তৃতীয় সংখ্যা । ] একেবারে উত্তেজিত হয়। যেমন পাচকবাহিত সুখাদ্য দূর হইতে দর্শন করিলে, কেবল যে চক্ষুর স্বায়ু উত্তেজিত হয় এমন মহে, তৎসঙ্গে নাসিকার স্বায়ু, রসনার স্নায়ু এবং হস্তত লস্থ স্নায়ু উত্তেজিত হইয় উঠে । কেন না, এই সমস্ত স্নায়ু ভোজনের সময় একত্র ক্রিয়া করিয়া থাকে । ভোজনের সময় দর্শন, ভ্রাণ, আস্বাদন এবং খাদ্যগ্রহণব্যাপার যুগপৎ নিম্পন্ন হয় । ভাবসমূহের ভিতর এইরূপ অকুবন্ধিতা এবং স্নায়বিক প্রদেশের এই একত্র উত্তেজনার প্রবৃত্তি হইতে “সাপেক্ষ* উত্তেজনার স্বষ্টি হইয়া অনেক স্বপ্ন উৎপন্ন হয় । বাহ উত্তেজনা অথবা নিরপেক্ষ কেন্দ্রজ উত্তেজনার দ্বারা স্বপ্ন প্রবৰ্ত্তিত হয় । অতঃপর, স্বপ্নযোগে মনোমধ্যে যে সকল ভাবের আবির্ভাব হয়, ঐ সকল ভাবের সহিত সংশ্লিষ্ট অদ্যান্ত ভাবপরম্পরা স্বত মনকে অধিকার করে । এই কারণেই জাগ্রদবস্থার যে বিষয় স্মরণ করা যায় না, অনেকসময় স্বপ্নকালে তাহার স্মরণ হয় । অনেক স্বপ্নে পুৰ্ব্বাপরের সহিত সম্বন্ধাভাব লক্ষিত হয় । এইরূপ অসস্বদ্ধ অর্থশূন্ত স্বপ্নের কারণ এই যে, জাগ্রদবস্থায় ইচ্ছাশক্তি ক্রিয়া করে, বিভিন্নপদার্থজাত বিভিন্ন অনুভূতির ভিতর মন ইচ্ছাশক্তির সাহায্যে সম্বন্ধস্থাপন করিয়া লয় । জাগ্রদবস্থায় মনোযোগ ইচ্ছাশক্তির দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হইয়৷ বাহবস্তুজ্ঞানের মধ্যে একটা অবিচ্ছিন্ন শৃঙ্খলা স্থাপন করে। স্বপ্নে ইচ্ছাশক্তির অভাব, সুতরাং মন স্বপ্নের বিষয়সমুহের মধ্যে শৃঙ্খলাসঞ্চার করিতে পারে না, পরন্তু নিজেই তন্দ্রীরা নিয়ন্ত্রিত হয় । ইচ্ছ স্বপ্নতত্ত্ব । סאפיצ শক্তির অভাবে মন উচ্ছৃঙ্খলভাবে বিষয় হইতে বিষয়াস্তরে বিক্ষিপ্ত হইতে থাকে। এইরূপ নানা বিষয় হইতে সঙ্কলিত এক অদ্ভুত, অসম্বদ্ধ ও অর্থশূন্ত স্বপ্নের উৎপত্তি হয়। এই সকল অসম্বদ্ধ স্বপ্নের দর্শনকালে যে আমাদের দেশকালের জ্ঞান থাকে না, তাহা নহে । স্বপ্নে বাহপদার্থকে আমরা স্থানব্যাপী বলিয়াই মনে করি এবং ঘটনাবলীও সময়ে ঘটিতেছে বলিয়াই জ্ঞান হয় । কিন্তু দেশ ও কালের মধ্যে কোন একটি পদার্থের নির্দিষ্ট স্থান ব। সময় সম্বন্ধেই আমরা ভুল করি । পদার্থটি অসীম দেশের ( space) কতটুকু ব্যাপিয়া রহিয়াছে, এবং ঘটনাটি অনন্তকালের ( time ) কতটুকু অধিকার করিয়া আছে— তাহাই আমাদের ঠিক ধারণা হয় না । অসস্বদ্ধ স্বপ্নে প্রধানত কার্য্যকারণসম্বন্ধের অভাব লক্ষিত হয় । কার্য্যকারণসম্বন্ধজ্ঞানে বিচারশক্তির ( reasoning ) প্রয়োজন । স্বপ্নে বিচারশক্তি সুপ্ত, কাজেই কাৰ্য্যকারণসম্বন্ধের ধারণাও অন্তহিত । অনেক স্বপ্নে পূৰ্ব্বাপরের ভিতর বেশ সম্বন্ধ থাকে। কাডওয়ার্থ প্রভৃতি অনেকে বলেন যে, মানবাত্মার গুপ্তশক্তি ( occult power) আছে, তদ্বারাই এইরূপ সম্বন্ধযুক্ত স্বপ্নের উৎপত্তি হয়। জাগ্রদবস্থার দ্যায় স্বপ্নেও আমাদের চিন্তার ভিতর অনেকসময় শৃঙ্খলা দৃষ্ট হয়। স্বপ্নের বিষয়সমুহ অনেক সময়ে আপন হইতেই শৃঙ্খলাবিন্যস্ত ও সম্বন্ধযুক্ত. হইয়া যায়। কান্ট বলেন, স্বপ্নের উপাদানাবলীর উপর মনের ছাপ ( forms ) পড়ে— তাই শৃঙ্খলার উৎপত্তি। কিন্তু নিদ্রাকালে
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।