এবং তাহার তটভূমি শু্যামল তৃণে- গুন্মে বিচিত্র হইয়া উঠে— হেমনলিনী হঠাৎ আজকাল ভাবের আবেগে, স্বাস্থ্যের বিকাশে ও সাজসজ্জার পারিপাট্যে তেমনি পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল । উপযুক্ত ব্যক্তির কাছে কলেজপাঠ্য ফিলজফিগ্রন্থের অর্থ বুঝাইয়া লইতে গিয়া যে মানুষের এমনতর অভূতপূৰ্ব্ব রূপান্তর-ভাবাস্তর ঘটিতে পারে, তাহ চিন্তা করিয়া দেখিলে নিঃসম্পর্ক ব্যক্তিরা বোধ করি কৌতুক অনুভব করিবেন। কর্তব্যবোধের দ্বারা ভারাক্রান্ত রমেশও বড় কম গম্ভীর ছিল ল । বিচারশক্তির প্রাবল্যে তাহার শরীরমন যেন মন্থর হইয়া গিয়াছিল। আকাশের জ্যোতিৰ্ম্ময় গ্রহঁতারা চলিয়া-ফিরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, কিন্তু মানমন্দির আপনার যন্ত্রতন্ত্র লইয়া অত্যন্ত সাবধানে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া থাকে—রমেশ সেইরূপ এই চলমান জগৎসংসারের মাঝখানে আপনার পুথিপত্র যুক্তিতর্কের আয়োজনভারে স্তম্ভিত হইয়া ছিল, তাহাকেও আজ এতটা