১৩৪ ইচ্ছাশক্তি যখন বিলুপ্ত, তখন এই ছাপ দেয় কে ? এই প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর না হওয়ায়, কেহ কেহ ভাবানুবন্ধিতার দ্বারা তাহার মীমাংসা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন । যে সকল ভাব নিত্যসংশ্লিষ্ট, স্বপ্নকালে মনে তাহার কোন একটি ভাবের আবির্ভাব হইলে, সেই সকল ভাবপরম্পরা আপন হইতেই আবিভূত হয়। স্বপ্নে চিরপরিচিত কোন বন্ধুর মুখখানি মনশ্চক্ষুর সমীপে, উপস্থিত হইল, অমনি তাহার কণ্ঠস্বর, তাহার ব্যবহার, তাহার সহিত সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় যুগপৎ মনে পড়ে । উপরে স্বপ্রাবস্থায় মন নিশ্চেষ্ট থাকে, ধরা হইয়াছে । কিন্তু অনেক সময়ে মন ক্রিয়াশীল থাকে ] ক্রিয়াশীল থাকে-বটে, কিন্তু ইচ্ছাশক্তির অধীনে নহে—প্রবল ভাবের (মুখদুঃখ, ভয়ক্রোধ ইত্যাদির) কর্তৃত্বাধীনে। স্বভাবতই শৃঙ্খলা ও মিয়মের দিকে মনের ঝোক আছে । ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হইলেও শৃঙ্খলাহীনের ভিতর শৃঙ্খলা এবং নিয়ম বিহীনের ভিতর নিয়মের প্রতিষ্ঠা করার জন্ত মনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি রহিয়াছে। ইংরেজিতে ইহাকে *Co-Feeling for unity বা একত্বের আকাজক্ষা । এই একত্বের আকাঙ্ক্ষ হইতে অনেক সুসস্বদ্ধ স্বপ্নের স্বষ্টি হয় । অনেক স্বপ্ন স্মরণ করিবার সময় আমাদের মনে পড়ে,—শৃঙ্খলাবিহীন ঘটনাবলীর মধ্যে আমরা শৃঙ্খলার অনুসন্ধান করিয়াছিলাম। একত্বাকাঙ্ক্ষার প্রবৃত্তি ব্যতিরেকে আরও একটি প্রবৃত্তি স্বভাবত স্বপ্নসমূহকে নিয়ন্ত্রিত করিয়া থাকে। তাহাকে বলে Emotional harmony—2Rosefo Fitzgy বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, আষাঢ় । বিধান। স্বপ্ন কখন সুখের, কখন ছঃখের, কখন ভয়ের, কখন অভিমানের । এইরূপ এক একটি প্রবল ভাবকে আশ্রয় করিয়া অনেক সময়ে স্বপ্নসকল সঙ্ঘটিত হইয়া থাকে । যে প্রবল ভাবটি যখন মনে জাগে, মন ভাহার বিপরীত ভাবকে প্রতিরুদ্ধ করিয়া, কেবল সেই প্রবল ভাবের সহিত সমঞ্জসীভূত ঘটনাই দর্শন করিতে থাকিবে । কেহ যদি মুখের স্বপ্ন দেখিতে থাকে, তবে কেবল স্বখের স্বপ্নই তাহার মনে আসিবে । এই যে মনোমধ্যে একই ভাব সংরক্ষণের প্রবৃত্তি, ইহার দ্বারাও অনেক সুসম্বন্ধ স্বপ্নের উৎপত্তি হয় । es পূৰ্ব্বে বলা হইয়াছে, স্বপ্রাবস্থায় জাগ্রদবস্থাপেক্ষ স্পষ্টতররূপে পদার্থসমূহের অনুভুতি হয়। হাটলি ইহার দুই কারণ নির্দেশ করিয়াছেন—(১) দর্শনীর বিষয়ের স্বাভাবিক অধিক স্পষ্টত । চক্ষুর স্বারা যেরূপ স্পষ্টভাবে পদার্থের অনুভূতি হয়, অন্ত কোন ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সেরূপ হয় না । স্বপ্নে সাধারণত দর্শনীর বিষয়ই অধিক থাকে । আমরা ‘স্বপ্ন দেখাই’ বলি—“স্বপ্ন শোনা বলি না । এই দর্শনীয় বিষয়ের আধিক্যবশতই আমাদিগের নিকট স্বপ্ন খুব স্পষ্ট বলিয়া প্রতীয়মান হয় । ( ২ ) জাগ্রদবস্থায় মানসিক ভাবকে আমরা বাহপদার্থ হইতে পৃথক করিতে পারি। কেন না, তখন উভয়ই বৰ্ত্তমান । সুপ্তাবস্থায় বাহপদার্থের অভাববশত আমরা মানসিক তাবকেই প্রকৃত বলিয়৷ মনে করি। মানসিক ভাব স্বভাবত স্পষ্ট নহে । কিন্তু বাহপদার্থের অনুপস্থিতিবশত যখন মানসিক ভাব খুব স্পষ্ট হইয়া । উঠে, তখন মানসিক ভাবকেই আমরা প্রকৃত
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৩৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।