পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা । ] সার সত্যের আলোচনা । b8:సి দুই দিক হইতে ডাকিয়া আনা বাড়া’র ভাগ –এক আমি’র ভিতরেই আমি এবং তুমি, এই দুই আমি মুখামুখি দণ্ডায়মান, আর, সেই সঙ্গে দোহার মধ্যে শক্তি-ঘটিত এবং জ্ঞান-ঘটিত ঐক্য সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান । তার সাক্ষী—রামপ্রসাদের এই একটি গীত – “মন তুমি কৃষি-কাজ জান না । এমন মানব-জমিন রৈল পড়ে, আবাদ ক’ল্পে ফ’লতে সোণ ৷” এখানে এক আমি’র ভিতরে দুই আমি’র অর্থাৎ আমি এবং তুমি’র, দোহার সহিত দোহার বোঝাপড়া চলিতেছে । কৰ্ত্তাকৰ্ম্মের ঐক্য । মনে কর, একজন গায়ক গান করিতেছে । গাওনা হ’চ্চে একটি ক্রিয়া, তাহার মূল হ’চ্চে গায়ক স্বয়ং এবং তাহার ফল হ’চ্চে গীভধবনি । এইরূপ যে মূল এবং ফল, কর্তা এবং কৰ্ম্ম, দুয়ের ঐক্য ব্যতিরেকে গাওনা-ক্রিয়৷ চলিতে পারে না । গাওনা-ক্রিয়ার বাজ গায়কের কণ্ঠনলীর পথ দিয়া অঙ্কুরিত হয়, এবং গাওনাক্রিয়ার ফল গায়কের শ্রবণেন্দ্রিয়ের পথ দিয়া ফলিত হয় । দুই পথই উন্মুক্ত থাকা চাই, তবেই গাওনা-ক্রিয়া চলিতে পারে। যদি গায়কের শ্রবণদ্বারে কপাট পড়িয়া যায়, তাহ। হইলেও যেমন ; আর যদি কণ্ঠনলীতে কপাট পড়িয়া যায়, তাহা হইলেও তেমনি ; ছয়ের একটিতে কপাট পড়িলেই গাওনা-ক্রিয়া তৎক্ষণাৎ বন্ধ হইয়া যায়। এখন জিজ্ঞাস্ত এই—কোনখানেই বা গাওনা-ক্রিয়ার বীজাধান হইয়াছে, আর, কোনখানেই বা গাওনা:ক্রিয়ার ফলাধান হইতেছে ? স্পষ্টই দেখিতে পাওয়া যাইতেছে যে, গায়কের অন্তকরণেই গাওনা-ক্রিয়ার বীজ রোপিত হইয়াছে, গায়কের অস্তঃকরণ হইতেই গাওনা-ক্রিয়ার বীজ অঙ্কুরিত হইতেছে, গায়কের অন্তঃকরণেই গাওনা-ক্রিয়ার ফল ফলিত হইতেছে । একই অন্তঃকরণ-ক্ষেত্রে কৰ্ত্তার কর্তৃত্ব এবং কৰ্ম্মের ফল একযোগে অভিব্যক্ত হইয়া একীভূত হইয়া যাইতেছে ; আর, সেই কারণে গায়কের মনে দুইভাবের আনন্দ গঙ্গাযমুনার ন্যায় দুই দিক্ হইতে আসিয়া দুয়ে মিলিয়া এক আনন্দে পরিণত হইতেছে ; এক ভাবের আনন্দ হ’চ্চে কৰ্ম্মানন্দ, আর-এক ভাবের আনন্দ হ’চ্চে ভোগানন্দ । কৰ্ম্মানন্দের সাক্ষাৎ কারণ হ’চ্চে কৰ্ত্তার কর্তৃত্বস্ফৰ্ত্তি, ভোগানন্দের সাক্ষাৎ কারণ হ’চ্চে, কৰ্ম্মের, ফলাস্বাদন । গীতধবনির উৎসারণে কৰ্ত্তার কর্তৃত্ব স্ফৰ্ত্তি পাইতেছে, গীতধ্বনির রসাস্বাদনে কৰ্ম্মের ফল ফলিত হইতেছে । গায়কের অস্তঃকরণে গাওনা-ক্রিয়ার বীজ এবং ফল ( কৰ্ত্তার কর্তৃত্ব এবং কৰ্ম্মের ফল ) একীভূত হইবার সঙ্গে সঙ্গে কৰ্ম্মানন্দ এবং ভোগ্নানন্দ একীভূত হইয়া যোগানন্দে পরিণত হইতেছে। বলিলাম “যোগানন্দ” । তাহার অর্থ আর-কিছু না–কর্তার কর্তৃত্বস্ফৰ্ত্তি এবং কৰ্ম্মের ফলভোগ, এই দুয়ের যোগজনিত আনন্দ । ফলেও এইরূপ দেখা যায় ষে, গায়ক যখন ভাবে মশগুল হইয়৷ গান করে, ভখন গাওনা-ক্রিয়ার কৰ্ত্ত যিনি গায়ক, এবং গাওনা-ক্রিয়ার কৰ্ম্ম যে গীতধ্বনি, - দুয়ের মধ্যে ব্যবধান বিলুপ্ত হইয়া গিয়৷ দুয়ে মিলিয়া এক হইয়া যায়। এমন কি, তেমন একজন প্রতিভাশালী গায়ক যখন