চতুর্থ সংখ্যা । ] সঞ্চার হইল। অকম্পন রাবণের নিকট বলিয়াছিল,—“ভয়প্রাপ্ত রাক্ষসগণ যে স্থানেই পলাইয়া যায়, সেই স্থানেই তাহারা সম্মুখে ধমুম্পাণি রামের করাল মুৰ্ত্তি দেখিতে পায় ।” মারীচ রাবণকে বলিয়াছিল—“বৃক্ষের পত্রে পত্রে আমি পাশহস্তযমসদৃশ রামমূৰ্ত্তি দেখিতে পাই ।” স্বীয় অধিকারস্থ জনস্থানের এই অবস্থা শুনিয়া রাবণ সেই মুহূৰ্ত্তে সীতাহরণোদেশুে দণ্ডকfরণ্যাভিমুখে প্রস্থান করিল । * সীতা লক্ষ্মণকে তীব্র গঞ্জনা করিয়া তাড়াইয়া দিয়াছেন।” মায়াবী মারচ মৃত্যুকালে রামের কণ্ঠধবনির অবিকল অমুকরণ করিয়াছিল ; সেই আৰ্ত্ত কণ্ঠধ্বনি শুনিয়া সীতা পাগলিনী হইলেন । লক্ষ্মণ রাক্ষসদিগের ছলনায় বৃত্তান্ত বিলক্ষণ অবগত ছিলেন, সুতরাং সাতার কথায় আশ্রম ছাড়িয়া যাইতে স্বীকৃত হইলেন না । স্বামীর বিপদাশঙ্কাতুর সীতা লক্ষ্মণের মৌন এবং দৃঢ়সঙ্কল্প কোন গৃঢ় ও কুৎসিত অভিপ্রায়ের ছদ্মবেশ বলিয়। মনে করিলেন ; তখনও সীতার কর্ণে “কোথায় সীতা, কোথায় লক্ষ্মণ” এই আৰ্ত্ত কণ্ঠের স্বর ধ্বনিত হইতেছিল ; উম্মত্তা মৈথিলী লক্ষ্মণকে “প্রচ্ছন্নচারী ভরতের দূত, কুঅভিপ্রায়ে ভ্রাতৃজায়ার পশ্চাৎ অম্বুবৰ্ত্তী” প্রভৃতি কঠোর বাক্য বলিতে লাগিলেন । “আমি রাম ভিন্ন অন্ত কোন পুরুষকে স্পর্শ করিব না, অগ্নিতে প্রাণ বিসর্জন দিব।” এই সকল দুৰ্ব্বাক্য শ্রবণ করিয়া লক্ষ্মণ একবার উৰ্দ্ধদিকে চাহিয়া দেবতাদিগের উপর সীতার রক্ষার ভার অর্পণ করিলেন এবং রোষ"রিত অধরে জাপ্রম ত্যাগ করিয়া রামের সন্ধানে সীতা । b\ుసి চলিয়া গেলেন । তখন কাষায়বস্ত্রপরিহিত, শিথী, ছত্রী ও উপানহী পরিব্রাজক “ব্ৰহ্ম’নাম কীৰ্ত্তন করিয়া সীতার সম্মুখে উপস্থিত হইল। রাবণ সীতাকে সম্বোধন করিয়া যে সকল কথা কহিল, তাহা ঠিক ঋষিজনোচিত নহে। কিন্তু সরলপ্রকৃতি সীতা অতর্কিত ছিলেন । তিনি ব্ৰহ্মশাপের ভয়ে রাবণের নিকট আত্মপরিচয় দিলেন এবং অতিথিবোধে তাহাকে আশ্রমে অপেক্ষা করিতে অনুরোধ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন – “একশ্চ দণ্ডকারণ্যে কিমৰ্থং চরসি দ্বিজ ।” । রাবণ বাক্যের আড়ম্বর না করিয়া একেবারেই স্বীয় অভিপ্রায় ব্যক্ত করিল—“আমি রাক্ষসরাজ রাবণ, ত্ৰিকুটশীর্ষে লঙ্কণ অামার রাজধানী, তথায় নানা স্থাল হইতে আমি ষোড়শ শত সুন্দরী সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছি, তোমাকে তাহণদের ‘অগ্রমহিষীরূপে বরণ করিয়া লইব । দশরথ রাজা মন্দবীর্য্য জ্যেষ্ঠপুত্রকে সিংহাসন হইতে তাড়িত করিয়া প্রিয় কনিষ্ঠপুত্র ভরতকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, তাহীকে ভজনা করায় কোন লাভ নাই। ত্ৰিকুটশীর্ষস্থিত বনমালিনী লঙ্কার স্থপুম্পিত তরুচ্ছায়ায় আমার সঙ্গে বাস করিয়া তুমি রামকে আর মনেও স্থান দিবে না।” সীতাকে আমরা তাপসপত্নীগণের নিকট একটি সুকুমারী ব্রততীর দ্যায় দেখিয়াছি। র্তাহার সলজ্জ সুন্দর মুখখানি আতপতাপে ঈষৎ মান হইয়াছিল, কিন্তু সেই লজ্জিত ও মৃদ্ধ ভঙ্গীর মধ্যে যে প্রখর তেজ লুক্কায়িত ছিল, তাহার পুৰ্ব্বাভাস আমরা সীতার বনবাসসঙ্কল্পে দেখিয়াছি। কিন্তু এবার সেই তেজের পুর্ণবিকাশ দৃষ্ট হইল। রাবণ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।