পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-সীতা । রাম কৈকয়ীর নিকট স্পৰ্দ্ধা করিয়া বলিয়াছিলেন, “বিদ্ধি মামৃষিভিস্তুল্যৎ বিমলং ধৰ্ম্মমাস্থিতম্।” তিনি বনবাসাঙ্ক অবিকৃতমুখে অবনতশিরে গ্রহণ করিয়াছিলেন, তখন তাহার মুখে শাস্তির শ্ৰী বিলীন হয় নাই । কিন্তু “ইন্দ্ৰিয়নিগ্রহ” করিয়া ষে দুঃখ হৃদয়ে প্রচ্ছন্ন রাখিয়াছিলেন, কৌশল্যার নিকট আসিবার সময় তাহ প্রবলবেগে উচ্ছসিত হইয়া উঠিল, তিনি পরিশ্রাস্ত হস্তীর দ্যায় গভীর নিশ্বাসপাত করিতে লাগিলেন,—“নিশ্বসল্পিব কুঞ্জরঃ” । মাতার নিকট এই মৰ্ম্মচ্ছেদী সংবাদ বলিবার সময় তাহার কণ্ঠ শঙ্কান্বিত ও কম্পিত হইয়া উঠিতেছিল, তাহার কথার স্বচনা পরিতাপব্যঞ্জক— “দেবি নুনং ন জানীষে মহন্তুয়মুপস্থিতম্।” মাতার অশ্রু ও শোকের উচ্ছাস তিনি নীরবে দাড়াইয়া সহ করিয়াছিলেন ; অপ্রতিহত অঙ্গীকারের শ্রী তাহার কথাগুলিতে এক মহতী নৈতিকসম্পদ প্রদান করিয়াছিল। কিন্তু সীতার সন্নিহিত হইয়া তাহার হৃদয়বেগ প্রবল হইয়া উঠিল, তিনি তাহ রোধ করিতে পারিলেন না । চিরাচুরক্ত স্ত্রীকে সদ্যোযৌবনের অতৃপ্তকামনায় দারুণ দুঃখসাগরে নিক্ষেপ করিয়া যাইবেন, এ কথা বলিতে যাইয়া তাহার কণ্ঠ ষেন রুদ্ধ হইয়। আসিল । সীতা অভিষেকসম্ভারের প্রতীক্ষায় ফুল্লমনে রহিয়াছেন, অকস্মাৎ বজ্ৰাঘাতের ভায় নিদারুণ সংবাদে কুস্কমকোমল রমণীর প্রাণকে কিরূপে চকিত ও ব্যৰিত করিয়া তুলিবেন, ভাবিয়া তিনি যেন দিশহারা হইয়। পড়িলেন, তাহার মুখশ্ৰী মলিন হইয় গেল । সীতা তাহাকে দেখিবামাত্র বুঝিতে পারিলেন, কি যেন দারুণ অনর্থ ঘটিয়াছে। “অদ্য শতশলাকাযুক্ত জলফেনশুভ্র রাজচ্ছত্র তোমার মাথার উপর শোভা পাইতেছে না । কুঞ্জর, অশ্বারোহী ও বন্দিগণ তোমার অগ্ৰে অগ্রে আইসে নাই, তোমার মুখ বিষণ্ণ, কি ভাবনায় তুমি ক্লিন্ন ও আকুল হইয়া পড়িয়াছ, তোমার বর্ণ বিবর্ণ হইয়। গিয়াছে।” কোথায় রামচন্দ্রের সেই স্বভাবসৌম্য প্রশান্ত ভাব । রমণীর অঞ্চলপাশ্ববৰ্ত্তী হইয়৷ তিনি এরূপ বিহবল হইয়া পড়িলেন কেন ? তিনি সীতার মহৎ পিতৃকুলের সংযম ও র্তাহীর সর্বজন প্রশংসিত চরিত্রের কথা স্মরণ করাইয়া দিয়া তাহাকে আসন্ন পরীক্ষার উপযোগিনী করিতে চেষ্টা পাইলেন ; তিনি বনে গেলে সীতা কি ভাবে রাজগৃহে জীবনযাপন করিবেন, তৎসম্বন্ধে নান+নৈতিকউপদেশ-সংবলিত একটি নাতিদীর্ঘ বক্তৃত৷ প্রদান করিলেন । কিন্তু তাহার আশঙ্কা বৃথা—সীতা সে সকল কথা উপহাস করিয়া বলিলেন, “তুমি বনে গেলে তোমার অগ্ৰে কুশাস্কুর ও কণ্টকাকীর্ণ পথে পাদচারণ করিয়া আমি বনে যাইব ।” র্যাহারা রামের বনগমনের কথা শুনিয়াছিলেন, তাহারা সকলেই কত আক্ষেপ করিয়াছেন । রাম সীতার মুখে সেইরূপ কত আক্ষেপ শুনিবার প্রত্যাশা করিয়া আসিয়াছিলেন ཨ་ཐ་ তাহার