Уб о বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, আষাঢ় । w চতুর্দিকের শ্রোতৃমণ্ডলীর সহিত একাত্ম। হইয়া গান করেন, তখন শ্রোতৃমণ্ডলী মনে মনে তাহার সহিত গানকার্য্যে যোগ না দিয়া ক্ষান্ত থাকিতে পারে না ; আর, তাহাতে রঙ্গশালা দেখিতে দ্যাথায় এইরূপ—যেন সমস্ত মণ্ডলী একই গায়ক এবং একই শ্রোতা, এবং প্রত্যেক শ্রোতা যেন সমস্ত মণ্ডলী একাধারে । এরূপ মন্ত্রমুগ্ধ অবস্থায় এক গায়ক একশত শ্রোতার সঙ্গে মিলিয়া এক একশত হইয়া আপনার গানের আপনি রসাস্বাদন করে, এবং একশত শ্রোতা এক গায়কের সঙ্গে মনে মনে গানে যোগ দিয়া এক গায়ক হইয়া উঠে ; কচিপোকার প্রভাবে আস্থ লা যেমন কাচপোকা হইয়া উঠে, একের প্রভাবে অনেকে তেমনি এক হইয়া উঠে। কৰ্ত্ত-কৰ্ম্মের মধ্যে এ যেমন দেখিতে পাওয়া গেল --জ্ঞাতা-জ্ঞেয়ের মধ্যেও উভয়াত্মক ঐক্যের স্ফৰ্ত্তি ঠিকৃ সেইরূপই দেখিতে পাওয়া যায়। জ্ঞাত-জ্ঞানের ঐক্য । গায়ক যখন গান করিতেছে, তখন গায়ক জানিতেছে যে, আমিই গান করিতৃেছি। এরূপ স্থলে গায়ক কাহাকে গায়ক বলিয়া জানিতেছে ? জ্ঞেয় কে ? গায়ক আপনাকেই গায়ক বলিয়া জানিতেছে— গায়ক আপনিই জ্ঞেয় । কে আপনাকে গায়ক বলিয়া জানিতেছে—জ্ঞাতা কে ? গায়ক আপনিই জ্ঞাতা । গায়ক আপনিই জ্ঞেয়, আপনিই জ্ঞাতা । তা ছাড়া, গায়ক যখন গীতরসের বিদ্যুৎপ্রবাহে শ্রোতৃমণ্ডলীর মনকে গলাইয়া আপনার মনের সহিত একীভূত করিয়া ফ্যালে, তখন গায়কের জ্ঞানে আপনি এবং আপনার শ্রোতৃমণ্ডলী, এ দুয়ের মধ্যস্থিত প্রভেদের প্রাচীর ভগ্ন হইয়া গিয়া জ্ঞাতা-জ্ঞেয়ের উভয়াত্মক ঐক্য সমস্ত ঘরময় ব্যাপিয়া স্ফষ্টি পাইতে থাকে। এখন জিজ্ঞাস্ত এই যে, এইরূপ যখন উভয়াত্মক ঐক্য শক্তি পায়—কৰ্ত্তাকৰ্ম্মের মধ্যে স্ফৰ্ত্তি পায় জ্ঞাতা-জ্ঞেয়ের মধ্যে স্ফূৰ্ত্তি পায়, তখন সে ঐক্য কি অকস্মাৎ আকাশ হইতে নিপতিত হয়, অথবা যাহা ইতিপূৰ্ব্বে প্রসুপ্ত ছিল, তাহাই জাগ্রত হইয়া উঠে ? বারাস্তরে এ প্রশ্নের মীমাংসায় প্রবৃত্ত হওয়া যাইবে I* শ্ৰীদ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। t
- পাঠকবর্গের প্রতি নিবেদন ।—গ্রীষ্মের প্রকোপবশত সার সত্যের আলোচনা গতমাসে ফাক
দেওয়া হইয়াছিল এবং বর্তমান মাসে তাঁহার আয়তন হ্রস্বীকৃত হইল । খও গও প্রবন্ধপরম্পরার মধ্যে কিরূপ যোগসূত্র চলিতেছে, তাহার সন্ধান পাইলার জন্ত পাঠক ব্যস্ত হইবেন না। গম্যস্থানের যতই নিকটবর্তী হওয়া যাইবে, ততই সমস্তের সহিত সমস্তের যোগ স্পষ্টকারে অভিব্যক্ত হইতে থাকিবে-এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিস্ত থাকুন। লেখক ।